Advertisement
E-Paper

‘কড়া’ সচিবের হোমটাস্কে ত্রাস

গত কয়েক মাসের মোট অস্ত্রোপচারের তালিকা এবং কোন চিকিৎসক কত অস্ত্রোপচার করেছেন— তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সে সব খতিয়ান যত দ্রুত সম্ভব চেয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যসচিবের অফিস।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:০১
অনিল বর্মা

অনিল বর্মা

সোমবার হলেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)-দের অনেকেরই বুক দুরুদুরু। জেলার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা তথ্য-পরিসংখ্যানে মুখ গুঁজে বসে থাকছেন তাঁরা। পরীক্ষার প্রস্তুতি। প্রতি মঙ্গলবার ‘পরীক্ষা’ নিচ্ছেন নতুন স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা। এক সপ্তাহের ‘হোমওয়ার্ক’ দিয়ে দিচ্ছেন। ফাঁকি মারার কোনও জায়গা নেই।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতি মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে সিএমওএইচ-দের হাতে চলে আসছে আগামী এক সপ্তাহের কাজের ফর্দ। বিভিন্ন ধরনের তথ্য-পরিসংখ্যানও চেয়ে পাঠাচ্ছেন নতুন সচিব। তাল মেলাতে না-পেরে বেগতিক দশা সরকারি কাজের দীর্ঘসূত্রতায় অভ্যস্ত অনেক স্বাস্থ্যকর্তারই। দুশ্চিন্তায় বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের কর্তারাও। গত কয়েক মাসের মোট অস্ত্রোপচারের তালিকা এবং কোন চিকিৎসক কত অস্ত্রোপচার করেছেন— তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সে সব খতিয়ান যত দ্রুত সম্ভব চেয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যসচিবের অফিস। অল্প সময়ের মধ্যে তা তৈরি করতে নাভিশ্বাস উঠেছে কর্তাদের।

চাপে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাগুলিও। স্বাস্থ্যসচিব বৈঠকে তাদের খোলাখুলি জানিয়েছেন, কোনও অজুহাতে আর দেরি করে ওষুধ দেওয়া যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘ওষুধ সরবরাহে দেরি করলেও এত দিন তৎক্ষণাৎ বরাত বাতিল হতো না। পাঁচ বার পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হত। কিন্তু এ বার থেকে চুক্তিতে থাকা তারিখ এক বার তারিখ ফেল করলেই অন্য ভেন্ডার বেছে নেওয়া হবে। কোনও যুক্তি গ্রাহ্য করা হবে না।’’

আরও পড়ুন:তর্ক থাক, বঙ্গে পৃথক পথ খুঁজছে সিপিএম

এতে হইচই পড়ে গিয়েছে সংস্থাগুলির মধ্যে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত সব দরপত্র ডাকা হয়ে গিয়েছে। তাতে পাঁচ বার পর্যন্ত দেরি করলেও সুযোগ পাওয়ার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব তা বাতিল করবেন কী করে? এ ব্যাপারে অনিলবাবু নীরব থাকলেও স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেছেন, ‘‘সচিব ঠিকই করছেন। দরকার পড়লে দরপত্রের শব্দ পরিবর্তন করে শর্ত পরিমার্জনা করা হবে।’’

দায়িত্ব নেওয়া ইস্তক কার্যত কড়া মাস্টারমশাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ অনিলবাবু। প্রতি মাসের দ্বিতীয় শনিবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্য ভবনে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার সিএমওএইচ-দের সঙ্গে দু’ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্স করছেন তিনি। তাঁদের কাজের তালিকা দিয়ে দিচ্ছেন। দফতর সূত্রের খবর, সময়মতো কাজ না-করতে পারলে অনেকের ভাগ্যে স্বাস্থ্যসচিবের ভর্ৎসনাও জুটছে। তবে তাতে কাজের গতি কিছুটা বেড়েছে বলেও মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

যদিও একাধিক সিএমওএইচ সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্যসচিবের দেওয়া কাজ শেষ করতে গিয়ে জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিচালনায় মন ও সময় দিতে পারছেন না তাঁরা। এক সিএমওএইচের কথায়, ‘‘সোম-মঙ্গল দু’দিন চলে যাচ্ছে প্রস্তুতি এবং কনফারেন্সে। বাকি তিন দিন যাচ্ছে স্বাস্থ্যসচিবের দেওয়া কাজ সারতে। শনি-রবি সিএমওএইচ অফিস বন্ধ থাকে। এত ঘন-ঘন টাস্ক দিলে তা পূরণ করা অসম্ভব।’’ আর এক সিএমওএইচের বক্তব্য, ‘‘যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য, টিকাকরণের মতো অনেক কর্মসূচিরই গভীরে যাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া, ভিডিও কনফারেন্সের পরিকাঠামো নেই বলে আমাদের এসপি বা বিডিও-র অফিসে ছুটতে হচ্ছে। খুব সমস্যায় পড়েছি।’’

এ ব্যাপারে অনিলবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে আসতে বা কাজ শেষ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে কোনও সিএমওএইচ-ই অভিযোগ করেননি। করলে দেখা যাবে।’’

Anil Verma Chief Medical Officers of Health CMOH Health Secretary Home work স্বাস্থ্যসচিব সিএমওএইচ অনিল বর্মা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy