হরষিত মজুমদার
আমন মরসুমে প্রায় ৪০ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয় এ রাজ্যে। এর মধ্যে প্রায় তিন শতাংশ অর্থাৎ এক লক্ষ হেক্টরের বেশি জমিতে সুগন্ধী ধানের চাষ হয়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক কম লাগে বলে এই চাষের খরচ কম, অথচ বাজারে দাম বেশি। এই ব্যাস্তানুপাতে লাভের পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু সমস্যা হল, সুগন্ধী ধানের ফলন কম। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্র কিছু জাত উদ্ভাবন করেছে, যেগুলোর ফলন তুলনায় বেশি (আমন মরসুমের পাশাপাশি বোরো মরসুমেও চাষ করা যায়)। চারাট পদ্ধতিতে এই সমস্ত সুগন্ধী ধানের চাষ করলে চাষিরা নিঃসন্দেহে বেশি লাভ করতে পারবেন।
চারাট পদ্ধতি কী
সাধারণত সুগন্ধী ধান গাছের উচ্চতা বেশি হওয়ার ফলে জমিতে প্রায়শই শুয়ে পড়ে বা ঢলে পড়ে। তখন ধানের শীষ পচে ফলন আরও কম হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চারাট পদ্ধতিতে চাষ করেন অনেকে। যা উত্তরবঙ্গে বোলান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ‘রোয়া ভাঙা’ এবং লাল কাঁকুরে মাটির এলাকায় ‘বাগরাশি’ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে বীজতলা থেকে চারা তুলে একবার রোয়ার পরে ফের দ্বিতীয়বার ক্ষেতে রোয়া হয়। তিনটি ধাপের জমির অনুপাত হবে ১: ৩: ২৪। অর্থাৎ এক শতক বীজতলা হলে প্রথম রোয়ার জমি হবে তিন শতক। দ্বিতীয় বা মূল রোয়ার েক্ষত হবে ২৪ শতক। ২৫-৩০ দিনের চারা বীজতলা থেকে তুলে প্রতি গুছিতে ১২-১৪টা করে দিয়ে ধান রুইতে হবে প্রথম জমিতে। এর ৩০-৩৫ দিন পর সেই চারাগাছ তুলে ৩-৪টি করে চারা বা পাশকাঠি প্রতি গুছিতে দিয়ে মূল জমিতে রুইতে হবে। দ্বিতীয়বার তোলার এই ধকল সামলাতে গিয়ে গাছের উচ্চতা কম হয়। ফলে শুয়ে বা ঢলে পড়ার প্রবণতা কমে, শীষবাহী পাশকাঠির সংখ্যা বাড়ে, রোগপোকার আক্রমণ কম হয়, সর্বোপরি স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুণ্ণ রেখে ফলন অাশানুরূপ ভাবে বাড়ে।
জরুরি তথ্য
ভাল গন্ধ ও ফলন পেতে হলে আমন ধানের ক্ষেত্রে চারা রোপণের আদর্শ সময় ১-১৫ জুলাই। আগে রোপণ করলে সুগন্ধ কমে যায়, আবার ১৫ জুলাইয়ের পর রোপণ করলে ফলন কমে যায়। বোরো ধান চাষের ক্ষেত্রে চারা রোপণের সময়সীমা ১৫-৩০ জানুয়ারি।
বীজতলা তৈরি, বীজশোধন, চারাট পদ্ধতিতে দু’বার বোনা, যথাযথ সার দেওয়া, আগাছা দমন—ধান চাষে সবসময়ই কাজ অনেক। তবে সুগন্ধী ধান চাষের ক্ষেত্রে রোগপোকা দমন করতে হলে রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগের চেয়ে যান্ত্রিক বা জৈব পদ্ধতির উপরে বেশি জোর দেওয়া উচিত। তাহলে সুগন্ধ বজায় থাকে। সন্ধ্যায় জমিতে মশাল জ্বালানো বা শামুকের মাংসের সঙ্গে কীটনাশক মাখিয়ে ঝুলিয়ে রাখা, আলোক ফাঁদ ব্যবহার ইত্যাদি উপযোগী উপায়। লম্বা দেশি জাতের ক্ষেত্রে রোয়ার ৪৫-৫৫ দিনের মাথায় উপরের দিকের ৫-৬টি পাতার ডগা ১০-১৫ সেমি কেটে দিলে শুয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমে। ঠিক সময়ে সুগন্ধী ধান কাটা আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেরি হলে ধান ঝরে যায়, গোটা চাল কম পাওয়া যায়, আবার আগে কাটলে ধান ঠিক ভাবে পুষ্ট না হওয়ায় ফলন কমে। নিয়ম হচ্ছে, গাছে ৫০% ফুল আসার ৩৫ দিনের মাথায় কেটে ফেলা। কেটেই ঝাড়াই করে শুকিয়ে নিতে হবে। এতে গন্ধ ভাল থাকে, ফলন বাড়ে। আবার ঝা়়ড়াই মাড়াই করার পর কয়েকমাস গুদামে সংরক্ষণ করলে ভাল হয়। এতে চালের গুণমান বৃদ্ধি পায়, রান্না করলে ভাত লম্বায় বাড়ে, ঝরঝরে হয়।
লেখক বালুরঘাট মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy