নিয়মই সব নয়। মানবিক হওয়াও জরুরি। নিয়মের বাইরে গিয়ে অসুস্থ সন্তানের দেখভালের জন্য শিক্ষিকা মাকে বদলির নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের নির্দেশ, ওই শিক্ষিকার সন্তানের মঙ্গলের জন্য বাড়ির সামনের স্কুলে বদলির বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। মামলাকারীর আবেদন যাচাই করে ওই সিদ্ধান্ত নিতে হবে জেলা স্কুল পরিদর্শককে। নিয়মের বেড়াজাল বদলি বাতিলের কারণ হওয়া উচিত নয়। বিচারপতি জানান, ওই শিক্ষিকার আবেদন বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আদালত।
পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলে রসায়ন বিভাগের শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত সুনন্দা পট্টনায়েক। তাঁর বক্তব্য, ২০০৯ সাল থেকে ওই স্কুলে চাকরি করছেন তিনি। তাঁর ছ’বছরের সন্তান অসুস্থ। সে সেরিব্রাল পলসি রোগে আক্রান্ত। ৩৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে চাকরি করে সন্তানের দেখাশোনা করা যাচ্ছে না। বাড়ির কাছে কোনও স্কুলে বদলি করা হোক।
ওই শিক্ষিকার আইনজীবী শুভ্রপ্রকাশ লাহিড়ীর সওয়াল, সাধারণ নিয়মে তাঁর মক্কেল বদলি পাওয়ার যোগ্য। ২০২১ সালে তিনি আবেদন করেছেন। এত দিনেও তা বিবেচনা করা হয়নি। শিক্ষকতার একটি নির্দিষ্ট সময় পরে উৎসশ্রী পোর্টালে বদলির আবেদন করা যায়। এখন ওই পোর্টালের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই যুক্তি দেখিয়ে তাঁর মক্কেলকে বদলি করা হচ্ছে না।
জেলা স্কুল পরিদর্শকের আইনজীবী জানান, ওই শিক্ষিকা সন্তানের অসুস্থতার সপক্ষে পর্যাপ্ত নথি জমা দেননি। তা ছাড়া তাঁর সন্তান যে রোগে ভুগছেন বদলির নিয়মে সেই রোগের উল্লেখ নেই। যে সব রোগের কারণে বদলি বিবেচনা করা হয় সেই তালিকায় ওই রোগ নেই। ফলে শিক্ষিকার আবেদন গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘রোগ তালিকাভুক্ত নেই বলে বদলি হবে না, এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। শিশুকন্যাটি সেরিব্রাল পলসি রোগে ৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। এর পরেও কেন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বদলির বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত নয়?’’ হাই কোর্টের নির্দেশ, জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিকিৎসক দিয়ে ওই সন্তানের মেডিক্যাল রিপোর্ট যাচাই করতে হবে। বক্তব্যের সত্যতা থাকলে বদলির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। ওই বদলির সিদ্ধান্ত জানাতে যাতে বিলম্ব না হয় তার জন্য সময়ও বেঁধে দেন বিচারপতি।