Advertisement
E-Paper

উন্নয়নের নামে সবুজে কোপ চিল্কিগড়ে, অভিযোগ

লক্ষ্য ছিল সৌন্দর্যায়ন এবং পরিকাঠামো নির্মাণ। চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা প্রাঙ্গণ ঘিরে বহু টাকা ব্যয় করে সেই কাজও হয়েছে। কিন্তু তার ফলে নিসর্গে কোপ পড়েছে বলে অভিযোগ উঠল। পর্যটন দফতরের বরাদ্দ প্রায় এক কোটি টাকায় বন দফতরের উদ্যোগে কনকদুর্গার মন্দির চত্বরে নানা ধরনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:১৪
লালমাটির রাস্তা বদলে গিয়েছে ঢালাইয়ে।

লালমাটির রাস্তা বদলে গিয়েছে ঢালাইয়ে।

লক্ষ্য ছিল সৌন্দর্যায়ন এবং পরিকাঠামো নির্মাণ। চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা প্রাঙ্গণ ঘিরে বহু টাকা ব্যয় করে সেই কাজও হয়েছে। কিন্তু তার ফলে নিসর্গে কোপ পড়েছে বলে অভিযোগ উঠল। পর্যটন দফতরের বরাদ্দ প্রায় এক কোটি টাকায় বন দফতরের উদ্যোগে কনকদুর্গার মন্দির চত্বরে নানা ধরনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে কিছু কাজ হয়েছে। উন্নয়নের এই পরিবর্তনে চিল্কিগড়ের চিরচেনা প্রাকৃতিক ছবিটাই বদলে গিয়েছে, যা দেখে হতাশ হচ্ছেন অনেকেই। সরব হয়েছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরাও।

মন্দির যাওয়ার পিচ রাস্তাটির উপর তৈরি হয়েছে বিশাল ‘অশ্বদুয়ার’। দেবীর বাহন অশ্ব। তাই প্রকাণ্ড কংক্রিটের প্রবেশ পথের মাথায় দু’টি ঘোড়ার মূর্তির মাঝে রয়েছে দেবী-মূর্তির কংক্রিটের রেপ্লিকা। পিচ রাস্তার কিছুটা পরে দুর্ভেদ্য জঙ্গলের মাঝে লাল মাটির রাস্তাটিও আর নেই। সেখানে কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা হয়ে গিয়েছে। রাস্তার দু’ধারে বাতি স্তম্ভ বসেছে। মন্দির চত্বরে পৌঁছে দেখা গেল, চারপাশ কেবলই কংক্রিটময়। আগে চিল্কিগড়ের মন্দির প্রাঙ্গণে গাছগাছড়ার শোভা দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। মন্দির চত্বরে ছিটেবেড়ার গোটা কয়েক ঘরে পুজোর সামগ্রী ও চা-জলখাবারের দোকান ছিল। শীতের মরসুমে মন্দির লাগোয়া জঙ্গলের ভিতরে চড়ুইভাতি করতে আসতেন অনেকে। আর এখন উন্নয়নের রাজসূয় যজ্ঞের দৌলতে মন্দির চত্বরে তৈরি হয়েছে নীল-সাদা রঙের ফোয়ারা, সবুজ ঘাসের লন। মন্দির ঘিরে চারপাশে পর্যটকদের বসার কংক্রিটের জায়গা। শিশুউদ্যান হয়েছে। লোহার দোলনা, স্লিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে শিশুদের পাশাপাশি, হুটোপাটি করছেন তরুণ যুগলরাও। পুজোর সামগ্রী ও খাবার দোকানের অস্থায়ী ঘর গুলি ভেঙে দিয়ে কংক্রিটের সাতটি দোকান ও একটি গুদাম ঘর হয়েছে। মোরাম ফেলে মন্দির প্রাঙ্গণের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গলের ভিতরে চড়ুইভাতি করার জন্য ইতিউতি অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ৮টি সিমেন্টের বেদি তৈরি হয়েছে। পাশে রয়েছে জলের ট্যাপ। এগুলির পোষাকি নাম ‘বনভোজন ছাউনি’।


উপরে কনকদুর্গা মন্দিরে যাওয়ায় তোরণ।

আগে যাঁরা কনকদুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণের শোভা দেখে গিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এ বার এসে হতাশ হচ্ছেন। লেক টাউনের প্রবীণা আশালতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মন্দির প্রাঙ্গণের সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাই হারিয়ে গিয়েছে। এমন উন্নয়নের কী খুব প্রয়োজন ছিল?” ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক ভূপেনচন্দ্র মাহাতো বলেন, “পর্যটকদের জন্য নানা পরিকাঠামো ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছে। এতে পর্যটক ও বনভোজন দলের সুবিধা হবে। তবে আগের চিরচেনা সেই ছবিটা হারিয়ে গিয়েছে।” বিশিষ্ট পরিবশ কর্মী সুভাষ দত্ত চিল্কিগড়ের এই ভোলবদলে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “উন্নয়নের নামে কংক্রিটের জঙ্গল বানিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হল। বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই কর্মকাণ্ডটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

সৌন্দর্যায়নের কাজ নিয়ে ক্ষোভ চাপা থাকেনি তৃণমূল পরিচালিত জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধলের কথাতেও। সমীরবাবু বলেন, “বড্ড বেশি কংক্রিটের ছড়াছড়ি হয়ে গেল। একটু পরিকল্পিতভাবে কাজটা হলে ভাল হত।” অন্য মতও রয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে পুজোর সামগ্রী বিক্রেতা স্বপনকুমার সিংহের দাবি, “এখানে প্রতিদিন অসংখ্য পুণ্যার্থী ও পর্যটক আসেন। ফলে, পরিকাঠামো উন্নয়ন, সৌন্দর্যায়েনর দরকার ছিল।”

সমীরবাবু জানালেন, মন্দির এলাকাটি চিল্কিগড় রাজপরিবারের। বন দফতর কাজ শেষ করে গত শনিবার স্থানীয় প্রশাসনকে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে দিয়েছে। বার্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হবে মন্দির উন্নয়ন কমিটিকে। তবে পরবর্তী কালে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ অবশ্য পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে করা হবে।


সাজিয়ে তোলা হয়েছে মূল মন্দির সংলগ্ন এলাকাও।

এ দিকে, কনকদুর্গার শতাব্দী প্রাচীন পরিত্যক্ত মন্দিরটি যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। প্রাচীন মন্দিরটিকে রক্ষা করার জন্য ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের হস্তক্ষেপেরও দাবি উঠেছে। রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য বিরজেশচন্দ্র দেও ধবলদেব বলেন, “মন্দির এলাকাটি রাজ পরিবারের দেবত্র সম্পত্তি। ওখানে উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাকেই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অথচ মূল মন্দির সংস্কারের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয় নি। পাশাপাশি, প্রাচীন পরিত্যক্ত মন্দিরটি রক্ষা করার ব্যাপারেও কোনও উদ্যোগ নেই।”

১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে তত্‌কালীন ‘তিহারদ্বীপা গড়’ বা জামবনি পরগনার সামন্তরাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ কনকদুর্গার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চতুর্ভুজা দেবী এখানে অশ্ববাহিনী। পরে গোপীনাথের দৌহিত্র কমলাকান্ত দেও ধবলদেব চিল্কিগড়ের রাজা হন।

ছবিগুলি তুলেছেন দেবরাজ ঘোষ।

chilkigarh greenary developmental work infrastructural jambani chilkigarh kingshuk gupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy