Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Bengal Recruitment Case

‘৯/১১-র শুনানি’ হলই না বিচারপতির এজলাসে! ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’ বদলে ‘বিবেকানন্দ’

নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় সিবিআইয়ের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ১১ সেপ্টেম্বর, আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙে পড়ার দিনই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল সিবিআইকে।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৯
Share: Save:

কথা ছিল, ৯/১১-র বর্ষ পূরণেই ভেঙে ফেলা হবে বাংলার ‘নিয়োগ দুর্নীতির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হবে সেই ভাঙনের শুরুয়াৎ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব হিসাব গেল গুলিয়ে। সোমবার ঐতিহাসিক ১১ সেপ্টেম্বরে হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বসল ঠিকই। কিন্তু দুর্নীতির মিনারে বিচারের শক্তিশেল বিঁধল না। যার জন্য অধীর অপেক্ষায় বসেছিলেন নিয়োগ মামলার ভুক্তভোগীরা।

ছ’দিন আগে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় সিবিআইয়ের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ঐতিহাসিক ১১ সেপ্টেম্বর, আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙে পড়ার দিন দুপুরেই সেই রিপোর্ট নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল সিবিআইকে। তারিখটির মাহাত্ম্য মাথায় রেখেই সম্ভবত সে দিন বিচারপতিকে সিবিআই বলেছিল, ‘‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সমান বিশাল দুর্নীতির খতিয়ান নিয়ে আমরা হাজির হব ১১ সেপ্টেম্বর।’’ শুনে বিচারপতিও পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘দুর্নীতি যদি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সমান হয়, তবে সেটা ভেঙে ফেলা দরকার!’’ অতঃপর ১১ সেপ্টেম্বর বিচারপতির এজলাসে শুনানিতে কী হয় তা নিয়ে দানা বেঁধেছিল কৌতূহল। কিন্তু সোমবার সেই কৌতূহল না মেটানোর সিদ্ধান্ত নিল সিবিআই নিজেই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে তারা ওই রিপোর্ট আপাতত পেশ করতে পারছে না।

কেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করেনি সিবিআই। তবে জানিয়েছে, রিপোর্ট তারা দেবে। বিচারপতি যে বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেছিলেন, সে সংক্রান্ত রিপোর্ট তারা জমা দেবে মঙ্গলবার। তবে সেই রিপোর্ট হবে সংক্ষিপ্ত। ছ’দিন আগে যে ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সমান দুর্নীতির খতিয়ান’ পেশ করার দাবি সিবিআই করেছিল, তার সঙ্গে আকারে বা ব্যাপকতায় এই রিপোর্টের কোনও সম্পর্ক নেই।

তা হলে ‘বিশাল দুর্নীতির খতিয়ানের’ কী হবে? নিজেদের দাবি থেকে সরে আসা সিবিআই যুক্তি দিয়েছে, ‘‘আজকের দিনটি কেবল ধ্বংসের দিন নয়। আজকের দিনে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোয় বক্তৃতাও করেছিলেন।’’ সিবিআয়ের এই যুক্তিতে স্বাভাবিক ভাবেই সন্তুষ্ট হননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

সিবিআইয়ের বক্তব্য শোনার পর সোমবার তাদের আইনজীবীকে বিচারপতি পাল্টা বলেন, ‘‘আপনাদের তো কিছু একটা করতে হবে। এমনিতেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকায় তদন্তের গতি শ্লথ হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভাবছেন কী হচ্ছে? শেষমেশ কী হয় তা দেখার অপেক্ষা করছেন সবাই।’’

বিচারপতির এই মন্তব্যের জবাবে অবশ্য সেই পুরনো দাবিই নতুন করে বলেছে সিবিআই। তাদের আইনজীবী জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের হাতে তথ্য বা নথির কমতি নেই। তদন্তও এগোচ্ছে। সাধারণ মানুষ তদন্তের সেই অগ্রগতি শীঘ্রই দেখতে পাবেন। সিবিআইয়ের আইনজীবীর কথায়, ‘‘শুধু এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মামলা নয়, প্রাথমিকের নিয়োগেও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য কী ভাবে জড়িত, তা নিয়ে রিপোর্ট দিয়ে জানাব আমরা। প্রাথমিকের তথ্য এবং নথি নষ্ট করতে কী ভাবে মন্ত্রী এবং সচিবের উপর প্রভাব খাটানো হয়েছে, তা মঙ্গলবার ওই সংক্ষিপ্ত রিপোর্টেই জানানো হবে।’’

ফলে সোমবার প্রাথমিকের মামলার যে রিপোর্ট কলকাতা হাই কোর্টে জমা পড়ার কথা ছিল, তা পড়েনি। অন্য দিকে, হাই কোর্টের এক আইনজীবীর মৃত্যু হওয়ায় আইনজীবীরা উপস্থিত থাকবেন না বলে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। ফলে প্রাথমিকের ওই মামলার শুনানিও হয়নি সোমবার। আদালত জানিয়েছে, মঙ্গলবারই মামলাটি শুনবেন বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Justice Abhijit Gangopadhyay 9/11 Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE