Advertisement
E-Paper

জমি বেচে দিয়ে পড়াশোনা, নজির গড়লেন নাজির

মাধ্যমিক পাশ করবার আগে পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো ছিল না বাড়িতে। সন্ধ্যার পর ভরসা হ্যারিকেন। প্রান্তিক চাষি মহম্মদ মনুয়ার হোসেন ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে বিক্রি করে দেন ১০ কাঠা জমি। উচ্চশিক্ষার যে বীজ বপন করেছিলেন বাবা, তার সোনার ফসল ঘরে এনেছে ছেলে। মহম্মদ নাজির হোসেন এ বছর ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। রাজ্যের ইতিহাসে নাজিরই প্রথম সংখ্যালঘু, যে এই স্থান পেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:৪৫
মহম্মদ নাজির হোসেন। বাড়িতে নাজিরের বাবা-মা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মহম্মদ নাজির হোসেন। বাড়িতে নাজিরের বাবা-মা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মাধ্যমিক পাশ করবার আগে পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো ছিল না বাড়িতে। সন্ধ্যার পর ভরসা হ্যারিকেন। প্রান্তিক চাষি মহম্মদ মনুয়ার হোসেন ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে বিক্রি করে দেন ১০ কাঠা জমি। উচ্চশিক্ষার যে বীজ বপন করেছিলেন বাবা, তার সোনার ফসল ঘরে এনেছে ছেলে। মহম্মদ নাজির হোসেন এ বছর ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। রাজ্যের ইতিহাসে নাজিরই প্রথম সংখ্যালঘু, যে এই স্থান পেল।

কেবল পরিবারই নয়, এই সাফল্যে আপ্লুত গোটা এলাকা। অশোকনগর থানার মালিকবেড়িয়া পূর্বপাড়ায় দুশোটি পরিবারের বাস। অধিকাংশেরই পেশা চাষ। অনেকেই খেতমজুর। মূলত সংখ্যালঘু মানুষের বাস। এখন গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে রাজীবপুর বাজারেও সবাই এক ডাকে চেনে নাজিরকে। ‘‘ও আমাদের গর্ব। ওকে চিনব না?’’ বললেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, নাজিরদের ইটের বাড়িতে এখনও প্লাস্টার পড়েনি। ঘরের মেঝে মাটির। সবাই জানালেন, একটু একটু করে ঘর তৈরি হচ্ছে। শৈশবে নাজিরদের বাড়ি বলতে ছিল মাটির দেওয়াল আর ভাঙা টালির এক কামরার ঘর। চার ভাইবোন এবং বাবা-মাকে নিয়ে ওই ঘরে বসেই লেখাপড়া চালাতে হয়েছে নাজিরকে।

সংসারে টানাটানি থাকলেও, নম্বরে কখনও টান পড়েনি। স্টার নম্বর নিয়ে স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন নাজির। যোগ দেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চে। ২০১১ এবং ২০১২ সালে ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় বসেছিলেন নাজির। প্রথম বার ‘সি’ গ্রেড (রেভিউনিউ অফিসার), পরের বার ‘বি’ গ্রেড (ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্ট অব পুলিশ) পদের জন্য সফল হন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করা। তাই ফের পরীক্ষায় বসে, এ বার ‘এগজিকিউটিভ’ হয়েছেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বা ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে কাজে যোগ দেবেন নাজির।

নাজিরের প্রেরণা তাঁর বাবা-মা। ফোনে নাজির বলছিলেন, ‘‘প্রথমে টার্গেট ঠিক করে নিতে হবে। তার পর পরিক‌ল্পনা করতে হবে। শেষে দরকার কঠোর পরিশ্রম। যার বিকল্প নেই।’’

চার ভাইবোনের মধ্যে নাজির বড়। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজো ভাই মহম্মদ মিজারুন হোসেন এম এ পাশ করে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছোট ভাই নাজবুল বিদ্যুৎ দফতরে কাজ করেন। মালিকবেড়িয়ার মতো গ্রামে সেখানে প্রান্তিক চাষির সন্তান নাজির নজির তৈরি করলেন।

Ashoknagar Brilliant poor family Bidhan Chandra Krishi ViswaVidyalaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy