Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Seaport

তাজপুরে সমুদ্রবন্দরে না কেন্দ্রের, ক্ষুব্ধ মমতা

পশ্চিমবঙ্গকে দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর করার অনুমতি দিল না কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, তাজপুরে রাজ্য সরকার একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করতে চায়। বন্দর করতে গেলে প্রত্যেক রাজ্যকে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:০৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গকে দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর করার অনুমতি দিল না কেন্দ্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, তাজপুরে রাজ্য সরকার একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করতে চায়। বন্দর করতে গেলে প্রত্যেক রাজ্যকে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হয়। দিন কয়েক আগে কেন্দ্রীয় বন্দরমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী চিঠি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র তাজপুর বন্দরটি করার অনুমতি রাজ্যকে দিতে পারছে না। কলকাতা ও হলদিয়া দু’টি বন্দরের অবস্থা খুব খারাপ। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির করার প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলেই। সে সময়ে শিল্পমন্ত্রী নিরূপম সেন চিনে দেখে আসার পর সাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করার প্রস্তাব দেন। যাতে সায় দেয় কেন্দ্র। নিতিন গডকড়ীকে মমতা জানান, বিশেষজ্ঞেরা পশ্চিমবঙ্গের বন্দরগুলির পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলছেন, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের যা অবস্থা এবং যে ভাবে পলিমাটি জমেছে তাতে বন্দরগুলির প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থা। ওই বন্দরগুলির পুনরুজ্জীবন করতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তার বদলে নতুন বন্দর করার খরচ অনেক কম পড়বে।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রত্যাখানে যারপরনাই ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গুজরাতে ক’টা বন্দর আছে? মহারাষ্ট্রে ক’টা বন্দর আছে? অন্য রাজ্যগুলি যদি একাধিক বেসরকারি বন্দর চালু করতে পারে তা হলে পশ্চিমবঙ্গকে কেন সেই সুযোগ দেওয়া হবে না? পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য এই নতুন বন্দরের দরকার অনেক বেশি।’’ মমতা সরকারের সিদ্ধান্ত, কেন্দ্রের অনুমতি পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকার এ বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিতিন গডকড়ীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘তাজপুরে বন্দর সম্ভব এটা যেমন পশ্চিমবঙ্গের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঠিক সে ভাবে কেন্দ্রের কিছু পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ওই বন্দরের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু মমতার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। রাজ্য সরকারের সঙ্গেও কোনও বিরোধ নেই। তাই আলোচনার রাস্তা সবসময় খোলা আছে।’’

বন্দরমন্ত্রক বলছে, কোস্টাল রিজিওন্যাল জোনে তাজপুরের অবস্থান। তাই এই বন্দরটি না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অতীতে এই একই পরিবেশের যুক্তিতে নয়াচরে বিদ্যুত প্রকল্প রূপায়ণ করা সম্ভব হয়নি। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘তাজপুর নিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গড়া কমিটি পর্যালোচনা করেছে। তাজপুরের ভৌগোলিক অবস্থান শিল্প-বাণিজ্যের জন্য অনুকূল।’’ অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘বিভিন্ন শিল্পমহল চাইছে তাজপুরে এই বন্দরটি গড়ে উঠুক। কেন্দ্রের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।’’ সাগর বন্দরটি গঙ্গাসাগরের কাছে। গঙ্গাসাগর ও সংলগ্ন এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজেপি তথা কেন্দ্রের একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে। সেই কারণে উমা ভারতী-সহ অন্য মন্ত্রীরা বারংবার সাগরে যান। সেই কারণে সাগরে বন্দর নিমার্ণে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি তোলা হয়নি। কিন্তু তাজপুরে সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলার পিছনে রাজনৈতিক আপত্তি রয়েছে বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন...
পঞ্চমীতেও বন্ধ অফিস, এক দিন বেশি ছুটি রাজ্য সরকারি কর্মীদের

শুধু তো বন্দর নয়, রাজ্যের বিভিন্ন আর্থিক ও উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে মমতা সরকার। গত দেড় বছর ধরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এডিবি-র পক্ষ থেকে দু’হাজার কোটি টাকার ঋণ পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের খণ্ডযুদ্ধ চলছে। এই ঋণ পেতে মমতা কমপক্ষে কেন্দ্রের কাছে পাঁচটি চিঠি লিখেছেন। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও কেন্দ্রীয় অর্থসচিব শক্তিনাথ দাসের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে তদ্বির করেছেন একাধিক বার। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। বিশ্বব্যাঙ্ক এবং এডিবি-র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ পেতে গেলে কেন্দ্রের মধ্যস্থতা প্রয়োজন হয়। মমতার অভিযোগ, ‘‘সংবিধানের এই ত্রিপাক্ষিক নীতির সুযোগ নিয়ে রাজ্যের উন্নয়নকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।’’ এমনকী মমতার সাম্প্রতিক রোম-ইতালি সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, সেই ফাইলটি প্রায় এক মাস ফেলে রাখা হয়েছিল বলে রাজ্যের অভিযোগ। এডিবি-র যে দু’হাজার কোটি টাকার ঋণ তার মধ্যে প্রায় চারশো কোটি টাকা পরিবহণ ক্ষেত্রে রুগ্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডের জন্য ছ’শো কোটি টাকা খরচ করার কথা ছিল। এ ছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো পরিকাঠামোগত বিষয়ে বাকি টাকা খরচ করার কথা। সম্প্রতি এডিবি ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্যের কাছে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। মমতা সরকার মনে করছে, এই ভাবে একের পর এক চিঠি দিয়ে সময় নষ্ট করে রাজ্য সরকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী অতিসক্রিয় প্রশাসনের দাবি করছেন, সেখানে এই ঢিলেমি দেখে মমতা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত।

এখানেই শেষ নয়। জাতীয় সড়কগুলির জন্য নিতিন গডকড়ীর মন্ত্রক অর্থ মঞ্জুর করলেও, সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। মমতার বক্তব্য, ‘‘এক দিকে অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে কেন্দ্রীয় রাজস্বে রাজ্যের অংশ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে বহু ক্ষেত্রেই আর্থিক ব্যয় সুকৌশলে রাজ্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ জিএসটি পরিষদের বৈঠক করতে আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লি আসছেন অমিত মিত্র। সেই সময় জিএসটি নিয়ে বোঝাপড়ার পাশাপাশি রাজ্যের এই বঞ্চনার দাবি মমতার নির্দেশে দিল্লির দরবারে তুলে ধরতে পারেন অমিত মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tajpur Central Govt Mamata Banerjee Seaport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE