Advertisement
E-Paper

‘দাদাগিরি’ থেকে বৃদ্ধকে বাঁচালেন মমতা

এলাকার তোলাবাজদের খপ্পর থেকে এক বৃদ্ধকে ‘রক্ষা’ করতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হল। ঘটনাটি বিধাননগর পুর নিগমের কেষ্টপুরের।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
সুনীল বিশ্বাসের (ইনসেটে) সেই বাড়ির সামনে পুলিশি প্রহরা। শনিবার। ছবি : শৌভিক দে

সুনীল বিশ্বাসের (ইনসেটে) সেই বাড়ির সামনে পুলিশি প্রহরা। শনিবার। ছবি : শৌভিক দে

এলাকার তোলাবাজদের খপ্পর থেকে এক বৃদ্ধকে ‘রক্ষা’ করতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হল। ঘটনাটি বিধাননগর পুর নিগমের কেষ্টপুরের। সেখানে রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা, ৭৮ বছরের সুনীল বিশ্বাস নিজের বাড়িতে একটি ঠাকুরঘর তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন তিন-চার মাস ধরে। অভিযোগ, প্রথমে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নিজে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। পরে ওই এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের নাম করে এক দল যুবক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুনীলবাবুর বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে কাজ বন্ধ করার জন্য হুমকি দিতে থাকে। উপায়ান্তর না দেখে বৃদ্ধ দু’দফায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বিষয়টি জানান। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে নির্দেশ পাঠিয়ে পুলিশি পাহারায় শনিবার সকালে সুনীলবাবুর বাড়ির নির্মাণকাজ সমাধা করা হয়।

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তোলাবাজি বা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক বার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সব ঘটনায় অনেক সময়ে দলীয় নেতানেত্রীর নাম জড়ানোয় তাঁদের সতর্কও করেছেন তিনি। কিন্তু সেই প্রবণতা যে বন্ধ হয়নি, কেষ্টপুরের ঘটনা ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রত্যাশিত ভাবেই এ বারও এলাকার কাউন্সিলর থেকে সাংসদ, সকলে ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন।

ঠিক কী ঘটেছিল?

বৃদ্ধ জানান, নির্মাণের কাজ আইন মেনে হচ্ছে না বলে বিধাননগর পুর নিগমের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনুপম মণ্ডল প্রথমে আপত্তি জানান। কাজ বন্ধ করে দিতে হয় সুনীলবাবুকে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বাড়িতে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে দেখা করেন জানতে পেরে, জুন মাসের ২২ তারিখ সুনীলবাবু কালীঘাটে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘অনুমোদিত পুরনো নকশার বাইরে কতটা কাজ করা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি সেই পরিবর্তিত নিয়মের কথা কাউন্সিলরকে বললেও তিনি আমার কথা শোনেননি। তাই প্রথম বার কালীঘাটে গিয়ে মু্খ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। তাঁকে সব কথা খুলে বলি। তখন তিনিই আমায় আশ্বস্ত করে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।’’ বৃদ্ধ জানান, যেহেতু বাড়ি-ঘর সংক্রান্ত ব্যাপার, তাই তাঁকে কালীঘাট থেকেই বলা হয় এক বার কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করতে। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘৫ জুলাই মেয়রের সঙ্গে দেখা করি। মেয়র নিজে আমাদের কাউন্সিলর অনুপমবাবুকে টেলিফোন করে আমার বাড়ির কাজ বন্ধ না করার জন্য নির্দেশ দেন।’’ শোভনবাবুর ফোনের পরে কাউন্সিলর তাঁর আপত্তি তুলে নেন। তিনি আবার ঠাকুরঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

সুনীলবাবু জানান, এর পরে গত শুক্রবার সকালে আবার রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের নাম করে এক দল যুবক তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। কাজ বন্ধ না করলে মিস্ত্রিদের মারধর করার ভয়ও দেখানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কথাও ওই সব লোকজন পাত্তা দেয়নি বলেই অভিযোগ বৃদ্ধের। তিনি বলেন, ‘‘আবার আমি বাধ্য হয়ে কালীঘাটে ছুটি। আবার দেখা করি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, বিষয়টি জেনে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে নিজে দোলা সেনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দোলার ফোন তখন বন্ধ ছিল। এর পরেই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের এক আধিকারিককে তিনি নির্দেশ দেন দোলার সঙ্গে কথা বলতে। এবং পুলিশি পাহারায় ওই বৃদ্ধের বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ করাতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ শুক্রবার রাতেই পৌঁছে যায় বাগুইআটি থানায়। শনিবার সকাল থেকে পুলিশি পাহারায় সুনীলবাবুর ঠাকুরঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করে সাংসদ দোলা সেন বলেন, ‘‘আমি অবাক। আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না। আমি পরে সুনীলবাবুর সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করেও সেই একই কথা জানিয়েছি।’’

সব অভিযোগ অস্বীকার করে এলাকার কাউন্সিলর অনুপমবাবুর সাফাই, ‘‘সুনীলবাবুর বাড়ির কাজ নিয়ে পাড়ার লোকজন আপত্তি করেছিলেন। আমি তিন দিন কলকাতায় ছিলাম না। শুক্রবার রাতে ফিরেছি। আমি জানি না, কী হয়েছে।’’

এলাকার খবর, হামেশাই সেখানে পুর আইন লঙ্ঘনের ফিকির খুঁজে সাধারণ গৃহস্থ বাড়ির নির্মাণের কাজ আটকে তোলাবাজির চেষ্টা হয়। এক ঠিকাদারের কথায়, ‘‘সকলে সুনীলবাবুর মতো সাহস রাখেন না। তাই বাধ্য হন তোলাবাজদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, বাগুইআটি থানায় ঘটনাটি জানিয়ে অ়জ্ঞাতপরিচয় যুবকদের বিরুদ্ধে একটি জেনারেল ডায়েরি করেছিলেন সুনীলবাবু। অনুপম কিংবা দোলা, দু’জনেই জানিয়েছেন ওই ‘মাস্তানদের’ তাঁরা চেনেন না। কিন্তু তাঁদের নাম নিয়ে ওই বৃদ্ধকে শাসানোর অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কেন ওই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের জন্য সাংসদ কিংবা কাউন্সিলর পুলিশকে কোনও নির্দেও দেননি, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুর নিগম তো কারও বাড়ির কাজ আটকায়নি। বিষয়টি আমার জানা নেই। পরে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

miscreants old women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy