Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পোড়েলে পুড়ল পাকিস্তান, রাত জাগল চন্দননগর

সুদূর নিউজিল্যান্ডের মাঠে ঈশানের আগুনে পেসে ভর করেই সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ৬৯ রানে অলআউট করে ছাড়ল ভারত। ম্যাচ জিতল ২০৩ রানের বিশাল ব্যবধানে।

উল্লাস: ঈশানের ছবি নিয়ে পাড়ার খুদেরা মঙ্গলবার সকালে ভিড় জমাল চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে। ছবি: তাপস ঘোষ

উল্লাস: ঈশানের ছবি নিয়ে পাড়ার খুদেরা মঙ্গলবার সকালে ভিড় জমাল চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল
চন্দননগর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১২
Share: Save:

পাড়ার ক্লাব তাঁর ছবি দিয়ে বিশাল ফ্লেক্স টাঙিয়েছে। তাতে বিশেষণ— ‘সিংহ শিশু’!

শহরের এক ক্রিকেট কোচ বলছেন, ‘‘ও শহরের মান বাড়াল।’’

‘‘ওঁর জন্য গর্ব হচ্ছে খুব’’— আপ্লুত এক ছাপোষা গৃহবধূও!

ঝড়ের ন‌াম ঈশান পোড়ে‌ল। তাতেই খড়কুটোর মতো উড়ে গে‌ল চির-প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। সোমবার রাত জেগে ঘরের ছেলের সেই পাক-বধ দেখল চন্দননগর। হোক না অনূর্ধ্ব-১৯! ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল বলে কথা!

সুদূর নিউজিল্যান্ডের মাঠে ঈশানের আগুনে পেসে ভর করেই সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ৬৯ রানে অলআউট করে ছাড়ল ভারত। ম্যাচ জিতল ২০৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। ৬ ওভার বল করে ঈশান দু’টি মেডেন নিয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন। রান দিয়েছেন ১৭। আর শীতের রাতে এই যুদ্ধ জয়ের ওম তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছে তাঁর শহর।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের প্রথম ম্যাচে গোড়ালির চোট ছিটকে দিয়েছিল বাংলার এই বোলারকে। তবে, তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট ছিল। সুস্থ হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে ফেরেন। উইকেট না পেলেও ভাল বল করেছিলেন। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল চন্দননগর। সেমিফাইনালে যে পাকিস্তান!

রথের সড়কের কাছে সম্বলা-শিবতলায় ঈশানের বাড়ি। সেমিফাইনাল দেখতে সোমবার মাঝরাতে টিভির সামনে বসে পড়েছিলেন তাঁর বাড়ির লোকজন, বন্ধুবান্ধব— সবাই। তার আগে এক ফাঁকে ঠাকুরঘরে গিয়ে পুজো সেরে নেন ঈশানের মা রিতাদেবী। ঈশান পাকিস্তানের কোমর ভেঙে দিতেই শুরু হয়ে যায় উচ্ছ্বাস। রাত শেষ হয়ে তখন সকাল। বাড়ির লোকজন কেউই আর ঘুমোতে পারেননি। ঈশানকে না-পেয়ে তাঁর বাবা-মাকেই অভিনন্দনের বন্যায় ভাসিয়েছেন পড়শিরা। শুভেচ্ছা জানিয়ে ঘনঘন ফোন এসেছে।

ঈশানের বাবা চন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘চোট সারিয়ে এ ভাবে কামব্যাক করায় খুব ভাল লাগছে। কোচ রাহুল দ্রাবিড়-সহ গোটা টিম ওকে সাহস জুগিয়ে গিয়েছে। ফাইনালে আরও ভাল ফর্মে দেখতে চাই। ম্যাচের পরে ছেলে ফোন করেছিল। ও নিজেও খুব খুশি।’’

রাত জেগেছে পাড়ার ক্লাবও। কিন্তু কোনও ক্লান্তি নেই ক্লাব-সদস্য অভিজিৎ সাহা, অরোজিৎ মল্লিক, সৌরভ প্রামাণিকদের। সৌম্যজিৎ সাহা নামে এক ক্লাব-সদস্য বলেন, ‘‘রাত জাগা সার্থক হল। ঈশান মন ভরিয়ে দিল। ভোরে দাঁত মাজতে মাজতেও অনেকে এসে ঈশানের বোলিংয়ের খোঁজ নিয়েছেন।’’

চন্দননগরের শ্রীঅরবিন্দ বিদ্যামন্দিরে পড়তেন ঈশান। প্রধান শিক্ষিকা কস্তুরী রায় জানান, বছর তিনেক আগে মাধ্যমিকের মৌখিক পরীক্ষার দিন কোনও জায়গা থেকে ঈশান খেলে ফিরছিলেন। ট্রেন থেকে নেমে যখন স্কুলে পৌঁছন, তখন বিকেল গড়িয়ে গিয়েছে। স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবশ্য ঈশানের জন্য বসে ছিলেন। তাঁর পরীক্ষাও নেওয়া হয়। মঙ্গলবার কস্তুরীদেবীর গলায় উচ্ছ্বাস, ‘‘ওর জন্য গর্ব হচ্ছে। উপযুক্ত ছেলের জন্যই সে দিন অপেক্ষা করেছিলাম।’’ স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক অলোকেশ দে বলেন, ‘‘স্কুল-ক্রিকেটেও ঈশান ভাল বোলিং করেছিল। এমনও হয়েছে যে, প্র্যাকটিসে যেতে ক্লাস পালিয়েছে ঈশান। ক্রিকেটের প্রতি এতটাই ও দায়বদ্ধ।’’

চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বামাপদ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ঈশানের জন্য চন্দননগর ক্রীড়া জেলা একটা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেল। তিনি বলেন, ‘‘সেমিফাইনালে যা ছন্দে দেখলাম, তাতে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকেও ঈশান কাঁদিয়ে ছাড়বে।’’

ঘরের ছেলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস চন্দননগরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE