কাকদ্বীপে জোড়া খুনের ঘটনার মামলা থেকে আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনকে অব্যাহতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা তাঁকে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আদালত জানিয়েছে, পরবর্তী শুনানির দিন দময়ন্তীর জায়গায় অন্য কোনও অফিসারকে নিয়োগ করা হবে।
কাকদ্বীপের স্থানীয় সিপিএম কর্মী দেবপ্রসাদ দাস এবং তাঁর স্ত্রী ঊষারানি দাসের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছিল বছর সাতেক আগে। ঘরে আগুন লাগিয়ে ওই দম্পতিকে পুড়িয়ে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বিচারপতি মান্থার একক বেঞ্চ বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের নির্দেশ দেয়। দময়ন্তীর নেতৃত্বে চার জনের দল ওই তদন্ত করছিল। আদালত সূত্রে খবর, সম্প্রতি অসুস্থতার কারণে দময়ন্তী ওই তদন্ত থেকে অব্যাহতি চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন। বুধবার তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় দেবপ্রসাদ ও তাঁর স্ত্রীর অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। বাবা-মা তৃণমূলে যোগ দিতে না-চাওয়ায় তাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ওই দম্পতির ছেলে দীপঙ্কর। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে চাননি। বাবা-মায়ের ‘হত্যা’র ঘটনায় সুবিচার না-পেয়ে ২০২৩ সালে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দীপঙ্কর। সেই আবেদনের ভিত্তিতে দময়ন্তীর নেতৃত্বে সিট গড়ে দিয়েছিল উচ্চ আদালত।
বুধখালি গ্রাম ছাড়িয়ে একেবারে শেষ প্রান্তে, নির্জন জায়গায় বাড়ি ছিল দেবপ্রসাদদের। পাশেই মুড়িগঙ্গা নদী। ওই নদীতে মাছ ধরতেন দেবপ্রসাদ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর কিছু দিন আগে মাছ ধরা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। মাছ ধরতে হলে তৃণমূল করতে হবে বলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি গ্রামের কয়েক জনের। তার কিছু দিন পরেই দাস দম্পতির দগ্ধ দেহ মেলে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনার রাতে দীপঙ্কর ক্যাটারিংয়ের কাজ শেষ করে রাতের দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। দূর থেকে দেখেন, আগুন জ্বলছে। খানিক দূর এগোলে বুঝতে পারেন, তাঁর বাড়িতেই আগুন লেগেছে। উদ্ভ্রান্তের মতো বাড়ির ভিতর ঢুকতে গিয়ে বাবার পোড়া দেহে হোঁচট খান। দেহ তখনও পুড়ছিল। কিছুটা দূরে পড়ে ছিল মায়ের পোড়া দেহ। দীপঙ্কর সেই সময়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন, বাবা-মাকে হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। একই অভিযোগ ছিল প্রতিবেশীদেরও। খুনের অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে দায়ী করেছিলেন দীপঙ্কর। যদিও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে পরে বলেছিল, শর্টসার্কিট থেকে দুর্ঘটনা। গ্রামের লোকজন অবশ্য সে সময়ে জানিয়েছিলেন, অগ্নিকাণ্ড যখন ঘটে, সে সময়ে এলাকায় লোডশেডিং চলছিল।