Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

সৎসাহস থাকলে আচার্য বিলে সই করুন! মমতার হুঁশিয়ারি বোসকে, পরামর্শ বিজেপিতে যোগ দেওয়ারও

২০২২ সালের জুন মাসে ধনখড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যপদ থেকে সরাতে বিল পাশ হয় বিধানসভায়। কিন্তু সেই বিলে ধনখড় তো বটেই, পরের রাজ্যপাল লা গণেশন এবং বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দ বোসও স্বাক্ষর করেননি।

Mamata Banerjee

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৩ ১৫:২৬
Share: Save:

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ওপর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী! বুধবার ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তাঁকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারি দিয়ে আচার্য বিলে তাঁকে স্বাক্ষর করতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে দিলেন বিজেপিতে যোগদানের পরামর্শও।

চড়া সুরে মমতা বলেন, ‘‘আমরা এখানে ঝাড়গ্রামে ইউনির্ভাসিটি করে দিয়েছি। আমাদের গভর্নর মহাশয় এখন কালো চশমা পরেন। তিনি পরতেই পারেন, একটার জায়গায় ১০টা। জ্ঞান দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আমরা নাম পাঠালেও (উপাচার্য নিয়োগ) করেন না। নিজের ইচ্ছে মতো কেরল থেকে লোক নিয়ে এসে বসিয়ে দিচ্ছে। কেরলের অনেক বন্ধুই আমাদের এখানে থাকছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভিসি (উপাচার্য) হতে গেলে কমপক্ষে ১০ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনকে ভিসি করেছেন, তিনি আবার কেরলে আইপিএস ছিলেন। যাঁর সঙ্গে এডুকেশনের কোনও যোগাযোগ নেই।’’

মমতা আরও বলেন, ‘‘এখানে ঝাড়গ্রামে ইউনির্ভাসিটি করে দিয়েছি। না আছে ভিসি, না আছে রেজিস্ট্রার। কারণ পাঠালেই উনি ওঁর মতো বিজেপির লোককে বসিয়ে দিচ্ছেন। আমার মুখ্যসচিবকে অনুরোধ, ইমিডিয়েট আমাদের যে রেকমেন্ডেশন সেই রেকমেন্ডেশন হায়ার এডুকেশন থেকে করে দিতে। আগে এক জন রেজিস্ট্রার অন্তত পাঠান। পরীক্ষার সার্টিফিকেটও দিতে পারছে না। আমি ইউনির্ভাসিটি করে দিচ্ছি, আর উনি দালালি করে আটকে দিচ্ছেন। আমরা এটা মানব না। স্ট্রেট মানব না। ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমিডিয়েট ভিসি এবং রেজিস্ট্রার আমি আজকেই করে দেব।’’

এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘ভিসি করতে গেলে তিনটে নাম পাঠাতে হয়। যদি আপনার সৎসাহস থাকে, অ্যাসেম্বলিতে যে বিলটা পাশ হয়েছে, যে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারপার্সন হবেন, চ্যান্সেলর হবেন। সেই বিলটা আপনি সই করে দিন। ইংরেজ আমলে একটা আইন ছিল। তখন মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আজকে আমাদের এখানে ৪৪-৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গিয়েছে। উনি এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভিসি কে হবে ঠিক করবেন?’’ প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে জগদীপ ধনখড় রাজ্যের রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত শুরু হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে ধনখড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যপদ থেকে সরাতে বিল পাশ হয় বিধানসভায়। কিন্তু জুলাই মাসেই ধনখড় দেশের উপরাষ্ট্রপতি হয়ে গেলে দায়িত্বে আসেন লা গণেশন। ধনখড় যেমন সেই বিলে স্বাক্ষর করেননি। তেমনই আবার অস্থায়ী রাজ্যপাল গণেশনও সেই বিলে সই করেননি। গত বছর নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের দায়িত্বে আসেন বোস। প্রথম দিকে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্ক গড়ে উঠলেও পরে নানা কারণে রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সুসম্পর্কের সময়েও আচার্য বিলে তাঁর স্বাক্ষর আদায় করতে পারেনি নবান্ন। পরে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল দূরত্ব বাড়লে একে একে রাজ্য সরকারের দেওয়া আধিকারিকদের রাজভবনের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে সরিয়েছেন বোস। আর উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে আনন্দ বোসের। আর বুধবার রাজ্যপালকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বিলে স্বাক্ষর করার কথা বলেছেন মমতা।

পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে বিজেপিতে যোগদানেরও পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের ডেকে বলছে, দুর্নীতি কাকে বলে? ছাত্রছাত্রীদের ডেকে বলবে দাঙ্গা কাকে বলে? এটা রাজ্যপালের কাজ? রাজ্যপালের আসনটা হচ্ছে সাংবিধানিক আসন। তার কাজ সংবিধানে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া আছে। সেই কাজ তিনি করবেন। কিন্তু তিনি কী করছেন? তিনি সব কিছু এ ভাবে করতে পারেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ভাবে সব কিছু টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারেন না। বলা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী যা করছে আমিও তাই করব। আপনি তা হলে দল তৈরি করুন। ইলেকশনে জিতে আসুন। বিজেপির হয়েই ইলেকশনে দাঁড়ান। তার পর যদি কোনও দিনও জিততে পারেন। ১০০ বছরেও হবে না। তত দিনে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে।’’

এ ছাড়াও, উচ্চশিক্ষা দফতরের অধীনে সাঁওতালি, নেপালি, রাজবংশী, কুড়মি ইত্যাদি ভাষার জন্য সাব রিজিওনাল ডেডিকেটেড ব্রাঞ্চ তৈরির ঘোষণাও করেছেন মমতা। এই ব্রাঞ্চ মারফত এই সমস্ত ভাষার শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের উন্নয়ন করা হবে। ভাষা উন্নয়নের কোনও প্রস্তাব এলে তা খতিয়ে দেখে এই ব্রাঞ্চ সিদ্ধান্তও নিতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভাষাভাষীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেল তৈরি থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক উন্নয়নের বিষয়েও দেখভাল করবে ব্রাঞ্চটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee CV Ananda Bose Jhragram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE