Advertisement
E-Paper

নিজের নিশান গলায় ঝোলান, শৃঙ্খলার পাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে

কাজটা রক্ষীদের। সেপ্টেম্বরের এক সকালে দেখা গেল, সেই রক্ষীদের সঙ্গে শাড়ি পরা এক মহিলাও কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথে আগন্তুকদের পরিচয়পত্র যাচাই করছেন। পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে এবং অন্যদের খাতায় সই করিয়ে তবেই ঢুকতে দিচ্ছেন।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৭

কাজটা রক্ষীদের। সেপ্টেম্বরের এক সকালে দেখা গেল, সেই রক্ষীদের সঙ্গে শাড়ি পরা এক মহিলাও কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথে আগন্তুকদের পরিচয়পত্র যাচাই করছেন। পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে এবং অন্যদের খাতায় সই করিয়ে তবেই ঢুকতে দিচ্ছেন।

কে তিনি, বোঝার উপায় নেই। কেননা পরিচয়পত্র ঝোলানো নেই তাঁর গলায়। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবড় কর্ত্রী, তিনি যে রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞেস করে সেটা জেনে নিতে হচ্ছিল কৌতূহলীদের। তার পরে প্রশ্ন ওঠে, অন্যদের নাম-পরিচয় পরীক্ষার ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন, শৃঙ্খলার পাঠ দিতে পথে নেমেছেন। অথচ রেজিস্ট্রারের নিজের পরিচয়পত্রটি তাঁর গলায় ঝোলানো নেই কেন?

সোমাদেবীর জবাব ছিল, গলায় পরিচয়পত্র ঝোলানোর ব্যবস্থাটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালুই হয়নি। এ বার সেই ব্যবস্থা করতে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ঠিক করেছেন, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-পড়ুয়া সকলেরই পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাখা আবশ্যিক করা হবে। আর বহিরাগতদের ক্ষেত্রে নাম ও ফোন নম্বর খাতায় লিখে, ‘ভিজিটর’ লেখা পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে গলায়। যেমনটা হয় বড় সংস্থায়।

‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আসা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার পথেই এগোনো হচ্ছে। সকলের সঙ্গে কথা বলে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,’’ বললেন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ। তিনি জানান, নতুন ব্যবস্থায় গলায় পরিচয়পত্র না-ঝুলিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেউ ঢুকতে পারবেন না।

কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন। তবে সঙ্গে পরিচয়পত্র থাকলেও কাজের কাজ কতটা হবে অর্থাৎ আদৌ নিয়ম মানা হবে কি না— সেই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের একাংশই ঘোর সংশয়ে।

কেন এত দিনে এই পদক্ষেপ করার কথা ভাবতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য, সমস্যাটা মূলত বহিরাগতদের নিয়ে। প্রতিদিন নানা কাজে বহু মানুষ এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আসেন। আবার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদেও অনেকে ঢোকেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়ম মেনে তাঁদের আটকানোর কোনও উপায় নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বহিরাগতদের যোগসাজশেই ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি বারবার যেমনটা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে। রাজাবাজার ক্যাম্পাসেও।

গত বছর জুলাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। তার পরে ছাত্র সংসদের অফিসে বহিরাগতদের সঙ্গে মারামারি। দু’টি ঘটনারই সাক্ষী কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস। রাজাবাজার ক্যাম্পাসে ছাত্রদের গন্ডগোলে তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনেও বহিরাগতদের যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গন্ডগোলে নাম জড়িয়েছে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজেরও। কোনও ঘটনার পরেই যে বহিরাগতদের আটকাতে কার্যকর পদক্ষেপ করা যায়নি, তা মানছেন কর্তৃপক্ষ।

নজরদারি চালাতে ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারে রক্ষীরা মাঝেমধ্যে পরিচয়পত্র দেখতে চান। সম্প্রতি কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সেই রক্ষীদের সঙ্গেই পরিচয়পত্র পরীক্ষায় নেমেছিলেন রেজিস্ট্রার সোমাদেবী। রেজিস্ট্রার জানান, নৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি সদরে রক্ষীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আগন্তুকদের পরিচয় যাচাই করবেন বারবার। কিন্তু এ-সব উদ্যোগ যে স্থায়ী সমাধানের পথ নয়, সেটা বিলক্ষণ বুঝেছেন কর্তৃপক্ষ। তাই ‘কড়া দাওয়াই’ হিসেবে গলায় পরিচয়পত্র ঝোলানোর পরিকল্পনা।

এক কর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পডুয়ারই নাম-পরিচয় লেখা কার্ড রয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখন সাধারণত পকেটে বা ব্যাগেই থাকে। গলায় ঝোলানোর রেওয়াজটাই নেই। এত দিনে সেই ব্যবস্থা হচ্ছে। এটা করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের দাপট কমবে বলে কর্তৃপক্ষের আশা।

শিক্ষক সংগঠন কুটার তরফে দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় কোনও কিছু নিয়েই আলোচনা হয় না। এই বিষয়ে আলোচনা হবে জেনে ভাল লাগল। বৈঠকেই আমাদের মত জানাব।’’ আলোচনার প্রস্তাব পেলে তাঁরা এই নিয়ে মন্তব্য করবেন বলে জানান শিক্ষাকর্মী সংগঠন ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তীও। ‘‘এটা খুব ভাল উদ্যোগ। আমরা গত বছর থেকেই এই দাবি জানিয়ে আসছি,’’ বলছেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ অধিকারী।

identity card university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy