এদিন ম্যাল চৌরাস্তা থেকে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙের জন্য ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ দার্জিলিং প্রকল্পের সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন জনজাতির তরফ থেকে এই ধরনের উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করার দাবি রয়েছে। কিন্তু একাধিক এই ধরনের পর্ষদ তৈরি করাটাও সম্ভব নয়। আমরা দেখব, যে বোর্ড বা পর্ষদগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলির আওতায় অন্য জনজাতিদের রেখে কাজ করা যায় কি না।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘ভুটিয়া উন্নয়ন পর্ষদ গঠন হবে। আমরা ওই পর্ষদকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দও করছি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাহাড়ের ১১ জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে রাজ্য। উল্লেখ্য, ওই তফসিলি উপজাতির মর্যাদা আদায় নিয়ে মোর্চা দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করেছে। সম্প্রতি মোর্চা সভাপতি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিঙের সঙ্গে দেখা করে এক সঙ্গে দিল্লিতে বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার কথাও বলেছেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ভুটিয়া উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের ঘোষণার খুশি অল ইন্ডিয়া ভুটিয়া কমিটি। সংগঠনের সভাপতি পালদেন ডি ভুটিয়া বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভুটিয়া বোর্ড গঠনের ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। গত ২০১৩ সাল থেকে এই দাবিতে আমরা সরব হয়েছি। এর আগেও বেশ কয়েকবার দাবি আদায়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।’’
সংগঠনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পাহাড়ে ভুটিয়া সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। ইয়লমু, টিবেটান, ডেনজং, ডুকপা, টোটো, শেরপা এবং কাগাটি মিলিয়ে ভুটিয়াদের সাতটি আলাদা আলাদা গোষ্ঠীও রয়েছে। তবে সকলেই ভুটিয়া কমিটির সদস্য।
২০১৩ সালে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে লেপচাদের জন্য মায়েল লায়াং লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করেন। মোর্চা সে বারও এর বিরোধিতা করেছিল। এমনকি, এর প্রতিবাদে সে বছর ৯ ফেব্রুয়ারি ১২ ঘন্টার বন্ধও ডাকে মোর্চা। রাজ্য মন্ত্রিসভায় তা পাশ হওয়ার পর বিরোধিতায় সামিল হল মোর্চার সর্ব স্তরের নেতারা। এর পরের বছর, ২০১৪ সালে ২১ জানুয়ারি মিরিক থেকে তামাঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ম্যাল চৌরাস্তা থেকে মুখ্যমন্ত্রী আবার শেরপা কালচারাল বোর্ডের গঠনের কথা বলেন। সেই সময় মোর্চা নেতারা জানান, এই ধরনের সব পর্ষদ জিটিএ-র অধীনে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। এতে প্রতিটি জনজাতির সঠিক ভাবে উন্নয়ন হবে।
যদিও এদিন কোনও মোর্চা নেতাই নতুন ভুটিয়া বোর্ড নিয়ে কিছু বলতে চাননি। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক তথা জিটিএ সদস্য রোশন গিরি বলেন, ‘‘এখনই কোনও মন্তব্য আমরা করছি না।’’
এদিন ম্যালের অনুষ্ঠানে মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গও উপস্থিত ছিলেন। জিটিএ এবং সরকার যৌথ ভাবে এই প্রকল্পের কাজ করবে। বিভিন্ন খাত মিলিয়ে এরজন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্রছাত্রীদের শপথ থেকে মানববন্ধনও হয়। ৭৫ হাজার শৌচালায়, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন, ঝোরার সংস্কার, রেন ওয়াটার হারভেস্টিং, সবুজায়ন, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ হবে।
অনুষ্ঠানে গুরুঙ্গ শুধু বলেন, ‘‘আমরা খুশি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প পাহাড় থেকে শুরু করলেন। পাহাড়ের আগামী প্রজন্মের জন্য এই প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করে প্রকল্পটি সফল করতে হবে।’’