মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র
মহুয়া মৈত্রের করিমপুরের বাড়িতে ঢুকলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। শনিবার রাতে সিবিআইয়ের পাঁচ-ছ’জনের একটি দল কৃষ্ণনগরের বহিষ্কৃত সাংসদ তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়ার বাড়িতে ঢোকে। বাড়ির বাইরে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
শনিবার দুপুরেই নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ কার্যালয়ে হানা দিয়েছিল সিবিআই। শুধু তা-ই নয়, ওই কার্যালয়ের পিছনে মহুয়ার দলীয় দফতরেও পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে কৃষ্ণনগরের সিদ্ধেশ্বরীতলায় যেখানে মহুয়ার সাংসদ কার্যালয় রয়েছে, সেখানে গিয়েছেন সিবিআইয়ের পাঁচ সদস্যের একটি দল। বাড়ির বাইরে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও। ওই সময় তল্লাশি শুরু হয়, পিছনের দলীয় দফতরেও। এই দফতর থেকে মহুয়া নির্বাচনী কাজকর্ম পরিচালনা করতেন বলে জানা গিয়েছে। সিবিআই সূত্রে জানা যায়, এ বার তাদের গন্তব্য মহুয়ার করিমপুরের বাড়ি। সেই মতোই শনিবার রাতের দিকে করিমপুরে মহুয়ার ভাড়াবাড়িতে পৌঁছে গেলেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
কৃষ্ণনগরের সিদ্ধেশ্বরীতলায় মহুয়ার যে সাংসদ কার্যালয়ে তল্লাশি চলছে, সেখানে মহুয়া প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখভাল করলেও খুব একটা বসবাস করতেন না বলে জানা গিয়েছে। ওই সূত্রেই জানা যায়, অধিকাংশ সময় তিনি থাকেন করিমপুরের বাড়িতে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে কৃষ্ণনগরের সাংসদ হওয়ার আগে করিমপুরের বিধায়ক ছিলেন মহুয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালেই সিবিআইয়ের একটি দল আলিপুরে ‘রত্নাবলী’ নামের একটি আবাসনে গিয়েছেন। আরও জানা যায়, সেখানে ন’তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন মহুয়ার বাবা দীপেন্দ্রলাল মৈত্র।
‘টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন’কাণ্ডে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে গত ১৯ মার্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন লোকপাল। বরখাস্ত হওয়া তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে বর্ণনা করা হয় লোকপালের নির্দেশিকায়। এর পর সিবিআইয়ের তরফে মহুয়ার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের হয়।
মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ওই অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি দাবি করেন, দুবাইয়ের শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন মহুয়া। পরিকল্পনামাফিক সংসদে ‘নিশানা’ করেন শিল্পপতি গৌতম আদানিকে। অভিযোগ, সবটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য। এই অভিযোগ জানিয়ে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে বরখাস্ত করার দাবি তোলেন বিজেপি সাংসদ। তার আগে মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাই-এর বিভিন্ন অভিযোগে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল।
অন্য দিকে, মহুয়া প্রথম থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। যদিও শিল্পপতি হীরানন্দানি নিজে একটি হলফনামা দিয়ে জানান, মহুয়ার সংসদের লগ ইন আইডি জেনে তাতে প্রশ্ন টাইপ করতেন তিনি। কিন্তু ঘুষের অভিযোগ মানেননি। নিজের লগ ইন আইডি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ স্রেফ উড়িয়ে দেন মহুয়াও। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর বক্তব্য না শুনেই লোকসভার এথিক্স কমিটি তাঁকে একতরফা ভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত লোকসভায় পাশ হয়ে যায়। এর পর তাঁর সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মহুয়া। সম্প্রতি সেই মামলায় শীর্ষ আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে লোকসভার সচিবালয়। সুপ্রিম কোর্টের নোটিসের উত্তরে গত ১২ মার্চ লোকসভার সচিবালয় জানিয়েছে, সংবিধানের ১২২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনসভার অভ্যন্তরীণ কর্মপদ্ধতিতে বিচার বিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy