Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বুধের সূর্য-সফর হাঁ হয়ে দেখল কলকাতা

সাদা পিচবোর্ডের গায়ে সূর্যের প্রতিবিম্ব পড়তেই হইহই করে উঠল ভিড়। ‘‘ওই তো, ওই তো বুধ! কালো তিলের মতো!’’— বলতে বলতে এক উৎসাহী দর্শক সোজা আঙুল দিয়ে বসলেন পিচবোর্ডে।

সূর্যের বুকে বুধের পা। সোমবার পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সেন্টারে তোলা ছবি।

সূর্যের বুকে বুধের পা। সোমবার পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সেন্টারে তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:৫১
Share: Save:

সাদা পিচবোর্ডের গায়ে সূর্যের প্রতিবিম্ব পড়তেই হইহই করে উঠল ভিড়। ‘‘ওই তো, ওই তো বুধ! কালো তিলের মতো!’’— বলতে বলতে এক উৎসাহী দর্শক সোজা আঙুল দিয়ে বসলেন পিচবোর্ডে।

ব্যস। ছবি উধাও!

কাণ্ড-কারখানা দেখে হাঁ-হাঁ করে উঠলেন টেলিস্কোপ সামলানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী। ধমকে বললেন, ‘‘দিলেন তো নাড়িয়ে! এমন করলে কিন্তু আর দেখা যাবে না।’’

সূর্যের উপর দিয়ে বুধের সরণ। সোমবার বিকেলে যা দেখার জন্য ভিড় জমেছিল সল্টলেক সেক্টর ফাইভে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের উঠোনে। ডুবতে বসা সূর্যের গায়ে কালো খুদে তিলের চেহারায় বুধগ্রহ কী ভাবে হামাগুড়ি দেয়, তা চাক্ষুষ করতে এসেছিলেন বিস্তর মানুষ। সেন্টারের কর্মীরা তো ছিলেনই। পাশাপাশি ওই তল্লাটের নানা ব্যাঙ্ক, আইটি সংস্থার কর্মী, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া-শিক্ষকেরাও দল বেঁধে হাজির হন। অপার আগ্রহে টেলিস্কোপে চোখ রেখে তাঁরা বিরল মহাজাগতিক ঘটনাটির সাক্ষী হয়েছেন। অনেকে সাদা পিচবোর্ডের গায়ে তৈরি হওয়া সূর্যের প্রতিবিম্ব ক্যামেরাবন্দি করে নিয়েছেন মোবাইলে। বিভিন্ন রাস্তাঘাটে, আবাসনে, বাড়িতেও অনেককে দেখা গিয়েছে বিকেলের সূর্যের দিকে তাকাতে। কেউ কেউ আবার হুঁশিয়ার করেছেন— ‘‘খালি চোখে দেখলে কিন্তু বিপদে পড়বেন।’’

সব মিলিয়ে বেশ উৎসাহের ছবি। তবে হতাশার সুরও শোনা গিয়েছে। কারও কারও মতে, ২০১২-য় সূর্যের উপর দিয়ে শুক্রগ্রহের সরণ ছিল আরও স্পষ্ট। সূর্যের গায়ে ‘শুকতারা’কে অনেক পরিষ্কার ভাবে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। সে জায়গায় এ দিন সূর্যের মুখে তিলের মতো বুধের হদিস পেতে নাকাল হতে হয়েছে। পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেনের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘এমনটাই হওয়ার কথা! শুক্রগ্রহ পৃথিবীর কাছে। তাই বড় দেখিয়েছে। বুধ এমনিতেই খুদে আকারের। উপরন্তু পৃথিবী থেকে দূরত্ব বেশি। ফলে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে।’’

সূর্যের উপরে বুধের সরণ এর পরে ভারত থেকে ফের প্রত্যক্ষ করা যাবে ষোলো বছর বাদে, ২০৩২-এ। এ হেন বিরল ঘটনা এ দিন আদৌ দেখা যাবে কি না, রবিবার সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল প্রকৃতি। বিজ্ঞানীরা চিন্তায় ছিলেন, আবহাওয়ার খামখেয়ালি মেজাজে এ দিন বিকেলের সূর্য মেঘে ঢাকা পড়ে যাবে না তো? চিন্তা বেড়ে যায় এ সকালে, যখন আলিপুর হাওয়া অফিস থেকে ফোনে সঞ্জীববাবুকে জানানো হয়, বিকেলে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। বেলা একটা নাগাদ স্বস্তির বার্তা আসে। আলিপুর জানায়, বিকেলে আকাশে তেমন মেঘ থাকবে না।

শেষমেশ মোটামুটি নির্বিঘ্নেই সূর্যের গা বেয়ে বুধের পাড়ি দেখেছে কলকাতা। গুরুসদয় দত্ত রোডের বিড়লা মিউজিয়ামেও (বিআইটিএম) শ’দুয়েক মানুষের ভিড় জমে। সেখানে টেলিস্কোপ দিয়ে প্রতিবিম্ব তৈরির সঙ্গে সঙ্গে নাসা-র ভিডিও দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sun Mercury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE