বিচার ভবনে কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কুণাল ঘোষ প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তদন্তকারীরা জরুরি মনে না-করায় সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস সংক্রান্ত মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এখনই গোপন জবানবন্দি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। যদিও সূত্রের ইঙ্গিত, সারদা- কেলেঙ্কারির অন্য মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কুণালের গোপন জবানবন্দির প্রয়োজন সিবিআইয়ের পড়তে পারে।
মঙ্গলবার বিচার ভবনে সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের সামনে সারদা ট্যুরস মামলায় অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও কুণাল ঘোষকে হাজির করানো হয়েছিল। তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল কোর্টকে জানান, বিচারক নির্দেশ দিলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে পারেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুণাল আদালতে বলেছিলেন, তদন্তের স্বার্থে তিনি সিবিআই-কে আরও কিছু তথ্য দিতে চান, এবং সিবিআই কর্তারা যেন জেলে গিয়ে তাঁর থেকে তথ্যগুলি নিয়ে আসেন। সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার জেলে গিয়ে তাঁর সেই জবানবন্দি নথিভুক্ত করিয়ে এনেছেন বলেও সিবিআই-কোর্টকে এ দিন জানান কুণাল।
কুণালের বক্তব্য শুনে বিচারক সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার (আইও)-এর কাছে জানতে চান, কুণালের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার দরকার রয়েছে কি না। তদন্তকারী অফিসার বিচারককে জানান, তাঁরা এখনই মনে করছেন না যে, সারদা ট্যুরস মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কুণাল ঘোষকে দিয়ে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর কোনও প্রয়োজন রয়েছে। বিচারক নির্দেশ দেন, অভিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেবেন কি না, সংশ্লিষ্ট আইও-ই তা ঠিক করবেন। যখন সিবিআই প্রয়োজন বোধ করবে, তখন সেটা হবে। বস্তুত সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তপর্বে কুণাল ঘোষের গোপন বয়ান সিবিআইয়ের বিলক্ষণ প্রয়োজন হতে পারে বলে তদন্তকারী-সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
ব্যাঙ্কশাল কোর্টের এক আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে এ দিন বিচার ভবনেও আইনজীবীদের কর্মবিরতি ছিল। অভিযুক্তেরা তাই বিচারকের অনুমতি নিয়ে নিজেদের বক্তব্য নিজেরা পেশ করেন। সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারও তা-ই করেছেন। নিজের জামিনের আর্জি জানিয়ে কুণাল আদালতকে বলেন, সারদা ট্যুরস মামলায় তিনি ৮২ দিন জেলবন্দি। তদন্তে প্রভাব খাটাতে পারেন এই আশঙ্কায় সিবিআই বারবার তাঁর জামিনের বিরোধিতা করছে। কিন্তু কুণালের দাবি: সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই-তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আগে, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তিনিই সারদা-কাণ্ডে সিবিআই-তদন্ত চেয়েছিলেন। “আমি বরাবরই চেয়েছি, সিবিআই ঠিকঠাক তদন্ত করুক। তাই তদন্তে আমি প্রভাব খাটাতে পারি, এমন আশঙ্কা অমূলক।” সওয়াল করেন কুণাল।
এবং তাঁর অভিযোগ, “তদন্তে যাঁরা প্রভাব খাটাতে পারেন, তাঁরা জেলের বাইরে রয়েছেন।” প্রসঙ্গত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতে কুণাল বলেছিলেন, “যাঁরা সারদার কাছে সুবিধা নিয়েছেন, তাঁরা বাইরে পুজোর উদ্বোধন করে বেড়াচ্ছেন! আর আমি জেলে বসে ঢাকের আওয়াজ শুনব, এটা হতে পারে না।” সেই অভিযোগের পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি আদালতে কুণাল এ দিন যুক্তি দেন, তিনি বেঙ্গল মিডিয়া সংস্থায় সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের সঙ্গে সংস্থার আর্থিক বিভাগের যোগাযোগ ছিল না। তিনি সারদার টাকা সরিয়েছেন সিবিআইয়ের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। কুণালের এ-ও দাবি, সারদার থেকে বেঙ্গল মিডিয়া বিজ্ঞাপন বাবদ ৪ লক্ষ টাকা পায়।
সারদা ট্যুরস মামলার অপর অভিযুক্ত সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনও এ দিন সিবিআই-কোর্টে জামিনের আবেদন পেশ করে জানান, এক বছর আট মাস হল তিনি জেলবন্দি। অথচ সিবিআই তাঁকে জেলে গিয়ে কোনও জেরা করেনি। “আমি বরাবর চেয়েছি, আমার যাবতীয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে আমানতকারীদের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক।” দাবি করেন সুদীপ্ত। দেবযানী তাঁর জামিনের আবেদনে জানান, চুরাশি দিন ধরে তিনি কারাবাস করছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে মামলার চার্জশিট পেশ না-হলে তিনি জামিন পাওয়ার অধিকারী। অন্য দিকে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার আদালতে আবেদন জানান, অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানো হোক। দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পরে বিচারক সুদীপ্ত-দেবযানী-কুণালের জামিনের আর্জি খারিজ করে দেন। তাঁদের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই কোর্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy