বস্তুত এই প্রাপ্তির আড়ালে রাজনীতি-সমীকরণের মারপ্যাঁচও দেখছে প্রশাসনের একাংশ। এই মহলের মতে, রাজ্যসভায় কয়লা ও খনিজ বিল পাস করানোর ক্ষেত্রে তৃণমূল গোড়ায় বিরোধিতা করলেও পরে মোদী সরকারের পাশেই থেকেছে। কয়লাখনির আবেদন মঞ্জুর করে কেন্দ্র তারই প্রতিদান দিল। কেন্দ্রীয় কয়লা-সচিব অনিল স্বরূপ এ দিন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থার জন্য ৩৮টি খনি বণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ছ’টি গঙ্গারামচক, তারা, বড়জোড়, বড়জোড়া, কাস্তা ও পাচোয়াড়া। প্রথম পাঁচটি পশ্চিমবঙ্গে হলেও শেষটি ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে অবস্থিত।
এবং বিদ্যুৎ দফতর-সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের ওই পাচোয়াড়া খনিটি পাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার খুবই আগ্রহী ছিল। আগ্রহের কারণ, খনিটি থেকে আগামী পঁচিশ বছর কয়লা পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, পাচোয়াড়া খনি চেয়ে বিহার-ঝাড়খণ্ডও আবেদন করেছিল। শিকে ছিঁড়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই ভাগ্যে। মন্ত্রকের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একাধিক রাজ্যের আবেদন যাচাই করে তাঁরা শেষমেশ পশ্চিমবঙ্গের হাতেই খনিটি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে ঘোষণার মধ্যে রাজ্যসভায় বোঝাপড়ার ফলশ্রুতিরই ছায়া দেখছেন প্রশাসনের বিভিন্ন মহল।
ছ’টি কয়লা খনি থেকে কত কয়লা পাওয়া যেতে পারে?
নিগমের হিসেবে, শুধু পাচোয়াড়াতেই প্রায় ৪০ কোটি টন কয়লা মজুত রয়েছে। বড়জোড়ে রয়েছে ১১ লক্ষ টন, গঙ্গারামচকে ৮০ লক্ষ টন ও তারায় দেড় কোটি টন। বড়জোড়া ও কাস্তা অবশ্য নতুন খনি। সেখানকার মজুতভাণ্ডারের আন্দাজ পাওয়ার কাজ চলছে। উপরন্তু বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকে দেউচা-পাচামি খনি আগেই নিগমের হাতে এসেছে। আগামী দু-তিন বছরে সেখান থেকে কয়লা মিলবে। পাচামিতে ২১০ কোটি টন কয়লা মজুত রয়েছে। নিগমের এক কর্তার কথায়, “পাচোয়াড়া আর পাচামি হল আমাদের পাখির চোখ। ওই দু’টি থেকে পুরোমাত্রায় কয়লা উত্তোলন শুরু হলে আগামী কয়েক দশক পশ্চিমবঙ্গকে বিদ্যুতের কয়লা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।” নিগম স্থির করেছে, পাচোয়াড়া থেকে ফি বছর দেড় কোটি টন কয়লা তোলা হবে।
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, নিগমের অধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য এখন বছরে গড়ে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টনের মতো কয়লা লাগে। কোল ইন্ডিয়া দেয় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টন। বাকি ২০ লক্ষ টন জোগায় নিগমের বিভিন্ন খনি। “ছ’টি খনি হাতে আসায় এ বার কোল ইন্ডিয়ার উপরে নির্ভরতা অনেক কমানো যাবে” এ দিন আশা প্রকাশ করেছেন এক নিগম-কর্তা।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দু’শোর বেশি খনি বণ্টনের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেগুলো নতুন ভাবে বিলি করা হচ্ছে দু’টি পদ্ধতিতে দরপত্রের মাধ্যমে এবং আবেদনের ভিত্তিতে। শেষোক্ত পদ্ধতিটি শুধু সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।