Advertisement
২৬ মে ২০২৪

বন্ধ করুন বেআইনি সব খাদান, নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

সোমবার ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ‘‘রাজ্যে কোনও বেআইনি খাদান চলবে না।’’

প্রশাসক: ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার ডিএম অফিসের সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

প্রশাসক: ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার ডিএম অফিসের সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

রবিশঙ্কর দত্ত 
জামবনি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share: Save:

ইমারতি ব্যবসার সিন্ডিকেট বন্ধ করতে আগেই মুখ খুলেছিলেন। এ বার বেআইনি খাদানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ‘‘রাজ্যে কোনও বেআইনি খাদান চলবে না।’’

রাজারহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সিন্ডিকেট-রাজ তৃণমূলের একটি বড় অংশের ‘আয়ের উৎস’ হয়ে উঠেছিল। তাণ্ডব মাত্রাছাড়া হয়ে উঠলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করেন এবং বিষয়টি আপাতত কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।

একই ভাবে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আসানসোল প্রভৃতি এলাকায় বেআইনি বালি-খাদান, পাথর-খাদান ও খনি ব্যবসা নিয়েও শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। বিপুল টাকার এই অবৈধ ব্যবসায় কারা ‘প্রকৃত লাভবান’, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ও অভিযোগ বড় কম নয়।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বালি এবং পাথর খাদানের কথাই বলেছেন। সরাসরি কয়লা খাদান প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু যে হেতু তিনি সব অবৈধ খাদানই বন্ধ করার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, তাই সব ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে বলে প্রশাসনের বড় অংশের অভিমত।

প্রশাসনিক কাজ তদারকি করতে এ দিন ঝাড়গ্রামের বৈঠকে জেলার বেআইনি খাদানের প্রসঙ্গ নিজেই তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক কার্যত শুরুই করেন ঝাড়গ্রামে বেআইনি বালি ও পাথর খাদান চলছে কি না, তা জানতে চেয়ে। তার জবাবও দিতে শুরু করেছিলেন জেলাশাসক আয়েষা রানি। কিন্তু তাঁকে এক রকম থামিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বারবার সব ডিএম, এসপি-কে বলা হয়েছে, বেআইনি খাদান বন্ধ করতে হবে। কিছু বন্ধ ছিল। আবার চলছে। নদীর সর্বনাশ হচ্ছে। ব্রিজের ক্ষতি হচ্ছে।’’ তার পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ করে খায়। এই টাকা সরকারের ঘরেও যায় না, পার্টির ঘরেও যায় না। বিপদে পড়ে প্রশাসন আর মানুষ।’’

বেআইনি খাদানের আলোচনার মধ্যেই ঝাড়গ্রামের বিএলআরও-দের সঙ্গে পরিচয় সেরে নেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থানার অফিসার ইনচার্জদের বলেন, “সরকারের রাজস্ব আসছে না। আর আপনারা চোখে দেখেও রক্ষা করছেন না! ’’ আধিকারিকদের একাংশের মনোভাবে বিরক্তি প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘‘দু’বছরের জন্য আইসি হলাম। যা করার করে নিলাম, এটা করবেন না। মানুষের সেবা করতে এসেছেন।’’ তার পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব মলয় দে-কে। বলেন, ‘‘মুখ্যসচিব সব ডিএম-কে বলে দেবেন। ডিজি সব এসপি-কে বলে দেবেন।’’

সরকারি আবাস প্রকল্পটির টাকা নিয়ে দুর্নীতির ব্যাপারেও প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গরিব মানুষ বাড়ি পাবে। এটাই সরকারের সিদ্ধান্ত। মাঝখান থেকে কেউ যেন কমিশন না খায়।’’ বাড়ির টাকা অন্য কাউকে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই বৈঠকে বন দফতরের কাজ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। চলতি বছরে হাতির হানায় প্রাণহানির সংখ্যা জেনে দফতরের এক কর্তাকে তিনি বলেন, ‘‘কী করেন আপনারা? কাজ করেন? হাতির হানায় এত মানুষ মারা যাচ্ছেন।’’

এ দিন সরকারি প্রকল্প সময়ে শেষ করার উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব দফতরের আধিকারিকদের ‘রাইট টু পাবলিক সার্ভিস’ আইনের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE