Advertisement
E-Paper

চাই আরও ‘প্রণাম’, রাজ্যকে সুপারিশ কোর্টের

বৃদ্ধাকে দেখেই বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনি কী চান?’’ কিছু ক্ষণ নিরুত্তর থেকে বৃদ্ধার জবাব, ‘‘জীবনের শেষ ক’টা দিন নিজের বাড়িতে শান্তিতে কাটাতে চাই।’’

শমীক ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫০
আদালতে বীণা সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

আদালতে বীণা সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

ভিড়ে ঠাসা এজলাস। হুইলচেয়ারে বসে থাকা তিরাশি বছরের এক বৃদ্ধাকে ভিড় ঠেলে হাজির করানো হল। বৃদ্ধাকে দেখেই বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনি কী চান?’’ কিছু ক্ষণ নিরুত্তর থেকে বৃদ্ধার জবাব, ‘‘জীবনের শেষ ক’টা দিন নিজের বাড়িতে শান্তিতে কাটাতে চাই।’’

ন্যায়ালয়ে হাজির হয়ে অশীতিপর বৃদ্ধার এই আর্ত আবেদনের পিছনে মর্মন্তুদ কোনও কাহিনি আছে অনুমান করেই বৃহস্পতিবার বিকেলের এজলাস প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। বৃদ্ধার আবেদন শুনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া রাজ্য সরকারকে সুপারিশ করে, কলকাতা পুলিশের মতো অন্যত্রও নিঃসঙ্গ বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য ‘প্রণাম’-এর মতো প্রকল্প চালু করা হোক। বাম জমানায় কলকাতা পুলিশ মহানগরীর নিঃসঙ্গ প্রবীণ-প্রবীণাদের জন্য ২০০৮ সালে প্রণাম চালু করে। প্রণামের সদস্য হলে আপদে-বিপদে দিনে-রাতের যে-কোনও সময়েই ষাটোর্ধ্ব বয়স্কেরা পুলিশের বিশেষ সাহায্য পান। পুলিশ তাঁদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়। প্রণামের সদস্য কমবেশি ১৫ হাজার।

শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা বীণা সরকার নিঃসন্তান ও বিধবা। তাঁর আইনজীবী সায়ন দে জানান, ছোট ভাই পল্লব দত্ত আমৃত্যু তাঁর দেখভাল করবে, এই আশায় বছর ছয়েক আগে দু’কাঠা জমি-সহ নিজের বাড়িটি তাঁকে দানপত্র করে দেন ওই বৃদ্ধা। ২০১৬ সালে পল্লব আচমকা মারা যান। তার আগেই অবশ্য তিনি কিছু টাকার বিনিময়ে তাঁর সহোদর ভাই বিজনকে দিদির দেওয়া বাড়িটি লিখে দেন।

বৃদ্ধার আইনজীবী আরও জানান, বীণাদেবীর বাড়ির পাশেই বিজনের নিজের বাড়ি। ওই ব্যক্তি সেখানেই থাকেন। কিন্তু বছর দেড়েক ধরে বিজন দিদির উপরে নির্যাতন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা নিরুপায় হয়ে শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ জানান। তাতে অত্যাচার এতটাই বেড়ে যায় যে, বীণাদেবী বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। তাঁর দুই ভাইঝি তাঁকে নিজেদের শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়ে পালা করে রাখতে শুরু করেন।

সায়নবাবু জানান, বৃদ্ধার অভিযোগ পুলিশ তাঁকে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে সাহায্য করেনি। বিজনবাবুর বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। অগত্যা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁর মক্কেল। গত ২৬ জুলাই এই মামলার প্রথম শুনানিতে বিচারপতি পাথেরিয়া নির্দেশ দেন, বীণাদেবীকে আদালতে আনতে হবে। তিনি বৃদ্ধার মুখ থেকে সব কিছু শুনতে চান। তাই এ দিন বৃদ্ধাকে আদালতে আনা হয়। বিজনবাবুর আইনজীবী নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাঁর মক্কেলের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে বীণাদেবীর বাড়ির পাশেই। তিনি দিদির উপরে অত্যাচার করবেন কেন?

বিচারপতি পাথেরিয়া জানিয়ে দেন, বৃদ্ধা যাতে নিজের বাড়িতে আমৃত্যু শান্তিতে বাস করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দানপত্র করা বাড়ি ‘রিভার্ট’ বা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি দেওয়ানি আদালতে যেতেই পারেন।

বিচারপতি একই সঙ্গে সরকারি আইনজীবী অসীম গঙ্গোপাধ্যায়কে জানান, তিনি প্রণামের মতো প্রকল্প রাজ্যের অন্যত্রও চালু করার সুপারিশ করছেন। একই সঙ্গে শিলিগুড়ির থানার ওসি-কে নির্দেশ দিচ্ছেন, কিছু দিনের জন্য কনস্টেবল পাঠিয়ে এক দিন অন্তর বীণাদেবীর খোঁজ নিতে হবে। ওসি-কেও দশ দিন অন্তর বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে তাঁর খোঁজখবর নিতে হবে আপাতত কিছু দিন।

Calcutta High Court Police Pronam Elderly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy