Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

‘স্যার, বাবা বিয়ে দিচ্ছে’ বলেই কান্না দুই মেয়ের

স্কুলে প্রথম পিরিয়ডের পরেই শিক্ষকদের কাছে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিল কৃপা। কৃপা মণ্ডল, নদিয়ার ধানতলা থানার হাজরাপুর হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। “স্যার, বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি পড়তে‌ চাই। আমাকে বাঁচান”— শনিবার সকালে স্টাফরুমে ঢুকেই বলেছিল মেয়েটা।

স্কুলে কৃপা ও মিতালি। — নিজস্ব চিত্র

স্কুলে কৃপা ও মিতালি। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধানতলা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

স্কুলে প্রথম পিরিয়ডের পরেই শিক্ষকদের কাছে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিল কৃপা।

কৃপা মণ্ডল, নদিয়ার ধানতলা থানার হাজরাপুর হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। “স্যার, বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি পড়তে‌ চাই। আমাকে বাঁচান”— শনিবার সকালে স্টাফরুমে ঢুকেই বলেছিল মেয়েটা।

শিক্ষকেরা পুলিশ ও বিডিও-কে ফোন করেন। তাদের থেকে নম্বর নিয়ে খবর দেন চাইল্ড লাইনে। এরই মধ্যে মেয়েটির খুড়তুতো দিদি, ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী মিতালি মণ্ডল এসে জানায়, তারও বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। ‘‘আমি ভয়ে কথাটা কাউকে বলতে পারছিলাম না। বোন বলার পরে সাহস পেলাম’’ — বলে কেঁদে ফেলে মিতালিও।

ভয় তো পাওয়ারই কথা! গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো কী সহজ? তবু পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দি থেকে যে প্রতিরোধের শুরু হয়েছিল, তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে। গত মাসে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামেও প্রায় একই কায়দায়, স্কুলের শিক্ষকদের জানিয়ে নিজের বিয়ে রুখেছিল দশম শ্রেণির জুলেখা খাতুন।

রানাঘাট ২ ব্লকের আড়ংঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজরাপুর গ্রামের কৃপারা চার বোন, এক ভাই। আগের দুই যমজ বোনের ছোট বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা শঙ্কর মণ্ডল চাষবাস করেন। হাজরাপুর হাইস্কুলের শিক্ষক কমলেশ মজুমদার বলেন, “আমরা চাইল্ড লাইনে খবর দেওয়ার পরে তারা এসে মেয়ে দু’টিকে ধানতলা থানায় নিয়ে যায়। আমি তাদের সঙ্গে থানায় গিয়ে লিখিত ভাবে বিষয়টি পুলিশকে জানাই।”

শঙ্করবাবু অবশ্য দাবি করেন, “কিছু দিন আগে দুর্ঘটনায় আমার মেজো মেয়ের স্বামী মারা যায়। তার ফের বিয়ে ঠিক করেছি। কৃপা হয়তো তাতেই ভুল বুঝেছে।” মিতালির বিয়েও ঠিক হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। আড়ংঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রণয় দত্ত বলেন, “মেয়ে দু’টির বিয়ে ঠিক হয়েছে, তা আমাদের জানা ছিল না। আমারা এ ধরনের কাজ বরদাস্ত করব না।”

কৃপা আর মিতালি আপাতত হোমে রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার তাদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে হাজির করা হবে। চাইল্ড লাইনের পক্ষে মণিমালা বিশ্বাস বলেন, “ওদে‌র বাবা-মা কী চাইছেন, তা জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি মনে হয়, তাঁদের কাছে ওরা নিরাপদ তবেই বাড়ি পাঠানো হবে। অন্যথায় হোমেই রেখে দেওয়া হবে।”

চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির সভাপতি রিনা মুখোপাধ্যায়ের মতে, “এটা কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য। এতে ছাত্রীদের সচেতনতা বাড়ছে।” প্রচারে এই ধরনের মেয়েদের তুলেও ধরতে চাইছে প্রশাসন। আজ, রবিবার ‘কন্যাশ্রী দিবস’ উপলক্ষে জুলেখাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে নবগ্রাম ব্লক প্রশাসন।

রানাঘাট ২-এর বিডিও শিল্পী সিংহ বলেন, “কৃপা এবং মিতালি যে সাহস দেখিয়েছে তার জন্য ওদেরও সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BDO child marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE