Advertisement
১৯ মে ২০২৪

দুষ্প্রাপ্য ধাতুর লোভে অপহরণ, ধৃত ৫

দুষ্পাপ্র্য মুদ্রা ও ধাতব সামগ্রী আদায়ের জন্য নাকাশিপাড়ার এক ফল ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দুর্গাপুরে একটি হোটেলে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা-সহ পাঁচ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এই হোটেলের ঘরেই আটকে রাখা হয়েছিল ব্যবসায়ীকে।

এই হোটেলের ঘরেই আটকে রাখা হয়েছিল ব্যবসায়ীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০২:০১
Share: Save:

দুষ্পাপ্র্য মুদ্রা ও ধাতব সামগ্রী আদায়ের জন্য নাকাশিপাড়ার এক ফল ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দুর্গাপুরে একটি হোটেলে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা-সহ পাঁচ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, নানা উপায়ে পুরনো মুদ্রা ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব সামগ্রী জোগাড় করে মোটা টাকায় বিক্রির একাধিক চক্র কলকাতা-সহ বহু জেলাতেই সক্রিয়। এ ক্ষেত্রেও সেই সব চক্রের কেউ জড়িত কি না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর করা হচ্ছে।

বুধবার নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে দুর্গাপুরে হানা দিয়ে পাঁচ জনকে পাকড়াও করে। এর মধ্যে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা অশোক সাহা ওরফে লিটনও রয়েছেন। বাকি চার জনের নাম শঙ্কর দাস, বৈদ্যনাথ মহন্ত, রঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার নাকাশিপাড়া থেকে যাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল তাঁর নাম শঙ্কর ঘোষ। বর্ধমানের বুদবুদ থানা এলাকার শঙ্কর দাস ও বাঁকুড়ার সোনামুখীর বৈদ্যনাথ মহন্ত থেকে তাঁকে অপহরণ করে আনেন বলে অভিযোগ। দুর্গাপুরের বিধাননগরে একটি হোটেলে তাঁকে রাখার ব্যবস্থা করেন লিটন। রঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে, তাঁরাই ওই হোটেলের মালিক। বুধবার কৃষ্ণনগর আদালত পাঁচ জনকেই এক দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁদের ফের আদালতে তোলার কথা রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে নাকাশিপাড়ার মুড়াগাছার ব্যবসায়ী শঙ্করবাবু ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। মাঝরাস্তা থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। তাঁর বাইকটি রাস্তায় পড়ে ছিল। শঙ্করবাবুর স্ত্রী গীতা ঘোষের দাবি, ‘‘পরের দিন সকাল ৯টা নাগাদ আমার মোবাইলে একটি ফোন আসে। বলা হয়, আমার ভাসুরের কাছে দু’টি দুষ্প্রাপ্য জিনিস রয়েছে। সেগুলি কেনার জন্য আমার স্বামীকে ওরা না কি আট লক্ষ টাকা দিয়েছে। আমি যদি ওই জিনিসগুলি ওদের দিয়ে দিই, তবে ওরা আমার স্বামীকে ছেড়ে দেবে। সঙ্গে আরও দেড় লক্ষ টাকা দেবে।’’

গোটা বিষয়টিই পুলিশকে জানান গীতা। নাকাশিপাড়া থানা তদন্তে নেমে বোঝে, যে মোবাইল থেকে ফোন এসেছিল সেটি আছে দুর্গাপুরে। মঙ্গলবার রাতেই সাদা পোশাকের পুলিশ শঙ্করবাবুর বাড়ির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে দুর্গাপুর রওনা হয়। গভীর রাতে দুর্গাপুরের মুচিপাড়া মোড়ে পৌঁছে ওই নম্বরে ফের ফোন করা হলে তিন জন গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতেই তাদের ধরে ফেলে পুলিশ। তাদের জেরা করে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে বিধাননগরের হোটেল থেকে শঙ্করবাবুকে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, শঙ্করবাবুকে তারা কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু তিনি দাবি মতো জিনিস দিতে না পারায় তাঁকে অপহরণ করে টাকা আদায়ের ছক কষা হয়। কিন্তু অপহরণকারীদের সঙ্গে শঙ্করবাবুর আলাপ কী ভাবে?

গীতার দাবি, ‘‘আমার স্বামী মাঝে-মধ্যে ভ্যান চালায়। তাতে চেপে মুড়াগাছা স্টেশন থেকে ধর্মদা যাওয়ার সময়েই অপহরণকারীদের সঙ্গে ওর আলাপ হয়েছিল। তখনই ওরা ওকে ওই রকম দুষ্প্রাপ্য জিনিস খুঁজে দিতে বলে।’’ বেছে-বেছে তাঁর স্বামীকেই কেন খোঁজার ভার দেওয়া হল, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। পুলিশ জানায়, ধৃতদের সঙ্গে শঙ্করবাবুর কী ভাবে আলাপ, তাঁদের কাছে দুষ্প্রাপ্য কিছু আদৌ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গীতা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এ রকম কিছু আমাদের বাড়িতে নেই।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE