Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাজেটে নেই চায়ে পে চর্চা, হতাশ শিল্প

বাস্তবে এ সব কিছুই ছিল না পীযূষ গয়ালের এ দিনের বক্তৃতায়। ফলে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প এ দিন যথেষ্টই হতাশ। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩২
Share: Save:

২৪ ঘণ্টার মধ্যে চা বলয়ে সভা করতে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কয়েক দিনের মধ্যে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাজেটে চা শিল্প নিয়ে কিছু না কিছু ঘোষণা থাকবে বলে মনে করছিলেন চা ব্যবসায়ী, বাগান মালিক, শ্রমিক পক্ষও। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, বন্ধ বা রুগ্ণ বাগানের জন্য কোনও রুপোলি রেখা থাকবে বাজেটে। থাকতে পারে দার্জিলিংয়ের চা নিয়ে ঘোষণাও। কিন্তু বাস্তবে এ সব কিছুই ছিল না পীযূষ গয়ালের এ দিনের বক্তৃতায়। ফলে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প এ দিন যথেষ্টই হতাশ।

পাহাড়ে ১০৪ দিন টানা বন্‌ধের ফলে দার্জিলিং চায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক চা বাজারেও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে দার্জিলিং। ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের কাছে আর্থিক প্যাকেজ দাবি করেছিলেন পাহাড়ের চা বাগান মালিকরা। টি বোর্ড ও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রীকেও চিঠি পাঠান তাঁরা। বাগান মালিকদের আশা ছিল, অন্তর্বর্তী বাজেটে ক্ষতিপূরণের প্যাকেজের কথা ঘোষণা করা হবে।

তেমন কিছুই এ দিন বাজেটে আসেনি। তাতে ক্ষুব্ধ পাহাড়ের বাগান মালিকরা। যদিও প্রকাশ্যে এই নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সন্দীপ মুখোপাধ্যায়। তবে চা বাগান মালিকদের সংগঠন তেরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বনসাল বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাজেটে চা শিল্প নিয়ে একটি কথাও বলা হল না। এটা চরম হতাশার ও দুঃখজনক। উত্তরবঙ্গ ও অসমের চা শিল্প কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলছে। এখন কেন্দ্রকে পরিকল্পনামাফিক ঘোষণা করবে বলেই আমরা আশা করেছিলাম।’’

ক্ষুদ্র চা বাগান সম্পর্কেও উচ্চবাচ্য ছিল না শুক্রবারের বাজাটে। কনফেডারেশেন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম অন্য কোন ঘোষণা না হলেও ক্ষুদ্র চা চাষিদের কৃষকের মর্যাদা দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা দেবে কেন্দ্র। দিনের শেষে আমাদের পাওনার খাতায় শূন্য বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

বটলিফ কারখানার মালিকরাও তাঁদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসারস অ্যসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অশোক ধনুটিয়া বলেন, ‘‘চা শিল্পের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেটে। কেন চা শিল্পকে দুয়োরানি করে রাখা হল, তার জবাব দেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের।’’ এই বাজেটকে বিস্ময়কর বলেই ব্যাখ্যা করেছেন সিআইআইয়ের উত্তরবঙ্গ জোনাল কমিটির এবং টি পার্ক স্টেক হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কমলকিশোর তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের চাহিদার কথা বিভিন্ন সময় কেন্দ্রের কাছে বলেছি। তার কিছুই বাজাটে প্রতিফলিত হয়নি। এটা চা শিল্পের সঙ্গে প্রতারণা করা হল।’’ যদিও বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে শ্রমিকদের জন্য অনেক ঘোষণাই বাজেটে রয়েছে। এই বাজেটে চা শ্রমিকদের জন্য আলাদা করে কিছু করার ছিল না।’’

চা শ্রমিক সংগঠনগুলিও বাজেট নিয়ে অসন্তুষ্ট। ২৯টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের নেতা অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রমিকদের জন্য একটি সুবিধার কথাও বলেনি কেন্দ্রীয় সরকার। শ্রমিকদের বাড়ি তৈরি প্রকল্প নিয়েও কোন ঘোষণা করা হয়নি।’’ আইএনটিটিইউসি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষ বলেন, ‘‘বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের জন্য কোন ঘোষণা না থাকাটা সত্যিই বিস্ময়ের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE