Advertisement
E-Paper

জ্বরে মৃত্যুর তথ্য যাচ্ছেই না কেন্দ্রে

পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক সংক্রামক জ্বরে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে বা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে যাঁদের ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা এনসেফ্যালাইটিস লেখা থাকছে, শুধু তাঁদের কথাই ঠাঁই পাচ্ছে রাজ্যের পাঠানো রিপোর্টে।

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হলে তবু খাতায় নাম ওঠে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয় সেই তথ্য। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে যদি মৃত্যুর যথার্থ কারণ লেখা না-হয়, সেই মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্রীয় নথিতে ওঠেই না। যেমনটা হচ্ছে রাজ্যের সাম্প্রতিক ‘অজানা’ জ্বরের ক্ষেত্রে।

অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক সংক্রামক জ্বরে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে বা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে যাঁদের ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা এনসেফ্যালাইটিস লেখা থাকছে, শুধু তাঁদের কথাই ঠাঁই পাচ্ছে রাজ্যের পাঠানো রিপোর্টে। রাজ্যের ডেঙ্গি-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তদন্তকারীদের নজরে এসেছে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গির দেগঙ্গায় ক্ষোভের মুখে বিধায়ক

রাজ্যের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে প্রেসক্রিপশন ও ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডেঙ্গি’র উল্লেখ করা হবে কি না, তা নিয়ে রীতিমতো কড়াকড়ি চলছে। ‘সেপ্টিসেমিয়া’, ‘শক সিনড্রোম’, ‘মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর’— মৃত্যুর নানা কারণ লেখা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই ডেঙ্গির কথা লেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হচ্ছে, বেসরকারি ক্লিনিক থেকে রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি বলা হলেও হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে তার উল্লেখ থাকছে না।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, কোনও এলাকায় যদি খুব কম সময়ের ব্যবধানে একটি রোগে বেশ কিছু মানুষ মারা যান এবং রোগটা যদি ধরা না-পড়ে, রাজ্যের উচিত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাহায্য চাওয়া। কলকাতায় কেন্দ্রের প্রথম শ্রেণির গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে— ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ (নাইসেড)। কিন্তু ‘অজানা’ জ্বরের রহস্য সন্ধানে রাজ্য এখনও তাদের সাহায্যই নেয়নি।

নাইসেডের অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘যে-সব ক্ষেত্রে রোগ শনাক্ত করা যাচ্ছে না, সেখানেও আমাদের সাহায্য চাইছে না রাজ্য। আমরা নিজের থেকে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজ্য সাহায্য নেয়নি।’’ শান্তাদেবী জানান, তাঁরা এপিডেমিওলজিস্ট বা মহামারি-বিশেষজ্ঞের দলও পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সাড়া দেয়নি।

ওই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরতে অনীহা কেন?

সরাসরি জবাব এড়িয়ে স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে আক্রান্ত এলাকায় দল গিয়েছে। তারা যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ। প্রয়োজন হলেই নাইসেডের সাহায্য চাওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে রবিবার জানানো হয়, কেন্দ্রের পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ বিভাগে রাজ্য সরকার এ বছরের ডেঙ্গি সংক্রমণের সর্বশেষ যে-তালিকা পাঠিয়েছে, সেটা তৈরি হয়েছে ৪ অক্টোবর। অর্থাৎ ডেঙ্গিতে মৃত্যু অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী এক মাসে আর কোনও রিপোর্টই যায়নি কেন্দ্রে! ৪ অক্টোবরের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে এ বছর (৪ অক্টোবর পর্যন্ত) ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৯৭ জন। মারা গিয়েছেন ১৯ জন। ২০১৬ সালে (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) রাজ্যের ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৮৬৫। মৃত্যু হয় ৪৫ জনের। গত বছর পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি প্রভাবিত এলাকায় ‘অজানা জ্বর’ সংক্রমণের কোনও রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে নেই।

এ বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গত বারের থেকে কম দেখাতে মরিয়া বলেই রাজ্য সরকার অজানা জ্বরের তত্ত্ব খাড়া করছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের অনেকেই। অজানা জ্বরে আক্রান্ত ও মৃতের কোনও পরিসংখ্যানই জানতে পারছে না কেন্দ্র। কারণ রাজ্য সেই রিপোর্ট কেন্দ্রকে দিচ্ছেই না।

অজানা জ্বর সম্পর্কে কেন্দ্রকে কোনও তথ্য জানানো হচ্ছে না কেন?

প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘হাসপাতাল যে-কোনও রোগে আক্রান্তের নথি সংরক্ষণ করে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ছাড়াও অন্যান্য জ্বরে আক্রান্তেরা হাসপাতালে ভর্তি হলে সেই তথ্যও সংরক্ষিত থাকে। নিয়ম মেনে হাসপাতাল সময়মতো সেগুলো স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে দেয়।’’

Dengue ডেঙ্গি Death Central Government Health Ministry Information
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy