Advertisement
E-Paper

হিসেব চেয়ে নোটিস তৃণমূলকে

চার দিনের মধ্যে দলের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসেব দাখিল করার জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে নোটিস পাঠাল সিবিআই। স্পিড পোস্ট এবং ই-মেল দু’টি মাধ্যমেই ওই নোটিস সোমবার তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তরফে এমন চিঠি পাওয়ার পরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৫

চার দিনের মধ্যে দলের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসেব দাখিল করার জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে নোটিস পাঠাল সিবিআই। স্পিড পোস্ট এবং ই-মেল দু’টি মাধ্যমেই ওই নোটিস সোমবার তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তরফে এমন চিঠি পাওয়ার পরে তীব্র ক্ষো‌ভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে এ দিন দলের নেতাদের তিনি জানিয়েছেন, তিনি দলের চেয়ারপার্সন। তাই সুব্রত বক্সী নন, সিবিআই ডাকলে তিনিই যাবেন। মমতার কথায়, ‘‘সিবিআই আমাকে ডাকুক। আমি যাব।’’ তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসেব তিনিই দেবেন সিবিআইকে।

সিবিআইয়ের চিঠিতে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী বিষয়টি নিয়ে দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মমতার বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখার কাজ অর্থ মন্ত্রক বা আয়কর দফতরের। এটা সিবিআইয়ের এক্তিয়ারের বাইরে। এর আগে যে দিন সিবিআই তৃণমূলকে চিঠি পাঠিয়েছিল, সে দিনই দীনেশ ত্রিবেদী ওই চিঠির প্রতিলিপি নিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তৃণমূল নেতাদের দাবি, জেটলিও সে দিন ত্রিবেদীকে বলেছিলেন এটি আয়কর দফতরের বিষয়।

তৃণমূলের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, তারা মোটেই আয়কর দফতরের কাজ করছে না। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রক্রিয়ায় তৃণমূলকে নোটিস পাঠানো একটা রুটিন বিষয়। তদন্তের নিয়ম অনুযায়ী, কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে তার বক্তব্য জানতে হয়। যে হেতু মমতার ছবি সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন কিনেছেন বলে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, তাই এ বিষয়ে তৃণমূলের বক্তব্যও জানা দরকার। সে কারণেই তাদের নোটিস পাঠানো হয়েছে। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, এর মানে এই নয় যে, তৃণমূলকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষড়যন্ত্র রয়েছে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

যদিও এই ধরনের বক্তব্য মানতে নারাজ মমতা। তিনি বলেন, ‘‘১৮ এপ্রিল পুরভোট। রুটিন তদন্তের বিষয় হলেও তার ঠিক আগে সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে এই ধরনের নোটিস পাঠানো যথেষ্ট সুপরিকল্পিত। তাতেও অবশ্য তৃণমূলের কোনও অসুবিধা নেই। তৃণমূলের কর্মী, সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, কেউই বোকা নন। সিবিআই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছে, তা সবাই বুঝতে পারছেন।’’

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত ছবি বিক্রি ও অনুদান বাবদ ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসেব দাখিল করতে বলা হয়েছে তৃণমূলকে। আয়কর দফতর ও নির্বাচন কমিশনের কাছে দাখিল করা আয়-ব্যয়ের হিসেবে খতিয়ান-সহ আসল নথি, সিডির কপি জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির এক কর্তার কথায়, ‘‘আসল কপির সঙ্গে নকল যাচাই করা হবে। কারণ নকল কপির প্রতিলিপি বিকৃত করা হয়ে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আসল কপির প্রয়োজন রয়েছে। ওই নোটিসে তা জানানো হয়েছে।’’ সিবিআইয়ের এক শীর্ষকর্তার আরও বক্তব্য, ‘‘হিসেবের তথ্যে অসঙ্গতি ধরা পড়লে প্রাথমিক ভাবে অডিটরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার পর দলীয় নেতৃত্বকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’

সিবিআই সূত্রে খবর, শুধু ছবি বিক্রি নয়। আয়-ব্যয়ের সমস্ত হিসেবের উৎসের সঠিক বিবরণের প্রয়োজন রয়েছে। দলীয় সম্পত্তির মালিকানার হস্তান্তেরর বিষয়েও হদিস করা হবে। তথ্যে কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়লে আয়কর দফতরের সাহায্য নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আয়কর আইন অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ করা হবে। ছবি বিক্রির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা দলীয় তহবিলে জমা পড়েছে বলে শোনা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই সব বিক্রি হওয়া ছবির বাজার দরও যাচাই করা হবে। কোনও প্রভাবশালীর চাপে পড়ে কম মূল্যের ছবি বেশি দামে কিনতে কোনও ক্রেতা বাধ্য হয়েছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে ওই ক্রেতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিবিআই কর্তারা।

এ দিন সুনসানই ছিল তপসিয়ায় তৃণমূল ভবন। ভোট প্রচারে ব্যস্ত থাকায় তৃণমূল ভবনে নেতা-কর্মীর আনাগোনা কম। তার উপর সিবিআই চিঠি পাঠিয়েছে রটে যাওয়ায়, এ দিন কোনও নেতাই তৃণমূল ভবনমুখো হননি! সংবাদমাধ্যমকে আটকাতে ইএম বাইপাস লাগোয়া ভবনে ঢোকার গলিতে গার্ডরেল বসানো হয়েছিল। বিকেল চারটে নাগাদ সেখানে পৌঁছন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই সিবিআইয়ের চিঠি খুলে দেখেন বলে তৃণমূল ভবন সূত্রের খবর। পার্থবাবু সেখানে পৌঁছনোর ঘণ্টাখানেক আগে স্পিডপোস্টে চিঠিটি ভবনে আসে। ভবনে তখন হাতে গোনা জনাকয়েক কর্মী। ভবনের অফিসের এক কর্মী সই করে চিঠিটি নেন। পার্থবাবু আসার পরে তাঁকেই চিঠিটি দেন ওই কর্মীরা। ভবনের একতলায় যুব তৃণমূলের ঘরে পার্থবাবুর সঙ্গে কিছুক্ষণ আলোচনা সারেন বিজেপি থেকে দলে ফেরা মানস কর এবং দলীয় নেতা চিত্তরঞ্জন মণ্ডল।

পরে পার্থবাবু সিবিআইয়ের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেন। দলনেত্রীর মতো তিনিও দাবি করেন, ‘‘আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রথমে আয়কর দফতরে যায়। এটা নেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার আয়কর দফতরের। তার পর সেই হিসেব নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। কবে থেকে সিবিআই এর নিয়ন্ত্রক হল, বুঝতে পারছি না!’’ চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি পার্থবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে সিবিআই কী জানতে চেয়েছে, তা আমাদের কাছেই থাকুক।’’ তবে চিঠিটি দলের নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয় বলে তাঁর দাবি। পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘দলের কাছে চিঠি দিয়েছে। আমাদের দল স্বচ্ছ। সততার সঙ্গে চলে। কোনও কিছু গোপন করি না আমরা।’’ চিঠির বিষয় খতিয়ে দেখে দলগত ভাবে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তার জবাব দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিজেপির নির্দেশ মতো কাজ করায় সিবিআইয়ের পারদর্শিতা কমেছে বলেও মন্তব্য করেন পার্থবাবু।

তৃণমূলকে নোটিস পাঠানো নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, হিম্মত থাকলে সিবিআই নোটিস পাঠাক। এ বার মুখ্যমন্ত্রী সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।’’ তৃণমূলের নির্বাচনী তহবিল সংক্রান্ত ত্রিনেত্র কেলেঙ্কারির অভিযোগের প্রসঙ্গ এ দিন ফের তুলে রাহুলবাবুর কটাক্ষ, ‘‘উনি (মমতা) ব্যাঙ্ক ছাড়া টাকা আনেন! কোম্পানি ছাড়া তহবিল তৈরি করেন! পি সি সরকারও এমন ম্যাজিক করতে পারবেন না!’’ তৃণমূলকে ছেড়ে কথা বলেননি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। তৃণমূলকে সিবিআইয়ের নোটিস পাঠানো নিয়ে এ দিন কলকাতা জানার্লিস্ট ক্লাবের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বিমানবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলনেত্রী তো সততার প্রতীক! তাঁদের কেন আয়-ব্যয়ের হিসেব দিতে হবে!’’ তৃণমূলের মন্ত্রী কেন জেলে— এই প্রশ্ন তুলে বিমানবাবু বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনে তৃণমূলের দলীয় প্রার্থীদের ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এই টাকা কোথার থেকে পেয়েছিলেন, তার হিসেব দিতে হবে।’’ মমতাকে মাইকেলেঞ্জেলো বা মকবুল ফিদা হুসেনের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের ছবি হয়তো ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি হতো না! উনি বড় শিল্পী মানছি! কিন্তু কারা ওঁর ছবি কিনেছেন, কত টাকায় কিনেছেন, সেই টাকা কোথায় গিয়েছে, আয়কর দেওয়া হয়েছে কি না— এ সব হিসেবই দিতে হবে।’’

শুধু মাত্র তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের হিসেব কেন চাওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলে পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বিজেপি যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোট করল, সেই টাকা কোথা থেকে এল?’’ বিমান বসুর নামোল্লেখ না করে পার্থবাবু বলেন, ‘‘যে নেতা আজ মুখ খুলেছেন, তাঁরা যে ব্যাঙ্কে ১৬ কোটি টাকা রেখেছেন, সেই টাকার হিসেব চাওয়া হচ্ছে না কেন?’’ বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই সিবিআই পুরভোটের মুখে তৃণমূলকে হেনস্থা করছে, এই অভিযোগ করে পার্থবাবু বলেন, ‘‘প্রতিবার ভোটের আগে বিজেপি কেন্দ্রীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে কোনও না কোনও চিঠি ধরানোর চেষ্টা করছে।’’ এ রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে আক্রমণ করে পার্থবাবু বলেন, ‘‘সিদ্ধিনাথবাবুর বিমা নিয়ে কারবারের নাকি তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত কারা করছে, কোন পর্যায়ে রয়েছে তদন্ত, তা জানান না।’’

এই পরিস্থিতিতে মমতা দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক, পুরভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে আরও আগ্রাসী হয়ে আক্রমণ শানাবে তাঁর দল। দুই, বিজেপির রাজ্য নেতাদের দুর্নীতি খুঁজে বের করে প্রচারে নামবে তৃণমূল।

CBI trinamool Mamata Bandopadhyay Saradha scam Subrata Bakshi West Bengal tmc Partha Chattopadhyay abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy