প্রস্তুতি। বিধানসভা ভোটের পরে দলের প্রথম কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।
নারদ কাণ্ডে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন শুক্রবার। নবান্ন থেকে লালবাজারে সেই ফাইল পৌঁছতেও পারল না। শনিবারই ভাইদের ক্লিনচিট দিয়ে দিলেন দিদি। সেই সঙ্গে কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, নারদ স্টিং অপারেশনে আসলে ঘুষ কাণ্ডের তদন্ত হবে না, তদন্ত হবে নারদ চক্রান্তের। কেন এবং কী উদ্দেশ্যে সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল, চক্রান্তের নেপথ্যে ছিলেন কারা, তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচারের জন্য এই ষড়যন্ত্রের জাল কত দূর ছড়িয়ে ছিল— সব তদন্ত করে বের করা হবে। দিদির কথায়, ‘‘দেখা যাক, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ে কি না!’’
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার ঠিক এক মাস পর শনিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মশালা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই এ দিন নারদ কাণ্ডকে স্পষ্টত ‘ব্ল্যাকমেল’ এবং ‘চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভোটের মুখে এই স্টিং অপারেশনের মাধ্যমে তৃণমূলের ভাবমূর্তি মলিন করার চেষ্টা হয়েছে বলে ক্ষোভ জানিয়ে এর পরই দিদি গর্জে ওঠেন। বলেন, ‘‘যারা আমাদের দলকে অসম্মান করেছে, তাদের মুখোশটা এ বার খুলে দিতে হবে।’’
কলকাতার সিপি রাজীব কুমারের নেতৃত্বে নারদ কাণ্ডের তদন্ত হবে বলে শুক্রবার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন,‘‘কারা এর মধ্যে আছে, সব খুঁজে বার করব। কত কী খেলা চলছে, সব খুঁজে বার করব। সে জন্যই তো তদন্ত করছি।’’
তৃণমূলনেত্রী যখন এ সব বলছেন, তখন মঞ্চের প্রথম সারিতে বসে মুকুল রায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম, সুলতান আহমেদ, শোভন চট্টোপাধ্যায়— নারদ-কাণ্ডের প্রায় সব অভিযুক্তই। স্টিং-কাণ্ডে এই ভাইদের ফাঁসানোর চক্রান্ত হয়েছিল, এটা বোঝাতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে মমতা সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমরা কি কেউ টাকা চেয়েছিলে?’’ বিশ হাজার কর্মীর সামনে দু’এক জন নারদ-ভাই মাথা নেড়ে ‘না’ বলার চেষ্টা করেন। কোনও জোরালো জবাবের অপেক্ষা না করেই মমতা বলতে থাকেন, ‘‘শুভেন্দু কি খেতে পায় না! দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে কি ওকে সংসার চালাতে হয়, না ভোট করতে হয়?’’ দিদি এ ভাবে পাশে দাঁড়ানোয় তখন চওড়া হাসি পরিবহণমন্ত্রীর মুখে। গ্যালারিও ফেটে পড়ছে হাততালির শব্দে। দিদির ফের প্রশ্ন, ‘‘ফিরহাদ কি খেতে পায় না। দু’লাখ টাকা চেয়ে নিয়ে ওকে ভোট করতে হয়?’’
এর পরই চক্রান্তের ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করেন দিদি। বলেন, ‘‘তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে। এসে সামনের টেবিলে টাকা রেখে তার ছবি তুলে বলছ ঘুষ নিয়েছে! তা হলে তো কারও সঙ্গে দেখাই করা যাবে না!’’ মমতার কথায়, ‘‘কে যে কী মোটিভ নিয়ে দেখা করতে আসছে, কে জানে। আমি টাকা চাইনি আপনার কাছে। আপনি দিতে চাইলেন। এটা ব্ল্যাকমেলিংয়ের একটা খেলা।’’
প্রসঙ্গত, ভোটের সময় নারদ কাণ্ড নিয়ে এমন স্পষ্ট অবস্থান দিদির ছিল না। এমনকী এক সময় এ-ও বলেছিলেন, ‘‘আগে জানলে নিশ্চয়ই ভাবতাম!’’ সেই দিদিই ভাইদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের এ কথাও জানিয়ে দেন, ‘‘প্রশাসনও তোমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। ওঁদের পরিবারও খুব অসম্মানিত হয়েছে।’’
তবে নারদ-অভিযুক্তদের এ ভাবে আড়ালের চেষ্টার নিন্দা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নারদ-কাণ্ডে জল ঢালার চেষ্টা করছেন। ঘুষখোরদের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’ বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর তির্যক মন্তব্য, ‘‘এ তো চুরি কেন হল, তা নিয়ে তদন্ত নয়! চোরকে কেন ধরা হবে, তা নিয়ে তদন্ত!’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘এটা ক্লিন চিট তদন্ত!’’
তৃণমূল সূত্রের মতে, নারদ তদন্তে নেমে ম্যাথু স্যামুয়েলকে জেরা করতে চলেছে পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতারও করা হতে পারে বলে খবর। কার্যত সেই বার্তা দিতেই মমতা এ দিন পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘স্টিং অপারেশনের লাইসেন্স ছিল?’’ ভবিষ্যতে কেউ যাতে তৃণমূলকে আর হুল-জালে জড়াতে না পারে, সে জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ইদানীং কাউকে তাঁর সঙ্গে নিজস্বী পর্যন্ত তুলতে দেন না। ‘‘বলা যায়, কার কী মতলব রয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy