Advertisement
E-Paper

নোট-বন্দির ফাঁড়া সামলেই স্বস্তি বইমেলার

কাগজ সেঁটে বড় বড় হরফে লেখা ক’টা কথা! ‘বই না-কিনে সেল্‌ফি তুলবেন না’। বইমেলার লিটলম্যাগ প্যাভিলিয়নের একটি টেবিলের পিছনে এই আপ্তবাক্যটাই কি শেষ কথা বলে গেল? রবিবার, ১১ দিনের মেলা শেষে জবাবটা খুব সহজে দেওয়া যাচ্ছে না।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩১
বইমেলার শেষ দিনে। রবিবার মিলন মেলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ।

বইমেলার শেষ দিনে। রবিবার মিলন মেলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ।

কাগজ সেঁটে বড় বড় হরফে লেখা ক’টা কথা! ‘বই না-কিনে সেল্‌ফি তুলবেন না’। বইমেলার লিটলম্যাগ প্যাভিলিয়নের একটি টেবিলের পিছনে এই আপ্তবাক্যটাই কি শেষ কথা বলে গেল?

রবিবার, ১১ দিনের মেলা শেষে জবাবটা খুব সহজে দেওয়া যাচ্ছে না। শেষ বিকেলে মেলায় দেদার আড্ডা ও নিজস্বী-চর্চার মেজাজ। তবে স্টলের বাইরে সেই লম্বা লাইন কই? খানিক ব্যতিক্রম অবশ্য আনন্দ পাবলিশার্স। তবে গিল্ড-কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় (পত্রভারতী) ও সুধাংশু দে (দে’জ) গম্ভীর মুখে বললেন, ‘‘২০-২৫ লক্ষের ভিড় হলেও বিক্রি ১৫-২০% কম!’’ গিল্ডেরই পদস্থ কর্তা রূপা-র রাজু বর্মণও বলছেন, গত কয়েক বার বইমেলায় লাফিয়ে ১০-১২% লাভ বাড়ছিল। সেটা এ বার নেই!’’

নোট-বন্দির পটভূমিতে তবু এই পারফর্ম্যান্সটুকুও নেহাত খারাপ বলে ধরছেন না উদ্যোক্তারা। শেষ দিনেও আগন্তুকদের মধ্যে নোট-আকাল নিয়ে অভিযোগ নেই। অথচ মেলায় ছোটখাটো স্টলে পেটিএম বা কার্ডের সংস্থান করেও ‘প্লাস্টিক মানি’র লেনদেন ঠোক্কর খেয়েছে। ইতি-উতি এটিএম বসিয়ে বা নগদের ভ্যান নামিয়ে চেষ্টার কসুর করেননি গিল্ড কর্তৃপক্ষ। তাতেই যা মুখরক্ষা।

বইমেলা শুরুর আগে কলেজ স্ট্রিটে গেল-গেল রব উঠেছিল। জেলায় জেলায় সব বইমেলায় ধারাবাহিক ভাবে ৪০-৫০% মন্দা যাচ্ছিল। সে দিক দিয়ে কলকাতা বইমেলার ‘ক্ষতি’টা সহনীয় বলেই ধরছেন গিল্ড-কর্তারা। বইমেলায় কী ঘটবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় তাঁরা খোদ রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেছিলেন। কোনও কোনও বিক্রেতা এখন বলছেন, ‘‘নাহ্‌ নোট-বন্দির ফাঁড়া কাটারই সঙ্কেত মিলল!’’ ফিউচার পাবলিকেশন-এর অমিত অগ্রবাল যেমন বলছেন, ‘‘বই তো আলুপেঁয়াজের মতো না-কিনলে চলবে না এমন নয়, তবু মেলায় আগের বারের ব্যবসা ধরে রাখতে পারাটা ভাল লক্ষণই বলতে হবে।’’

কিন্তু নতুন বই সাড়া ফেলল, না বরাবরের জনপ্রিয় কিছু বই-ই রাজত্ব করে গেল এই মেলায়? প্রতিক্ষণ-এর প্রিয়ব্রত দেব বলছেন, আমাদের বরাবরের টেক্কা রবীন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথ-গগনেন্দ্রনাথের ছবির বই-ই সামাল দিয়েছে। দামি বই, তাই রক্ষে। নতুন বই কেনার টান ফিকে!’’ আনন্দ-এর স্টলে দেখা গেল, চিকিৎসা বিজ্ঞানকোষ-এর মতো নতুন মোটা বইয়ের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ ধরনের পাঠকের বই হয়েও তা সাড়া ফেলেছে।

‘উদার আকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ফারুখ আহমেদ বা ‘রাবণ’-এর সোমাইয়া আখতারের মতো কেউ কেউ বিক্রি কমার কথা বলছেন। মনকলম-এর শীর্ষেন্দু দত্তের ধারণা, চাহিদা একই রকম। কলিকাতা লেটার প্রেস-এর পলাশ বর্মণ বা নতুন প্রকাশক ঋত এবং বই-চিত্রের ঐতরেয় সরকারও বলছেন, সিরিয়াস সাহিত্য বা বিদেশি ক্লাসিকচর্চার বই নিয়ে কাজ করলেও মেলা ফেরায়নি। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রিন্ট-অন-ডিম্যান্ড কেতায় অল্পস্বল্প করে ছেপেই অনেকে খরচা তুলছেন। স্টলের ভিতরে উটকো ভিড় কম। খবর নিয়ে আসা দীক্ষিত পাঠকেরই আনাগোনা। এর মধ্যেই মেলার শেষের ঘণ্টা বাজল রাত ন’টায়। পরের বারের থিম-দেশ ফ্রান্সের অতিথিরা দারুণ সব চমকের আশ্বাস দিলেন। পরের বছর মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি।

তবে সেটা মিলন মেলাতেই হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার ছোঁয়া রয়েছে। মিলন মেলার মাঠ ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা প্রাঙ্গণের আদলে সাজা হবে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি। সে ক্ষেত্রে আগামী বছর সময়মোত মাঠ মেলা মুশকিল। এ নিয়ে আশঙ্কার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন গিল্ড কর্তারা। এ দিন রাতে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় মেলায় বলেন, কলকাতা বইমেলার ঐতিহ্য অটুটই থাকবে।

Book Fair Kolkata Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy