Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

অভিষেকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নয়, হাই কোর্টের রক্ষাকবচ, তবে খারিজ করা হল না ইডির ‘এফআইআর’

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জেলবন্দি কুন্তল ঘোষের চিঠির মাধ্যমে অভিষেকের নাম উঠে আসে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভিষেককে পৌনে ন’ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় ইডি।

photo of Abhishek Banerjee

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০০
Share: Save:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্ষাকবচ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। শুক্রবার এই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তবে ইডির ইসিআইআর বা এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফর্মেশন রিপোর্ট (ইডির করা অভিযোগ) খারিজ করল না আদালত। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার এবং তাঁর সঙ্গে যোগসূত্র ছাড়া অভিষেকের বিরুদ্ধে আরও কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেনি ইডি। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে ইসিআইআর খারিজের আবেদন অপরিণত অবস্থায় রয়েছে। তাই এই নিয়ে আদালত এখনই কোনও নির্দেশ দেবে না।’’

স্কুলের নিয়োগ মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে ইডির ইসিআইআর খারিজ চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন অভিষেক। ওই মামলার সঙ্গে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির অফিসে ইডির তল্লাশির বিষয়টিও যুক্ত হয়। এই মামলায় শুক্রবার অভিষেককে রক্ষাকবচ দিল আদালত।

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জেলবন্দি কুন্তল ঘোষের চিঠির মাধ্যমে অভিষেকের নাম উঠে আসে। ধর্মতলায় শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছিলেন, হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর পর পরেই রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল দাবি করেন যে, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দিচ্ছে ইডি, সিবিআই। এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়ে নিম্ন আদালতে চিঠিও দেন কুন্তল। পুলিশি হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠান কলকাতার হেস্টিংস থানাতেও। তার পর কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, প্রয়োজনে সিবিআই বা ইডি অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। সেই একই নির্দেশ বহাল রাখেন হাই কোর্টের বিচারপতি সিংহও। তার পরেই অভিষেককে ডেকেছিল সিবিআই। হাজিরাও দিয়েছিলেন অভিষেক। পরে তাঁকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। এর পর নতুন করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভিষেককে তলব করা হয়। সে দিন পৌনে ন’ঘণ্টা ধরে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।

গত ২১ অগস্ট অভিষেকের সংস্থা লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসে তল্লাশি চালায় ইডি। ওই সংস্থায় অতীতে কাজ করতেন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ২৩ অগস্ট ওই তল্লাশির কথা এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায় ইডি। তাতে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত সুজয়কৃষ্ণের নাম উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে সেখানে নাম ছিল অভিষেকের। ইডির ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়, লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসে চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসাবে এক সময়ে চাকরি করেছেন সুজয়কৃষ্ণ। লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক। যা ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। অভিষেকের নাম করে কেন প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হল, এই নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইডি। এ নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, অভিষেকের সংস্থার একটি কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেছেন ইডির আধিকারিকেরা। যা নিয়ে অভিযোগ জানান ওই সংস্থারই এক কর্মী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে লালবাজার। ইডির তরফে দাবি করা হয়, তাঁদের এক আধিকারিক নিজের মেয়ের জন্য হস্টেলের তালিকা বার করেছিলেন। ওই ফাইলগুলিতে হস্টেলের নাম রয়েছে বলে জানানো হয়। এই নিয়ে ইডির বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি ঘোষ।

অন্য দিকে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার অভিষেক-সহ লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ডিরেক্টর এবং শীর্ষ পদাধিকারীদের সম্পত্তির তথ্য হলফনামা আকারে কলকাতা হাই কোর্টে জমা দিয়েছে ইডি। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেছেন, ‘‘ওদের কাছে প্রথম থেকেই তো সব আছে। নতুন করে কী জমা দেব? ২০২০ সালে আমি প্রথম যে দিন ইডি দফতরে গিয়েছি, সে দিনই যাবতীয় সম্পত্তির হিসাব এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা দিয়ে এসেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে পাঁচ বার তলব করেছে। চার বার ইডি, এক বার সিবিআই। আমার স্ত্রীকে চার বার তলব করেছে। আমি এখন আর ইডি, সিবিআইকে গুরুত্ব দিই না।’’

শুক্রবার আদালতের রায় প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘প্রথম থেকেই স্বয়ং অভিষেক স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তিনি বিন্দুমাত্র অপরাধ করেননি। যদি করে থাকেন, কেউ এক ইঞ্চি প্রমাণ দেখাতে পারলে, তিনি স্বেচ্ছায় শাস্তি বরণ করে নেবেন। আদালত বলেছে, কোনও অর্থবহ প্রমাণ অভিষেকের বিরুদ্ধে দেখানো যাচ্ছে না। তাতে তো অভিষেকের কথার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। জোর করে অভিষেককে জড়ানো যাচ্ছে না। বিজেপি যেভাবে এজেন্সিকে দিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ আক্রমণ চালাচ্ছে, সেটা আবার প্রকাশ্যে এল। তা আদালতের রায়েই প্রমাণ হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee ED Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE