বিহারে নির্বাচন কমিশন যে ভাবে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) করেছে, বাংলায় তা হবে না। বৃহস্পতিবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দল যখন রাজ্যে, সেই সময়েই এসআইআর বিরোধিতায় আরও একবার সরব হলেন মমতা। পাশাপাশি, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালকেও হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেছেন, ‘‘বিহারে (এসআইআর) করতে পেরেছিলেন। কারণ, ওখানে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার আছে। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আলাদা।’’ এর পরেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একদিকে বাংলায় দুর্যোগ চলছে। সামনে কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, ছটপুজো রয়েছে। আর সেই সময়ে নির্বাচন কমিশনের চার জন অফিসার বিএলও-দের ডেকে হুমকি দিচ্ছেন। বলছেন, তাঁদের ইচ্ছেমতো কাগজ তৈরি করতে হবে।’’ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের ‘বসিয়ে’ রেখে রাজ্যের সিইও ‘অতি সক্রিয়তা’ দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বেশি দড়! রাজ্যের সিইও-র বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। সময় হলে বলব। তিনি নিজে নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। আশা করব, তিনি বেশি বেড়ে খেলবেন না!’’
এর আগেও এসআইআর নিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন, একজনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে এক লক্ষ লোক নিয়ে গিয়ে দিল্লিতে কমিশনের দফতর ঘেরাও করবেন। তবে বৃহস্পতিবার আরও এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককেই সতর্ক করতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং তা করলেন রাজ্যের সচিবালয়ে বসে। মুখ্যমন্ত্রী পাশে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মমতা মনে করালেন দুর্নীতির অভিযোগের কথাও। সময়ের নিরিখে যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে অনেকের অভিমত।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, ভোটার তালিকার যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। জানুয়ারি মাসের যে কোনও সময়ে তা হবে বলে দাবি করেন শুভেন্দু। সময়ের হিসাব দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের ৫ মে-র মধ্যে নতুন সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। না হলে রাজ্যের শাসনভার সংবিধান মেনে চলে যাবে রাজ্যপালের হাতে। কারণ, বর্তমান সরকারের মেয়াদ ওই পর্যন্তই।’’ সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘যারা বলছে তিন মাস, চার মাস ধরে সব প্রক্রিয়া চলবে, তারা ভুল বলছে। তাদের সূত্র ঠিক নয়।’’ বিরোধী দলনেতার দাবি, সারা ভারতে যেখানে ভোটার বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ১০৫টি বিধানসভায় ভোটার বৃদ্ধির হার ২০-৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ লাগোয়া জেলাগুলিতেই এই বৃদ্ধি বলে দাবি তাঁর।
মমতা নবান্ন থেকে বলেন, ‘‘১৫ দিনের মধ্যে ফাইনাল ভোটার তালিকা প্রকাশ করা অসম্ভব। ঈশ্বর এসেও এই কাজ করতে পারবেন না।’’ ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার কোলাঘাটে পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রামের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন সিইও মনোজ। সূত্রের খবর, সেখানেও জেলাগুলিকে এসআইআর কার্যকর করার ব্যাপারে ‘কড়া’ বার্তা দেওয়া হয়েছে। মমতার অভিযোগ, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই এই সমস্ত কাজকর্ম হচ্ছে। যার ফলে মানুষের ভোটাধিকার নিয়েই সংশয় তৈরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এসআইআর-এর কাজ শুরুর আগে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কী করে বলেন যে, দেড় কোটি ভোটারের নাম বাদ দিতে হবে? তা হলে কি পার্টি অফিসে পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে আর নির্বাচন কমিশন তাতে সিলমোহর দিচ্ছে? কমিশনের কাছ থেকে আমরা নিরপেক্ষতা আশা করেছিলাম।’’ অসম সরকার কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে এনআরসি-র নোটিস পাঠাচ্ছে সেই প্রশ্নও তোলেন মমতা।