ভুয়ো পাসপোর্ট রাখার অভিযোগে ধৃত পূর্ব বর্ধমানের দম্পতির জামিনের আবেদন খারিজ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শব্বর রশিদির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আধার কার্ড, ভোটার কার্ড থাকলেই কি ভারতীয়? বহু বাংলাদেশির কাছে এই ধরনের নথি রয়েছে। কেউ কেউ নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে আয়করও দেন।’’ আদালতের নির্দেশ, ওই দম্পতিকে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ সরকারি নথি পেশ করতে হবে।
পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা দুলাল শীল এবং তাঁর স্ত্রী স্বপ্না শীলকে জাল পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ১৩ মাস ধরে পুলিশি হেফাজতেই রয়েছেন দু’জনে। দুলাল পেশায় ক্ষৌরকার। তাঁদের আইনজীবীর দাবি, ২০১০ সালে ওই দম্পতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে পূর্ব বর্ধমানে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের কাছে ভারত সরকারের দেওয়া ‘আসল’ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ড রয়েছে। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাঁরা বাড়িও পেয়েছেন। তার পরেও পুলিশ বিনা কারণে তাঁদের গত এক বছর এক মাস ধরে নকল পাসপোর্ট রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করে রেখেছে বলে দাবি ওই আইনজীবীর।
আরও পড়ুন:
জামিনের আবেদন জানিয়ে দুলাল এবং স্বপ্না কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সোমবার বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সেখানেই বিচারপতি বসাক মামলাকারীর আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘এ দেশে আসা সব বাংলাদেশির কাছেই ভারতীয় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড রয়েছে। আপনি আয়কর দেন কি না জানি না, কিন্তু ওই বাংলাদেশিরা সকলেই আয়করও দেন। জাল পাসপোর্ট বানিয়ে ভারতে আসা বাংলাদেশিদের অনেকের কাছেই এ রকম আধার কার্ড, ভোটার কার্ড রয়েছে। দেখছেন না, আমেরিকাও তো অবৈধ ভাবে থাকার অভিযোগে আমাদের দেশের কত জনকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে! তাই, তাতে কিছু প্রমাণ হয় না। তাঁরা যে ভারতের প্রকৃত নাগরিক, সেই প্রমাণপত্র বা সরকারি নথি নিয়ে আসুন, আমি জামিন দিয়ে দেব।’’
যদিও মামলাকারী দুলাল এবং স্বপ্নার আইনজীবীর দাবি, সেই সরকারি নথি তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর মক্কেলরা বৈধ ভাবেই ভারতে রয়েছেন এবং ভারতের নাগরিক। তাঁরা কোনও জাল পাসপোর্ট তৈরি করেননি। তাঁদের মক্কেলরা কোনও ‘ফরেন সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট’-এর আওতায় পড়েন না। ২০১৯ সালে ভারত সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ফরেন সিটিজেনশিপ রেজিস্ট্রেশন আইনের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা কেউ ফরেন সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের আওতায় পড়বেন না। যদিও বিচারপতি বসাক তাঁদের কোনও যুক্তি শুনতে রাজি হননি।