Advertisement
E-Paper

আর্সেনিক-সুরাহায় ঘোষণা, তবু থাকছে চিন্তা

ঘোষণা হল বটে। কিন্তু সুরাহা কতটা হবে, তা নিয়ে চিন্তা রয়েই গেল।আর্সেনিক-ফ্লুওরাইড দূষণের মোকাবিলায় আগামী চার বছরে দেশের ২৮ হাজার জনপদে পরিস্রুত জল পৌঁছে দেওয়া হবে বলে বুধবার বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৭

ঘোষণা হল বটে। কিন্তু সুরাহা কতটা হবে, তা নিয়ে চিন্তা রয়েই গেল।

আর্সেনিক-ফ্লুওরাইড দূষণের মোকাবিলায় আগামী চার বছরে দেশের ২৮ হাজার জনপদে পরিস্রুত জল পৌঁছে দেওয়া হবে বলে বুধবার বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পের অধীনেই এই কাজ হবে।

পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ভূগর্ভস্থ জলকে ক্রমাগত দূষিত করে চলেছে আর্সেনিক ও ফ্লুওরাইড। তবে যে ভাবে নতুন নতুন এলাকায় এই দূষণের সন্ধান মিলছে, তাতে কেন্দ্রের এই ঘোষণা সমস্যার কতটা সমাধান করতে পারবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন আর্সেনিক গবেষকেরা।

গবেষকদের কারও কারও বক্তব্য, নব্বইয়ের দশক থেকেই বাজেটে ভূগর্ভস্থ জলদূষণ রুখতে অর্থ বরাদ্দ করে আসছে কেন্দ্র। নানা সময়ে নানা প্রকল্পের মধ্যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, কিন্তু আর্সেনিক পীড়িত মানুষের কাছে তার সুফল পৌঁছয়নি। অগভীর নলকূপ থেকে সেচের ফলে খাদ্যশস্যেও আর্সেনিক ঢুকতে শুরু করেছে।

আর্সেনিক দূষণ নিয়ে এ রাজ্যে সচেতনতার হাল যে কী, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় তার প্রমাণ পেয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। দেগঙ্গা ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের ১০৮০টি নলকূপের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তার মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশের জলে আর্সেনিকের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। আর্সেনিক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণারত এক প্রবীণ বিজ্ঞানীর মন্তব্য, ‘‘এত দিনে আর্সেনিক মোকাবিলায় কিছুই করতে পারেনি সরকার। যে সব প্রকল্পের ঘোষণা হচ্ছে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’

বর্তমানে এ রাজ্য-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আর্সেনিক দূষণ নিয়ে কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা চলছে। সেই মামলাতেও আর্সেনিক দূষিত এলাকায় পানীয় জলের সরবরাহের অভাবের প্রসঙ্গ উঠেছিল। তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের চাপানউতোরে বিরক্তি প্রকাশ করেছিল পরিবেশ আদালত।

ফ্লুওরাই়ড এক সময়ে বীরভূমের কিছু এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে মিলছিল। এখন তা পাওয়া যাচ্ছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এমনকী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কিছু এলাকাতেও। যে ভাবে নতুন নতুন এলাকায় ফ্লুওরাইডের দূষণ ছড়াচ্ছে তাতেও শঙ্কিত গবেষকেরা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের অধিকর্তা তড়িৎ রায়চৌধুরীর মতে, ‘‘এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলির মতো ভূগর্ভস্থ জলের উপর থেকেও নির্ভরতা কমাতে হবে।’’ তিনি জানান, বর্তমানে এ রাজ্যের ১১৭টি ব্লক আর্সেনিকের কবলে পড়েছে। সাতটি জেলার ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লুওরাইড মিলেছে।

অনেকে অবশ্য বলছেন, গত প্রায় তিন দশক ধরে আর্সেনিকের মোকাবিলা হচ্ছে। কিন্তু লাভ কতটা হয়েছে? বহু গ্রামেই এখনও শোধিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যায়নি। বহু গ্রামের নলকূপে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের কথা বলা হলেও তার মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার থেকে বেশি। জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, এ দেশে পানীয় জলে আর্সেনিক মাত্রা সর্বাধিক লিটারপ্রতি ০.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাত্রা ০.১ মিলিগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাত্রা মেনে চললে গ্রামাঞ্চলের বহু এলাকাতেই ভূগর্ভস্থ পানীয় জল খাওয়াই যাবে না! অথচ দেশে এমন বহু জায়গা রয়েছে যেখানে পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা ০.১ মিলিগ্রাম থেকে ০.৫ মিলিগ্রাম। তাই বিজ্ঞানীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভূগর্ভস্থ জলের বদলে এখনও কেন নদীর পরিস্রুত জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল না? রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, আর্সেনিক ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে স্বাভাবিক মাত্রা আরও কমিয়ে আনার চিন্তা চলছে।

Arsenic fluoride Researcher Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy