Advertisement
E-Paper

অখিলের ডানা ছাঁটার পরে কাঁথি-রাজনীতির সমীকরণ কি বদলাতে পারবে তৃণমূল? নানা মুনি দিচ্ছেন নানা মত

শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ার পর সংগঠনে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করতেই অখিলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। দায়িত্ব পেয়েছিলেন তাঁর ছেলে সুপ্রকাশও। কিন্তু লোকসভায় সাফল্য পায়নি তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ১৪:১৪
Can TMC change Kanthi\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s equation after Akhil Giri episode

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

দু’বছর আগে ভর্ৎসনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল অখিল গিরির শাস্তি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে ‘বর্ণবাদী মন্তব্য’ করে ঘরে-বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন রামনগরের বিধায়ক। কিন্তু এ বার আর রক্ষা পাননি। বন দফতরের মহিলা আধিকারিককে বেনজির ভাষায় আক্রমণ করে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন অখিল। রাজনীতিতে একটা ঘটনা ঘটলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তৈরি হয় নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা। অখিলের ডানা ছাঁটা যাওয়ার পরে তাই স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে, এর পরে কে হবেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার ‘মুখ’? তৃণমূল কি পারবে শুভেন্দু অধিকারীর ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত কাঁথিতে দলের সাংগঠনিক সমীকরণ বদলাতে?

অখিলের ডানা ছাঁটার পরে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিককে সামনে রেখেই সংগঠন সাজাবে দল। উত্তম লোকসভা ভোটে কাঁথিতে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দুর কাছে পরাস্ত হতে হয় তাঁকে। তবে উত্তমের লড়াইকে দরাজ শংসাপত্র দিয়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের পর কালীঘাটে দলের বৈঠকে বলেছিলেন, ‘‘উত্তম বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করেছে।’’ তৃণমূলের অন্দরের খবর, উত্তমকে পছন্দ করেন দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলের অনেকের বক্তব্য, অখিলের পর উত্তমই হতে চলেছেন তৃণমূলের কাঁথির নেতা। তা ছাড়া আর ‘ওজনদার’ কোনও মুখ নেই।

কিন্তু তার ফলে কি দলের ‘উত্তম’ হবে?

এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরে। তৃণমূল সূত্রের খবর, কাঁথির রাজনীতিতে উত্তম যেমন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রিয় হয়ে উঠেছেন, তেমন এ-ও বাস্তব যে, স্থানীয় স্তরে দলের মধ্যেই তাঁর বিরোধীও কম নেই। তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, খেজুরি, চণ্ডীপুর, ভগবানপুরের মতো বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাদের সঙ্গে উত্তমের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। শাসকদলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বিমান নায়েক, তরুণ জানা, অমিয় ভট্টাচার্য, আনোয়ারউদ্দিনের মতো নেতারা উত্তমকে কতটা মানবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’ শাসকদলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘কাঁথিতে দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল যে রয়েছে, তা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অজানা নয়। এখন অখিল-পরবর্তী পর্বে সব মসৃণ হয়ে যাবে, এমন ভাবাটা বোধ হয় অতি সরলীকরণ হবে।’’ তাঁর আশঙ্কা, মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর অখিল আরও ‘বেপরোয়া’ হতে পারেন।

এর বিপরীত যুক্তিও রয়েছে। সেই অংশের বক্তব্য, দলে যে সাংগঠনিক রদবদল আসন্ন, তা ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই মমতা এবং অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। সেই সূত্রে কাঁথিতেও রদবদল হতই। অখিলের কাণ্ডে সেটা তরান্বিত হয়ে গেল। আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, অখিলকে সাধারণ বিধায়ক হয়েই থাকতে হবে। কিন্তু উত্তম ‘মুখ’ হয়ে উঠলে কি তাঁকে অন্তর্ঘাতের মধ্যে পড়তে হবে না? উত্তমকে পছন্দ করেন, এমন এক নেতার কথায়, ‘‘কোচবিহারেও বিস্তর কোন্দল ছিল। কিন্তু তা মেরামত করে লোকসভায় সাফল্য এসেছে। কাঁথিতেও সেই কৌশলেই এগোবে দল। অর্থাৎ, উত্তম তাঁর টিম নিয়েই কাজ করার সুযোগ পাবেন।’’

শুভেন্দু তৃণমূল থেকে চলে যাওয়ার পরে দলের অন্দরে অখিলের ‘গুরুত্ব’ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। অধিকারী পরিবারের সঙ্গে যে অখিলের সম্পর্ক ভাল ছিল না, তা সর্বজনবিদিত। শুভেন্দু দলে থাকায় অখিলের সেই অর্থে ‘নেতা’ হয়ে ওঠা হয়নি। শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ায় যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করতেই অখিলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। অখিলের ছেলে সুপ্রকাশ গিরিকে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যানও করা হয়। কিন্তু লোকসভায় গোটা পূর্ব মেদিনীপুরেই সাফল্য পায়নি তৃণমূল। জেলার দু’টি আসনেই বিজেপিকে জিতিয়েছেন শুভেন্দু। ২০২৬-এর দিকে তাকিয়ে এখন থেকেই ভাঙা কাঁথিকে জুড়তে চায় কালীঘাট এবং ক্যামাক স্ট্রিট। অখিলকাণ্ডের পর সেই লক্ষ্য পূরণে সাংগঠনিক সমীকরণ কী হবে, সে দিকেই তাকিয়ে তৃণমূলের জেলার নেতারা। নজর রাখছে বিজেপিও।

Akhil Giri Akhil Giri Comment TMC BJP Controversial comments Forest Ranger Mamata Banerjee Birbaha Hansda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy