এসএসসির ইন্টারভিউ তালিকায় ঠাঁই না-পেয়ে যোগ্য তালিকাভুক্ত যে শিক্ষকেরা ৩১ ডিসেম্বর থেকে চাকরিহারা হবেন, তাঁদের জন্য শূন্য পদ বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সোমবার বিকাশ ভবনে তিনি বলেন, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হোক। আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর শূন্য পদ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু যত ক্ষণ না পুরো প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে, আইনি ভাবে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তত ক্ষণ এই নিয়ে কথা বলতে পারি না।’’
একাদশ, দ্বাদশের ইন্টারভিউ তালিকা বেরনোর পরে দেখা যায় শুধু একাদশ, দ্বাদশের জন্যই পরীক্ষা দিয়েছেন এমন বেশ কিছু যোগ্য চাকরিহারা প্রার্থী ইন্টারভিউয়ের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। ফলে তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর থেকে চাকরিহারা হবেন। ক্ষুব্ধ ওই যোগ্য শিক্ষকদের ক্ষোভ, সরকারের দুর্নীতিতেই শেষ পর্যন্ত চাকরিটা চলে যাচ্ছে। কেন এমন হবে? একাদশ, দ্বাদশের ইন্টারভিউতে ডাক না পাওয়া যোগ্য শিক্ষক চিন্ময় মন্ডল বলেন, ‘‘আশা করব শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য বাস্তবতা পাবে। একাদশ, দ্বাদশের বহু শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা আর নবম, দশমে পরীক্ষা দেননি।’’
চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকেরা কয়েক জন এ দিন রাজ্য বিজেপির দফতরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও দেখা করেন। শুভেন্দু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি দেবেন না এটা নিশ্চিত। ওঁর আমলে ছয় লক্ষ শূন্য পদ লুপ্ত হয়েছে। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ফের ভোটের আগে ভাতা বাড়ানোর তাল করছেন।” যাঁরা নতুন পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের ফর্ম ফিল-আপের টাকা ফেরত দিতে হবে বলেও শুভেন্দু দাবি তোলেন। আর এক জন যোগ্য শিক্ষক সুমন বিশ্বাসও একাদশ, দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন, “প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীকে গদি থেকে টেনে নামাতে আমরা আন্দোলনে নামব। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল, তাদের যুব সমাজ আমাদের এই আন্দোলনেএগিয়ে আসুক।”
এসএসসির তালিকাভুক্ত অযোগ্য শিক্ষক নীতীশরঞ্জন বর্মণ যে ভাবে লিখিত পরীক্ষায় উতরে ইন্টারভিউতে ডাক পেয়েছেন বলে অভিযোগ, তা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। তিনি কালিয়াগঞ্জের সাহেবঘাটা এনএন হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। বাড়িতে এ দিন নীতীশের দেখা মেলেনি। মোবাইলেও ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ওই শিক্ষকের বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক কেশব বর্মণ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আমার ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কোটায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারভিউতে ডাক পেয়েছে। ও অযোগ্য শিক্ষক হয়ে বেআইনি ভাবে পরীক্ষায় বসে থাকলে ধরা পড়ত।” ছেলের ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়া নিয়ে অনেকের চর্চা এবং বাড়িতে ভিড় করার জন্যই তিনি অন্য কোথাও রয়েছেন বলে কেশব জানান।
নীতীশের মা বকুলের দাবি, তাঁর ছেলে ৯০ শতাংশেরও বেশি শ্রবণ প্রতিবন্ধী। শ্রবণযন্ত্র ছাড়া শুনতে পান না। বকুল বলেন, “২০১৬ সালে আমার ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের কোটায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে। মেধা তালিকায় ওর নাম সাধারণ কোটাতেও ছিল। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের কোটায় ছেলের গঙ্গারামপুরের একটি হাই স্কুলে চাকরির সুযোগ আসে। কিন্তু সাধারণ কোটায় কালিয়াগঞ্জের সাহেবঘাটা স্কুলে ওর চাকরি হয়। সাহেবঘাটা বাড়ি থেকে কাছে হওয়ায় ছেলে সেখানেই চাকরিতে যোগ দেয়।”
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুকুলেশ তরফদার বলেন, “আইনি বিষয় নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা বাড়তি সুবিধা পেয়েছে বলে শুনেছি।” তবে বাতিল প্যানেলে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আলাদা কোনও রায় দিয়েছে বলে জানা যায়নি। প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন সময়ে আবেদন জানালেও সর্বোচ্চ আদালত তাতে গুরুত্ব দেয়নি।
নীতীশের প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কোনও ছাড় দেওয়া আছে কি না খতিয়ে দেখে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” ব্রাত্যের দাবি, ওই এক জন ছাড়া আর কোনও অযোগ্যের নাম ইন্টারভিউ তালিকায় ওঠেনি। তবে ব্রাত্য এ-ও বলেন, নথি যাচাইয়ের সময়ে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে। ১৯৯৭ সালে জন্মানো এক চাকরিপ্রার্থীর পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক হিসেবে ইন্টারভিউ তালিকায় ঠাঁই পাওয়া নিয়েও বিতর্ক চলছে। নথি যাচাইয়ের সময়ে ওঁর বিষয়টিও দেখা হবে, জানান ব্রাত্য।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)