Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Bengal Recruitment Case

টেট: ফলাফলের ভুয়ো ওয়েবসাইটও বানিয়ে ফেলেছিলেন কুন্তলেরা! দাবি সিবিআই চার্জশিটে

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নাম এবং লোগো-সহ ওই ওয়েবসাইটটি ছিল একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট। টাকার বিনিময়ে চাকরি চাওয়া অযোগ্য পরীক্ষার্থীদের ওই নাম দেখিয়েই টাকা তুলতেন কুন্তলেরা।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ১৭:৩৬
Share: Save:

চাকরিপ্রার্থীদের প্রতারণার নানা রকম ফিকির তৈরি করেছিলেন কুন্তল ঘোষ এবং সহযোগীরা। এর মধ্যে একটি হল ভুয়ো ওয়েবসাইট। নিয়োগ মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাদের চার্জশিটে জানিয়েছে সেই ওয়েবসাইটের কথা। তারা জানিয়েছে, এই ওয়েবসাইটকে অস্ত্র বানিয়েই বহু চাকরিপ্রার্থীকে বোকা বানিয়েছেন কুন্তলেরা।

চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়া থেকে শুরু করে চাকরি প্রাপকদের তালিকায় প্রার্থীদের নাম তোলা— সবটাই নিখুঁত ভাবে করতেন কুন্তল ও তাঁর সহযোগীরা। টেটের যে সমস্ত অযোগ্য চাকরিপ্রার্থী কুন্তলদের টাকা দিতেন, তাঁরা ‘ডব্লুবি টেট রেজাল্টস ডট কম’ নামে ওয়েবসাইেটে নিজেদের রেজাল্ট দেখতেও পারতেন। সেখানে প্রকাশিত টেট উত্তীর্ণদের তালিকায় নাম থাকত তাঁদের। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটে নাম থাকলেও চাকরি পেতেন না ওই প্রার্থীরা। কারণ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নাম এবং লোগো-সহ ওই ওয়েবসাইটটি ছিল একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট। টাকার বিনিময়ে চাকরি চাওয়া অযোগ্য পরীক্ষার্থীদের ওই নাম দেখিয়েই টাকা তুলতেন কুন্তলেরা। কুন্তল এই ওয়েবসাইটের নাম এজেন্টদের পাঠাতেন। এজেন্টরা পাঠাতেন চাকরিপ্রার্থীদের। অথচ পর্ষদের ওয়েবসাইটে টেট উত্তীর্ণদের যে বৈধ তালিকা প্রকাশিত হত, তাতে কখনওই নাম থাকত না এই চাকরি প্রার্থীদের। ফলে চাকরি ‘পেয়ে’ও পাওয়া হত না তাঁদের।

সিবিআই তাদের চার্জশিটে জানিয়েছে, এই চাকরিপ্রার্থীদের জন্য ভুয়ো ইন্টারভিউয়েরও ব্যবস্থা করতেন কুন্তলেরা। প্রথমে donotreply@prim-tet.in নামে একটি ইমেল থেকে জানানো হত নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। তার পরে wbbperegov@gmail.com থেকে আরও একটি ইমেল পাঠিয়ে ডাকা হত কাউন্সেলিংয়ের জন্য। কলকাতায় প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের দফতরে আয়োজন করা হত ওই অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের ভুয়ো কাউন্সেলিংয়ের। যদিও সিবিআই তাদের চার্জশিটে জানিয়েছে, ওই অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কোনও রীতিমাফিক ইন্টারভিউ বা কাউন্সেলিং হয়নি সেখানে। ওই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের নথি জমা নিয়ে নাম সই করিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে কলকাতা প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কার্তিকচন্দ্র মান্নার সঙ্গেও কথা বলেছিল সিবিআই। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর জ্ঞাতার্থে এমন কোনও কাউন্সেলিং হয়নি কাউন্সিলের দফতরে। তবে একই সঙ্গে তিনি সিবিআইকে জানিয়েছেন, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১০ মার্চ এই ধরনের কোনও কাউন্সেলিং হয়েছিল কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি।

সিবিআই তাদের চার্জশিটে চাকরিপ্রার্থীদের প্রতারণা করা নিয়ে আরও অনেক রকম দাবি করেছে। তারা জানিয়েছে, এই ভাবে প্রতারণা চলেছে ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা ছ’বছর। সিবিআই চার্জশিটে দাবি, কিছু কিছু চাকরিপ্রার্থীকে টোপ দিতেন কুন্তলরা এমনও বলতেন যে, প্রশ্নপত্রে ছ’টি ভুল প্রশ্ন ছিল। হাই কোর্টে প্রার্থী আবেদন করলেই ওই ছ’টি প্রশ্নের প্রাপ্য নম্বর তাঁরা পেয়ে যাবেন। তাতেই তাঁদের নম্বর বেড়ে যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য উপায়ও ছিল চাকরিপ্রার্থীদের ফাঁদে ফেলার জন্য। এমনই দাবি করা হয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Recruitment Case Kuntal Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE