Advertisement
E-Paper

জ্বর আর চোখের সংক্রমণে কাবু শিশুরা

ফাইনাল পরীক্ষা শেষে বাবা-মায়ের সঙ্গে বেড়াতে যাবে যশ, এমনটাই ঠিক ছিল। কিন্তু এক সকালে ঘুম থেকে উঠে যশের বাবা-মা দেখেন, ছেলের একটি চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে। ভাবলেন, নিশ্চয়ই ঠান্ডা লেগে এই অবস্থা হয়েছে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:২৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ফাইনাল পরীক্ষা শেষে বাবা-মায়ের সঙ্গে বেড়াতে যাবে যশ, এমনটাই ঠিক ছিল। কিন্তু এক সকালে ঘুম থেকে উঠে যশের বাবা-মা দেখেন, ছেলের একটি চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে। ভাবলেন, নিশ্চয়ই ঠান্ডা লেগে এই অবস্থা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কসবার বাসিন্দা, প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রের প্রবল জ্বর এবং হাত-পায়ে র‌্যাশ দেখা গেল। পরীক্ষা তো দেওয়া হলই না। উপরন্তু তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল।

ডানলপে বাড়ি প্লে স্কুলের ছাত্রী, আড়াই বছরের রিভার। একই রকম ভাবে চোখ লাল হয় তারও। পরে তাপমাত্রার পারদ চড়ে শরীরে খিঁচুনি ধরে গিয়েছিল রিভার। যশের মতো কাহিল হয়ে পড়ে সে-ও। যশ, রিভার মতো এমন সব লক্ষণ নিয়ে মাস খানেক ধরে ডাক্তারের চেম্বারে ভিড় করছেন বাবা-মায়েরা।

শিশু চিকিৎসকদের একাংশ এর কারণ হিসেবে দায়ী করছেন অ্যাডেনোভাইরাসকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই ভাইরাসের প্রভাবে জ্বরের সঙ্গে কনজাংটিভাইটিসেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। রেহাই মিলছে না বড়দেরও। জ্বর ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। কনজাংটিভাইটিসের ফলে চোখে রক্ত জমাট বাঁধছে, রক্তক্ষরণও হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের এ জন্য ১-২ সপ্তাহ ভুগতে হচ্ছে।

পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুমন পোদ্দারের কথায়, ‘‘এ বছর এই উপসর্গ প্রায় মহামারীর মতো ছড়িয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের কম হওয়ায়, অ্যাডেনোভাইরাসে মূলত ওরাই আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এসে কাবু হচ্ছেন বড়রাও।’’ বড়দের ক্ষেত্রে সংক্রমণ বেশ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অ্যাডেনোভাইরাস নতুন কিছু নয়। গত বছর পর্যন্ত সাঁতার কাটে এমন বাচ্চাদেরই মূলত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে। কারণ, সাঁতারের সময়ে শিশুদের লালার মাধ্যমে এই ভাইরাস জলে মিশে অন্যকে সংক্রমিত করে। এ বছর বাতাসের মাধ্যমেও অ্যাডেনোভাইরাস আক্রমণ শানাচ্ছে বলে দাবি চিকিৎসকদের। ফেব্রুয়ারি-মার্চ সাঁতারের সময় নয়। তবুও এই আবহাওয়ায় কেন অ্যাডেনোভাইরাস সক্রিয় হচ্ছে?

পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এ জন্য আবহাওয়া অনেকটা দায়ী। খুব গরম কিংবা ঠান্ডায় ভাইরাস সক্রিয় হতে পারে না। এই মুহূর্তে কলকাতার যা আবহাওয়া, তা ভাইরাস মরার অনুকূল নয়। ফলে এই ভাইরাসের এত বাড়বাড়ন্ত। মাধ্যম যাই হোক, অ্যাডেনোভাইরাস বরাবরই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়।’’ তিনি জানান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস এখন প্রায় সর্বত্র। সেখানে যে জনসমাগম হয়, তার থেকে বিপুল পরিমাণ ভাইরাস ভিতরের হাওয়া বেরোনোর পথ দিয়ে বাতাসে মিশছে। এ সব ক্ষেত্রে হাওয়া বেরনোর ওই অংশে হিটার রাখলে উত্তাপে ভাইরাসের মৃত্যু হতে পারে বলে মত অমিতাভবাবুর। অফিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ইনলেটে হেপা ফিল্টার বসালেও অফিস ভাইরাসমুক্ত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

তবে শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের ধারণা, বর্তমানে অ্যাডেনোভাইরাস চিহ্নিতকরণের সুযোগ রয়েছে বলেই হয়তো এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘হয়তো আগেও এ রকম সময়ে এই ভাইরাসের দাপট থাকত। আমাদের তখন এ নিয়ে তেমন ধারণা ছিল না। এখন পরীক্ষা করে সেটা জানা যাচ্ছে। তাতে রোগীর চিকিৎসা করতেও সুবিধা হচ্ছে।’’M

অ্যাডেনোভাইরাস কী সর্দি-কাশির কারণ হিসেবে পরিচিত এই ভাইরাস। এর প্রভাবে শিশুদের চোখ, শ্বাসযন্ত্র, অন্ত্র, মূত্রনালীর মতো অঙ্গে সংক্রমণ দেখা যায়। মূত্রের সঙ্গে রক্তও বেরোতে পারে। কী কী লক্ষণ জ্বর, সর্দি-কাশি গলায় সংক্রমণ হাত-পায়ে র‌্যাশ কনজাংটিভাইটিস কী ভাবে সতর্ক হবেন শিশুর জ্বর বা চোখ লাল হতে দেখলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। শিশুকে মাস্ক পরান। টিসু ব্যবহার করান। শিশুর শুশ্রূষা করে গরম জলে হাত ধুয়ে নেবেন। আঁচল-ওড়না দিয়ে শিশুর নাক-চোখ মুছবেন না। শিশুর ডায়াপার বদলের সময়ে সতর্ক থাকুন।

চিকিৎসকদের মতে, স্কুল, সুইমিং পুল, কোচিং, ক্যাম্প— এমন জায়গায় শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আক্রান্ত কোনও শিশু এই সব জায়গায় এলে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। চক্ষু চিকিৎসক জ্যোর্তিময় দত্ত জানান, একাধিক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে স্কুল থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এই ভাইরাসের জেরে শিশুদের দু’চোখেই ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে। যার জেরে চোখে হেমারেজিক স্পট তৈরি হচ্ছে। রক্তক্ষরণও হচ্ছে। সেরে উঠতে লাগছে প্রায় দু’সপ্তাহ। এর জেরে চোখের কর্নিয়াতেও প্রভাব পড়ছে।’’

Health Children Fever Eye Infection
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy