Advertisement
E-Paper

গরু পাচার: বিপুল সম্পত্তির হদিস পেল সিবিআই

বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারের সম্পত্তি দেখেও চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩৩
রাজ্যের গরু পাচার চক্রের পাণ্ডা এনামুল হক (বাঁ দিকে) এবং সল্টলেকে বিএসএফ আধিকারিক সতীশ কুমারের বাড়ি সিল করছেন সিবিআই আধিকারিকরা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের গরু পাচার চক্রের পাণ্ডা এনামুল হক (বাঁ দিকে) এবং সল্টলেকে বিএসএফ আধিকারিক সতীশ কুমারের বাড়ি সিল করছেন সিবিআই আধিকারিকরা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

গরু পাচার চক্রে বুধবার দিনভর তল্লাশিতে উঠে আসা তথ্য দেখে বিস্মিত সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারেরাই। তাঁদের দাবি, গরু পাচারের টাকায় এক দিকে যেমন সতীশ কুমারের মতো বিএসএফ-কর্তা বিপুল সম্পত্তি করেছেন, তেমনই এনামুল হকের মতো পাচারকারীরা অজস্র বেনামি সংস্থা খুলে কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন চালিয়ে গিয়েছেন। প্রথম দিনের তল্লাশির পরে গরু-সোনা-মাদক পাচারের লতায়-পাতায় জড়িয়ে থাকা সম্পর্কের হদিস মিলেছে বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি। সেই সূত্রে একে একে এই চক্রের সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা।

২০১৮-র শেষের দিকে সিবিআই তদন্তের ‘জেনারেল কনসেন্ট’ রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে গত দু’বছর সিবিআই এ রাজ্যে কোনও নতুন মামলা নথিভুক্ত করতে পারেনি। কিন্তু গত সাত দিনে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি বিশ্বভারতীয় প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা। অন্যটি গরু পাচারের মামলা। সিবিআই কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি এক রায়ে বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় সিবিআই-কে রাজ্য সরকারের সম্মতি নিতে হবে না। সেই সূত্রেই নতুন দু’টি মামলা করা হয়েছে।

২১ সেপ্টেম্বর গরু পাচার মামলাটি নথিভুক্ত হয়। ২২ সেপ্টেম্বর আসানসোল আদালত থেকে তল্লাশির অনুমতি নেয় সিবিআই। পরের দিন, বুধবার চলে তল্লাশি। এনামুলের কলকাতার কয়েকটি ঠিকানা, আস্তানা এবং মুর্শিদাবাদের কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। সিবিআইয়ের দাবি, এনামুল গরু পাচারের পাশাপাশি চাল কল, বাংলাদেশে চাল-পেঁয়াজ রফতানি, আবাসন ও নির্মাণ শিল্প, পাথর খাদান, বালির কারবারে যুক্ত। তার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ ডলার রাখা ছিল। এ ছাড়া নামে-বেনামে বহু সম্পত্তির হদিস মিলেছে। সিবিআই কর্তারা জানাচ্ছেন, দু’একটি অ্যাকাউন্টে এই পরিমাণ টাকা থাকলে এনামুল বাহিনীর হাতে কী পরিমাণ নগদ রয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়।

আরও পড়ুন: দশ টাকার নোটে হিসেব লিখে হাতবদল হত গরু

অন্য দিকে, বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারের সম্পত্তি দেখেও চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের। তাঁর সল্টলেকে একটি বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া, গাজিয়াবাদে তিনটি বাড়ি, দু’টি জমির প্লট, অমৃতসরে বাগানবাড়ি, মুসৌরিতে হোটেল, রায়পুর ও শিলিগুড়িতেও জমি-বাড়ি রয়েছে। বুধবার সব জায়গাতেই সিবিআই তল্লাশি চালিয়েছে। নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। সল্টলেকের বাড়িটি তল্লাশির সময় কার্যত কোনও মালিক পাওয়া যায়নি। সেই কারণেই বাড়িটি সিল করে দিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন,যাঁর বাড়ি তিনি নিশ্চয় তদন্তকারীদের কাছে কাগজপত্র দেখিয়ে বাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন। পাচারের নেটওয়ার্কের এমন অনেক রাঘববোয়ালের বেনামি সম্পত্তি সিবিআই হাতে পেয়েছে। বোলপুরের আশপাশে এমন ৫০টিরও বেশি ‘সম্পত্তি’ সিবিআই দখল নিয়ে নিতে পারে বলেও জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ২০১৭-য় এনামুল ৭ কোটি টাকা আয়কর জমা দিয়েছিলেন!

এক সিবিআই কর্তা জানাচ্ছেন, সতীশ কুমারের মতো সাধারণ বিএসএফ অফিসারের সম্পত্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বড় মাথাদের টান মারলে কী বেরোতে পারে। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে সিবিআই।

এ দিকে, গরু পাচার নিয়ে এ দিন রাজ্যের শাসক দলকে বিঁধেছেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। গরু পাচারের টাকা জঙ্গিদের হাতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে দুর্গাপুরে তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ, মাওবাদ এ সবের জন্য মমতাজি ও তাঁর সরকার দায়ী।’’

Cattle Smuggling CBI BSF Cow
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy