Advertisement
E-Paper

২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে গ্রামীণ সড়কে নজর নবান্নের, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণে বড় অঙ্কের বরাদ্দ মমতার

গ্রামীণ রাস্তাগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রের স্পষ্ট কোনও নীতি নেই, ফলে এর দায়িত্ব রাজ্যের উপর বর্তায়। তাই ভোটের আগে রাজ্যের শাসকদল এই রাস্তাগুলির সংস্কারের কাজে জোর দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৩৩
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে গ্রামীণ রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করল পঞ্চায়েত দফতর। আগামী বছর রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই বড় অঙ্কের বরাদ্দের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যে কারণে নবান্নের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সাধারণত প্রতি বছর এই খাতে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেখানে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে একলপ্তে ৭৫০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে। এই বরাদ্দের মূল উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা (পিএমজিএসওয়াই) এবং গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের (আরআইডিএফ) অর্থায়নে নির্মিত পুরনো রাস্তাগুলির রক্ষণাবেক্ষণ। কেন্দ্রীয় সরকারের পিএমজিএসওয়াই প্রকল্পে রাস্তা তৈরির জন্য ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দেয়, আর বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার বহন করে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের শর্ত অনুযায়ী, এই প্রকল্পে নির্মিত প্রতিটি রাস্তার শুরু ও শেষে প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত ফলক বসাতে হয়। ফলে বছরের পর বছর এই ফলক থেকে যায়, যা রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় পেরিয়ে গেলে এই রাস্তাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রের স্পষ্ট কোনও নীতি নেই, ফলে এর দায়িত্ব রাজ্যের উপর বর্তায়। তাই ভোটের আগে রাজ্যের শাসকদল এই রাস্তাগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে জোর দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কারণ, রাস্তা মেরামত না হলে ভোটে ভুগতে হতে পারে শাসকদল তৃণমূলকে। যা একবারেই না-পসন্দ তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীর। তাই এক বছর আগে থাকতেই পঞ্চায়েত দফতরের তরফে গ্রামীণ রাস্তা ঠিকঠাক করার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

রাজ্যের সদ্য পেশ হওয়া বাজেট অনুযায়ী, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের জন্য ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে শুধুমাত্র পিএমজিএসওয়াই এবং আরআইডিএফ প্রকল্পে নির্মিত পুরনো রাস্তা সংস্কারের জন্য। রাজ্য সরকারের মতে, এই রাস্তাগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে গ্রামীণ পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, যা গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে নির্বাচনের আগে এই কাজগুলি সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন সরাসরি ভোটের উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তৃণমূল সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, যার মধ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষক বন্ধু, দুয়ারে সরকার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ বার রাস্তা সংস্কারের মতো পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্য সরকার ভোটারদের আরও কাছাকাছি আসতে চাইছে। অন্য দিকে, বিরোধী দলগুলি এই বরাদ্দকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরেই রাজ্য সরকার এই রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে গাফিলতি করেছে, আর নির্বাচনের আগে হঠাৎ এত বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করার মূল কারণ ভোটব্যাঙ্ক সুসংহত করা।

রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের ফলে যেমন গ্রামীণ পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হবে, তেমনই আগামী নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাবে বলে মনে করছে শাসকদল। তবে বাস্তবে এই অর্থ সঠিক ভাবে ব্যয় করা হয় কি না, তা ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই নজর রাখছে, যাতে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ভাবে খরচ করা হয় এবং প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হয়।

২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কের জন্য এটি একটি বড় কৌশল হতে পারে, যা তৃণমূল সরকারের পক্ষে ইতিবাচক ফল আনতে পারে।

Panchayat CM Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy