তিস্তার তাণ্ডবে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কাকভোরে সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে যে বিপর্যয়ের সূত্রপাত, তা ভয় ধরাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। কারণ, সিকিম এবং দার্জিলিং পাহাড় পেরিয়ে তিস্তা সমতলে প্রবেশ করছে জলপাইগুড়ি জেলায়। ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যসচিবকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের দিকে ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গিয়েছেন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য এবং আইএএস আধিকারিকেরা।
বুধবার কাকভোরে উত্তর সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। বিপুল পরিমাণ জলরাশি ধরে রাখতে পারেনি বাঁধ। ফলে লোনক হ্রদ ফেটে পড়ে সেই জল তিস্তার বুক দিয়ে বইতে শুরু করে। এর জেরে সেই সময় সিকিমে তিস্তার জলস্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। দু’কূল ছাপিয়ে নীচের দিকে ছুটতে থাকে তিস্তা। নদীর রুদ্ররূপ এমনই ছিল যে, আশপাশে কিছুই আর অক্ষত নেই। নদীর খুব কাছাকাছি এলাকায় ছিল একটি সেনাছাউনি। তা সম্পূর্ণ ভেসে গিয়েছে। নিখোঁজ ছাউনির ২৩ জন সেনা জওয়ান। স্রোত এমনই প্রবল ছিল যে, জলের তোড়ে ভেসে যায় সেনার ৪১টি গাড়ি। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিস্তার হড়পা বানে বহু সাধারণ মানুষও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি, রাস্তা। সিকিমের সঙ্গে বাংলা তথা অবশিষ্ট ভারতের মূল সংযোগরক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ গিলে নিয়েছে তিস্তা। পাহাড়ি সড়কের একেবারে তলায় যেখানে মাটির আস্তরণ থাকে, তিস্তার জলের তোড়ে তা-ও ভেসে যাচ্ছে। ফলে গোটা জাতীয় সড়কই যে কোনও সময় তিস্তার গর্ভে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তিস্তার বুক দিয়ে বিপুল পরিমাণ জল ক্রমশ এগিয়ে আসছে উত্তরবঙ্গের দিকে। ফলে জলপাইগুড়ি জেলা-সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই বন্যা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) বার্তা দেন। ২৩ জন সেনা জওয়ানের নিখোঁজ হওয়ার খবরের কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তিনি উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি, মমতা মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার জন্য। যাতে উদ্ধারকাজে রাজ্যের তরফে সমস্ত রকম সহায়তা করা যায়। তিস্তা সিকিম থেকে নেমে এসেছে উত্তরবঙ্গে। সেখানে যাতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে না যায় সে জন্যও প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কালিম্পং, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির নীচু এলাকা থেকে মানুষকে সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়েই রাজ্যের সিনিয়র মন্ত্রী এবং সিনিয়র আইএএস আধিকারিকরা উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা হয়ে গিয়েছেন।
২৩ জন সেনা জওয়ান এবং সেনার ৪১টি গাড়ি ভেসে যাওয়ার খবর ভয় ধরাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির বিশেষ কোনও খবর পাওয়া যায়নি। সিকিমের স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তিস্তা দু’কূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তা। কিন্তু কত মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন বা ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, সে সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তিস্তার বিপুল জল সমতলে প্রবেশ করার পর পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে তা আঁচ করার চেষ্টা করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। সামগ্রিক ভাবে তিস্তায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। নদীর আশপাশের নীচু এলাকা থেকে মানুষজনকে সরানোর কাজও শুরু হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এ দিকে তিস্তার অতিরিক্ত জলের জেরে নদীর জলস্তর এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। গজলডোবায় সেই চিহ্ন মিলেছে। ক্রমশ সেই জল এগোচ্ছে জলপাইগুড়ি শহরের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy