Advertisement
E-Paper

ভাঙড় নিয়ে সুর চড়াচ্ছে দু’পক্ষই

কথা ছিল, পাওয়ার গ্রিড-বিরোধী জমি রক্ষা আন্দোলনের ছবি মেলে ধরতে ওই দিন কলকাতায় আসবে ভাঙড়। কিন্তু দু’দিন আগে সেই কর্মসূচির প্রচারে বাইক-মিছিল চলাকালীন গোলমালে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

ঋজু বসু ও শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৯
ভাঙড়ের গ্রামে নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী। ছবি: সুমন বল্লভ।

ভাঙড়ের গ্রামে নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী। ছবি: সুমন বল্লভ।

শাসক দলের ডাকাবুকো নেতা আরাবুল ইসলামের উঠোনটা বড়জোর ঢিলছোড়া দূরত্বে। নতুনহাট বাজার লাগোয়া হাড়োয়া রোডের উল্টো দিকেই এক অন্য পৃথিবী!

ইটের রাস্তা ধরে সে-দিকে কিলোমিটারটাক ঢুকতেই লিকার চায়ে চুমুক দিচ্ছেন, ‘অধরা’ নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী। শনিবার দুপুরে ভাঙড়ের মাছিভাঙা গ্রামে বসে যিনি, এ বার গোটা রাজ্যকে আগামী ৪ জানুয়ারি ভাঙড়ে আসতে ডাক দিলেন। কথা ছিল, পাওয়ার গ্রিড-বিরোধী জমি রক্ষা আন্দোলনের ছবি মেলে ধরতে ওই দিন কলকাতায় আসবে ভাঙড়। কিন্তু দু’দিন আগে সেই কর্মসূচির প্রচারে বাইক-মিছিল চলাকালীন গোলমালে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

ভাঙড়ে শাসক দলের ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে অবশ্য শনিবারই কাশীপুর থেকে অনন্তপুর পর্যন্ত মিছিল করেছেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, আরাবুল ইসলাম, কাইজার আহমেদরা। পথসভায় রেজ্জাক বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়ন চাই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পাওয়ার গ্রিড হবেই।’’ এই ঘোষণায় ঘৃতাহূতি পড়েছে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভেও। পাওয়ার গ্রিড রুখতে তাঁরা অনড় জানিয়ে ‘ভাঙড় জমিজীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশরক্ষা কমিটি’র তরফে গাজি হাসান, মোশারফ হুসেনরা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছিলেন, মানুষ না-চাইলে পাওয়ার গ্রিড হবে না! সে কথা কী ভুলে গেলেন!’’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে ক্ষতিপূরণের টোপ ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে তাঁদের অভিমত।

গাজির বাবা একদা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। মোশারফ আরাবুলের ভাই খুদের সঙ্গে ইট সরবরাহের সিন্ডিকেটে ছিলেন। কিন্তু জমি দখল করতে শাসক দলের ‘জুলুমে’ তাঁরা এখন আন্দোলনের মুখ। পাওয়ার গ্রিড সাব-স্টেশন লাগোয়া মাছিভাঙা, পদ্মপুকুর, উত্তর গাজিপুর, খামারআইট, টোনার মতো গ্রামগুলিতে এখনও ক্ষোভের আবহ। হাইটেনশন তারের নীচে বসবাসে পরিবেশ নিয়ে আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়েনি গ্রামবাসীদের। তবে সেটাই আন্দোলনের একমাত্র কারণ নয় বলে প্রশাসনের একাংশ মনে করছে।

নিউটাউন থেকে লাউহাটি হয়ে হাড়োয়া রোড ধরে বকডোবা, নতুনহাট বা পদ্মপুকুরে— বিস্তীর্ণ অংশ জুড়েই তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের ‘জুলুম’ নিয়ে ক্ষোভের আঁচ মালুম হয়েছে। ‘হার্মাদ-বাহিনী’ শব্দটাও ফিরে আসছে গ্রামের মানুষের বুলিতে। পাওয়ার গ্রিড সাব-স্টেশনের কয়েক হাত দূরে খামারআইট গ্রামে দাঁড়িয়ে জনৈক গৃহবধূ ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘আমাদের বাড়ি গ্রামের ধারে বলে ভয়ে থাকতে পারছি না এক বছর ধরে। তার বসানোর সময়ে ওই তল্লাটে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। ‘হার্মাদ’রা চড়াও হয়ে বাড়িতেও বোমা ছোড়ে।’’ শাসক দলের ইন্ধনে অজস্র ‘মিথ্যে মামলা’র জেরেও কাজ করছে আতঙ্ক। নাম বললেই থানায় এফআইআর হবে ভয়ে অনেকেই সংবাদমাধ্যমে নাম বলতে নারাজ।

এই পরিস্থিতিতে ইউএপিএ মামলায় অভিযুক্ত নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী গ্রামবাসীদের আশ্রয়ে গা-ঢাকা দিয়ে থেকেই আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। ঘুরেফিরে বিভিন্ন গ্রামে থাকছেন। আন্দোলনের স্বার্থে হোয়াট্স অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়াকেও ব্যবহার করছেন। শাসকদলের সভায় তাঁকে নিশানা করেই রেজ্জাক বলেন, ‘‘হিম্মত থাকলে সামনে এসে লড়াই করুক। কী ভাবে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয় আমরা জানি।’’ কাইজার আহমেদের কথায়, ‘‘আন্দোলনের নামে কয়েকটি গ্রামে কিছু লোক জুলুম চালাচ্ছে। তারা কেউ পুলিশের হাতে পার পাবে না!’’

আন্দোলনকারীদের অবশ্য দাবি, তাঁরা বিশৃঙ্খলা প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। মাছিভাঙার পথেই দেখা গেল, ইটের রাস্তা পাকা করার কাজ চলছে। গাজি হাসানের কথায়, ‘‘জেলা পরিষদের ঠিকাদার রাস্তার কাজ করছেন, তাতে কোনও সমস্যা নেই।’’ ভাঙড়ে বাইরের রাজ্যবাসীকে ডেকে এনে সেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ছবিটাও তুলে ধরতে চান আন্দোলনকারীরা।

Bhangar Power Grid Protest TMC ভাঙড় Bhangar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy