মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরে রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমেছে। ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের থেকে জরিমানা আদায়েও জোয়ার এসেছে। এই সাফল্যে পুলিশকর্তাদের মুখে চওড়া হাসি দেখা গেলেও তথ্য বলছে, ফি-বছর মোট জরিমানার ২০ শতাংশেরও বেশি অনাদায়ি থেকে যাচ্ছে। ২০১৮-র শেষে অনাদায়ি জরিমানার পরিমাণ ২৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার প্রায় ১০ লক্ষ ৮০ হাজার মামলায় ধার্য জরিমানার পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সে-বছর আদায় হয়েছিল ২৪ কোটি। অর্থাৎ মোট জরিমানার ২১ শতাংশ অনাদায়ি ছিল। ২০১৭-য় ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের প্রায় ১৭ লক্ষ মামলায় ধার্য জরিমানার অঙ্ক ছিল ৪০ কোটি। কিন্তু অনাদায়ি থাকে ১০ কোটি টাকা,
যা মোট জরিমানার প্রায় ২৫ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের মামলার সংখ্যা ২৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ধার্য জরিমানার অঙ্ক ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে
৩৯ কোটি। অর্থাৎ অনাদায়ি জরিমানা প্রায় ২২ শতাংশ। গত তিন বছরে মোট জরিমানা আদায়
হয়েছে ৯৩ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। যদিও মোট ধার্য জরিমানার পরিমাণ ছিল ১২১ কোটি। অর্থাৎ বকেয়া জরিমানার পরিমাণ ২৭ কোটি টাকা।
এডিজি (ট্র্যাফিক) বিবেক সহায় বলেন, ‘‘ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে গাড়ির কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হলেও অনেকে জরিমানা দিয়ে সেগুলি ছাড়িয়ে নিয়ে যান না। ফলে জরিমানা অনাদায়ি থেকে যায়।’’ তবে বকেয়ার পরিমাণ খুব বেশি বলে মানতে রাজি নয় পুলিশ। এডিজি বলেন, ‘‘জেলা, পুলিশ কমিশনারেটের সংখ্যার নিরিখে অনাদায়ি জরিমানা খুবই কম।’’
জরিমানা আদায়ে গতি আনতে প্রযুক্তির ব্যবহার করবে রাজ্য পুলিশ। ঘটনাস্থলেই ডেবিট কার্ড ‘সোয়াইপ’ করে চালকেরা যাতে জরিমানা দিতে পারেন, তার জন্য পুলিশকে বিশেষ একটি যন্ত্র দেওয়া হবে। এটা প্রথম চালু হবে বিধাননগরে।
বকেয়া জরিমানা আদায়ে সম্প্রতি একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কলকাতা পুলিশ। ওই প্রকল্প অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া মিটিয়ে দিলে জরিমানায় কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে রাজ্য পুলিশ ওই ধরনের কোনও প্রকল্প নেওয়ার কথা এখনই ভাবছে না। ট্র্যাফিক বিভাগের
এক কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের বিষয়টি আলাদা। সেখানে বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। তা ছাড়া পুলিশ তো রাজস্ব আদায়ের কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। আমাদের কাজ পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং চালকদের আইন মেনে গাড়ি চালাতে বাধ্য করানো। সেই কাজে আমরা সফল।’’
বাড়তে থাকা পথ-দুর্ঘটনায় রাশ টানতে ২০১৬ সালে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্প ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে পথ-নিরাপত্তায় বাড়তি গুরুত্ব দেয় পুলিশ। তাতে ফলও মেলে। তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের পর থেকে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫,৪০০ জনের। ২০১৬ সালে সংখ্যাটি ছিল ৬,৫৪৪।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy