Advertisement
E-Paper

মোটরবাইক কি কেড়ে নেবে পুলিশ, জানতে চান কবিরুল

আটপৌরে পাকা বাড়িটার উঠোনে ধুলোয় মোড়া লাল মোটরবাইক। পিছনের নম্বর প্লেট থেকে কাদা মাটির প্রলেপটা ধুয়ে দিলে জ্বলজ্বল করছে নম্বর, ডব্লিউ বি ৫৮-এফ ৬৯৪৩। লালগোলার রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে কবিরুল ইসলামের আট বছরের পুরনো সেই মোটরবাইক ঘিরেই ধাঁধায় পড়েছেন গোয়েন্দারা। কেন? রবিবার বিকেলে, মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসার পাশেই পড়ে থাকা একটি ন্যানো গাড়ির নম্বর প্লেটের সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে কবিরুলের সেই হিরো-হন্ডা স্প্লেন্ডার নম্বর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৩

আটপৌরে পাকা বাড়িটার উঠোনে ধুলোয় মোড়া লাল মোটরবাইক। পিছনের নম্বর প্লেট থেকে কাদা মাটির প্রলেপটা ধুয়ে দিলে জ্বলজ্বল করছে নম্বর, ডব্লিউ বি ৫৮-এফ ৬৯৪৩।

লালগোলার রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে কবিরুল ইসলামের আট বছরের পুরনো সেই মোটরবাইক ঘিরেই ধাঁধায় পড়েছেন গোয়েন্দারা। কেন?

রবিবার বিকেলে, মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসার পাশেই পড়ে থাকা একটি ন্যানো গাড়ির নম্বর প্লেটের সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে কবিরুলের সেই হিরো-হন্ডা স্প্লেন্ডার নম্বর। আজ, মঙ্গলবার সে রহস্য উদ্ধারে মুর্শিদাবাদের ওই প্রান্তিক গ্রামে আসছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

যা শুনে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গিয়েছেন কবিরুল। মধ্য ত্রিশের ওই যুবক বলছেন, “বাইকটাই তো ভরসা দাদা। লালগোলা বাজার থেকে মশলা কিনে ওটায় চড়েই গাঁয়ে গাঁয়ে ফিরি করি। পুলিশ এসে ওটাও কেড়ে নেবে?” দু’বছরের ছোট ভাই তাজেমুল। বাড়ির লাগোয়া মাঠে শীতের সব্জি উঠলে তা নিয়ে বাজারে বসেন। আফসোস যাচ্ছে না তাঁরও, “দাদা আর আমি ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে আট বছর আগে বাইকটা কিনেছিলাম। বাজারে সব্জি নিয়ে যেতে ওটাই ভরসা আমাদের।”

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সুতোয় জড়িয়ে গিয়েছিল মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসার নাম। বিস্ফোরণের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই সিআইডি-র কর্তারা সেখানে হানা দিলেও পাঁচিল ঘেরা সেই মাদ্রাসার পাশেই যে আধ ময়লা পলিথিনের চাদর দিয়ে ঢাকা একটি গাড়িও রয়েছে তা আর চোখে পড়েনি তাঁদের। রবিবার এনআইএ-এক অফিসাররা শিমুলিয়া পৌঁছেই ধুলো মলিন সেই পলিথিনের চাদর সরাতেই বেরিয়ে পড়ে কমলা রঙের ওই ন্যানো গাড়ি। গ্রামবাসীরা তাঁদের জানান, ওই গাড়িতেই ইউসুফ আর বোরহান ঘোরাফেরা করত। আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা বোরহানের স্ত্রী-ও থাকত শিমুলিয়ার ওই মাদ্রাসায়। ওই গাড়িতে তাকেও একাধিকবার সওয়ার হতে দেখেছেন গ্রামবাসীরা। তবে, এলাকার কারও সঙ্গেই পরিচয় তো দূরস্থান, গ্রামের মহিলারা জানান, বোরহানের ‘বিবি’র চেহারাই দেখেননি তাঁরা।

সেই গাড়ির নম্বর-নথির খোঁজ নিতে গিয়েই সোমবার গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গাড়িটির রেজিস্ট্রশন আদতে বহরমপুরের। বহরমপুরের আঞ্চলির পরিবহণ কর্তার দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ওই নম্বরটি আসলে একটি দ্বিচক্রযানের।

তা হলে কী করে একটি চার-চাকার গাড়ির নম্বর হল? মুর্শিদাবাদ জেলা পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “চার চাকা ও দু’চাকার গাড়ির নম্বর এক হতে পারে না। মুর্শিদাবাদের ওই মোটরবাইকের নম্বরটি জাল করেই শিমুলিয়ার গাড়িটি চালানো হচ্ছিল বলে সন্দেহ।”

রাধাকৃষ্ণপুরের সামনে দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া পিচ রাস্তাটা সটান চলে গিয়েছে পদ্মা-সীমান্তে। নদীর ও পারে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা। সীমান্তের শেখালিপুর, জঙ্গিপুরের মতো গ্রামে মশলা নিয়ে দিনভর ফেরি করে বেড়ান কবিরুল। গ্রামবাসীরাও তাঁকে ‘মশলা কবিরুল’ বলেই চেনেন। নিজেদের সামান্য জমি থেকে মরসুমি সব্জি নিয়ে ফেরি করেন তাজেমুল। তাঁদের বাবা আনসার আলি বলেন, “বছর আটেক আগে দুই ভাই মিলে ৩০ হাজার টাকায় বাইকটা কিনেছিল।” লালগোলা বাজারের কাছেই জনৈক উজ্জ্বলের গ্যারাজ। সেখান থেকেই সেকেন্ড হ্যান্ড বাইকটি কেনেন তাঁরা।

তাজেমুল জানান, মোটরবাইকের কাগজপত্র সব রয়েছে। তড়িঘড়ি খাটের তলা থেকে পুরনো ট্রাঙ্ক খুলে বহরমপুরে জেলা পরিবহণ দফতরের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাগজপত্রও বের করে দেখান তিনি। তারপর সন্ত্রস্ত গলায় বলেন, “গাড়িটা কি পুলিশে টেনে নেবে দাদা?” গাড়ির আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন কবিরুল। বলছেন, “বড় কাজের জিনিস ছিল। রাস্তায় কখনও বেইমানি করেনি, কখনও খারাপ হয়নি জানেন।”

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ওই হদ্দ গ্রামে গিয়ে কী বলেন, তার উপরেই নির্ভর করছে মোটরবাইকটির ভবিষ্যৎ।

(উপরে) কবিরুল ইসলামের মোটরবাইক (নীচে) এবং সেই ন্যানো গাড়ি। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায় এবং অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

mangalkot khagragarh blast shimulia nia kobirul islam latest news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy