রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফেরার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিন্রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের আবহে গত ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে প্রথম এই ডাক দিয়েছিলেন মমতা। সোমবার বোলপুরের দলীয় কর্মসূচি থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানোর ব্যাপারে ‘স্কিম’ (প্রকল্প) তৈরি করে ফেলেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, সোমবার ফের এক বার ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে কমিশনের বিরুদ্ধে আরও সুর চড়ালেন মমতা।
বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে সোমবার বোলপুরে মিছিল করেন মমতা। মিছিল শেষে জনসভায় বক্তৃতা করতে উঠে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী সরব হন ভিন্রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘অত্যাচারের’ বিবরণ তুলে। সেই সূত্রেই তিনি নিশানা করেন বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিকে। তবে তাঁর আক্রমণের বর্শামুখ ছিল মূলত অসম এবং হরিয়ানা সরকারের দিকে। মমতা স্মরণ করিয়ে দেন, ভিন্রাজ্যে যেমন বাংলার ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আছেন, তেমনই এই রাজ্যেও বিভিন্ন রাজ্যের দেড় কোটি মানুষ রয়েছেন। তবে একই সঙ্গে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি সব ভাষাভাষী মানুষকে নিয়ে চলতে চান। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি। জানান যে, বীরভূমের প্রশাসনিক বৈঠকেই তাঁদের জন্য প্রকল্প তৈরি করে ফেলেছে রাজ্য। তাঁরা রাজ্যে এলে কাজের অভাব হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরিযায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বলুন, কবে আসবেন? আমরা আপনাদের ট্রেনে করে নিয়ে আসব। যেমন কোভিডের সময়ে এনেছিলাম। চলে আসুন। কোনও দরকার নেই বাইরে থাকার। যারা ভালবাসে না, তাদের ওখানে থাকবেন না। এখানে আপনাদের রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে দেওয়া হবে। আপনাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হবে।” প্রসঙ্গত, সোমবারের প্রশাসনিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিটি ছত্রেই ছিল বাংলা ও বাঙালি। বাংলার মনীষীদের নাম করে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার আন্দোলনে কারা পথ দেখিয়েছিল? বাংলার মানুষ। জাতীয় সঙ্গীত কে লিখল? বুড়়িবালামের তীরের লড়াই কী করে ভুলে গেলেন?” একই সঙ্গে মমতার হুঁশিয়ারি, “দরকার হলে জীবন দেব। আমার ভাষা, কারও ভাষা কেড়ে নিতে দেব না।” রোহিঙ্গা-বিতর্কে মুখ খুলেও বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা। বলেন, “যাকে তাকে রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছে, যাকে তাকে বাংলাদেশি বলে পুশব্যাক করে দিচ্ছে। অথচ তাদের কাছে সব নথি রয়েছে। এত রোহিঙ্গা পেলে কোথায়?” ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের মতোই পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা জানান, বিশ্বে এত রোহিঙ্গাই নেই, যতটা এই রাজ্যে রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
বীরভূমের প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই বাংলার বুথ স্তরের আধিকারিক বা বিএলও-দের কাছে মানুষজনকে অযথা হেনস্থা না-করার আর্জি জানিয়েছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই বোলপুরের জনসভা থেকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়ান মমতা। তৃণমূলনেত্রী বলেন, “বাংলায় (ভোটার তালিকা থেকে) নাম বাদ দিয়ে দেখুন। ছৌ নাচ দেখবেন, ধামসা-মাদল দেখবেন। ঢোল আছে ঢোল, আছে কাঁসরঘণ্টা-শঙ্খও। শুনেছেন কখনও? বাজিয়ে দেব দামামা।” ভোটমুখী বিহারে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করছে কমিশন। এই রাজ্যে কমিশনের সমীক্ষকদের সঙ্গে রাজ্যের মা-বোনেরাও বাড়ি বাড়ি যাবেন কি না, সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন মমতা। কমিশন ‘ডবল ইঞ্জিন সরকারে’র কথায় চলছে বলেও তোপ দাগেন তিনি।
প্রশাসনিক বৈঠকের পরেই প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় পদযাত্রা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মিছিলে পা মেলানোর জন্য শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, দলীয় পদাধিকারীদের ধন্যবাদ জানান মমতা। নেন জেলার কোর কমিটির সদস্য অনুব্রত মণ্ডলের নামও। সভার শেষে বাংলার অপমানের বিরুদ্ধে সকলকে পথে নামার আহ্বান জানান তিনি।