Advertisement
E-Paper

ঢাক বাজান, মাদল বাজান, শুরু হয়ে গেল আগমনি

মহালয়া হল না। টোটোর স্ট্যান্ডে সবে বিশ্বকর্মা পুজোর মিটিংয়ের নোটিস পড়েছে। অথচ শেষ আষাঢ়েই আগমনি শুরু হয়ে গেল! বুধবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শততম প্রশাসনিক সভার মঞ্চে উঠতেই ঢ্যানাক-ঢ্যানাক করে ঢাক বাজতে শুরু করেছিল।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৪:৪২

মহালয়া হল না।

টোটোর স্ট্যান্ডে সবে বিশ্বকর্মা পুজোর মিটিংয়ের নোটিস পড়েছে।

অথচ শেষ আষাঢ়েই আগমনি শুরু হয়ে গেল!

বুধবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শততম প্রশাসনিক সভার মঞ্চে উঠতেই ঢ্যানাক-ঢ্যানাক করে ঢাক বাজতে শুরু করেছিল। আর তাতেই খুশি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আজ গর্বের দিন। ঢাক বাজান, ধামসা-মাদলও বাজান। আজ থেকেই আগমনি সঙ্গীত শুরু হয়ে গেল।”

এ আর এমন কি কঠিন?

(হীরক রাজার দিনকে রাত করার আব্দার শুনে এমনই তো বলেছিলেন রাজজ্যোতিষী!)

পুজো মানে যদি হইচই, হুল্লোড়, ভূরিভোজ হয়, তা হলে একেবারেই কঠিন নয়। আগমনি-টাগমনি না বলে মহাষ্টমী বললেও বাড়াবাড়ি হয় না!

বর্ধমান শহরে যে জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ঝোলানো হয়েছিল, ঘটনাচক্রে সেটির নাম ‘উল্লাস মোড়’। সেই মোড় থেকে পুরনো জিটি রোড ধরে বাদামতলা মোড় পর্যন্ত কার্যত ঢেকে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে।

কোথাও কাটআউট, কোথাও ফ্লেক্স, কোথাও ফেস্টুন। কোথাও ‘কন্যাশ্রী’, কোথাও ‘যুবশ্রী’, কোথাও নির্মল বাংলা। প্রায় সবেতেই মমতার মুখ। উল্লাস মোড় থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত গুনে-গুনে ৪৭টি, কার্জন গেট থেকে সংস্কৃতি লোকমঞ্চ পর্যন্ত ৫৩টি, দুইয়ে মিলে পাক্কা ১০০ মুখ। শততম সভা কি না, তাই সবই শয়ে-শয়ে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক পদমর্যাদার এক অফিসার অবশ্য দাবি করেন, “এটা নেহাত কাকতালীয়!” তবে ৫০ শিলান্যাস এবং ৫০ উদ্বোধন মিলিয়ে একশো প্রকল্প নিশ্চয়ই কাকতালীয় নয়। সভামঞ্চে একশো উপভোক্তাকে ডাকাও কাকতালীয় না। তৃণমূলের পতাকার সংখ্যা অবশ্য শয়ে আঁটেনি। নামে প্রশাসনিক সভা হলেও তার হিসেব হাজারে। বীরহাটা মোড় থেকে উল্লাস মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’ধার ঝান্ডায় ঢাকা। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পালশিট থেকে বর্ধমান পর্যন্ত গোটা রাস্তাও জোড়াফুলে ছাওয়া।

কার্জন গেটের কাছ থেকেই আস্তে হয়ে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। দু’ধারে দাঁড়ানো লোকেদের দিকে কখনও নমস্কার করেছেন, কখনও হাত নেড়েছেন মমতা। এরই মধ্যে কড়া পাহারার ফাঁক গলে এক মহিলা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির কাছে চলে যান। হাতে চিঠি ভরা দাবি। মমতার হাতেই সেই চিঠি গুঁজে দেন তিনি।

সংস্কৃতি লোকমঞ্চের সামনেও কড়া পাহারা। কিন্তু কনস্টেবলদের মন উচাটন। লোকমঞ্চের পিছনেই অতিথি অভ্যাগতদের জন্য রান্নাবান্না চলছে। মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের লোকেদের জন্য ৫১ পদ। পদস্থ আধিকারিক-সহ বাকি তিনশোরও বেশি অতিথির জন্য ২৫ পদের বুফে। সকাল থেকেই বাতাসে ম-ম কখনও চিংড়ি, কখনও ফিশ ফ্রাই। পেটে খেলে পিঠে সয়! ওঁরা পেটে কিল মেরে ডিউটি দিচ্ছেন, ওঁদের ভাগ্যে শুধু পুলিশি টিফিন। নাক সুড়সুড় সেই সব কর্মীদেরও যাঁরা নানা কাজ নিয়ে আশপাশে ঘুরঘুর, কিন্তু বরাদ্দ স্রেফ প্যাকেটে ঠান্ডা ভেজ কাটলেট।

প্রশাসনিক সভা সেরে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ লাইনের দিকে রওনা দিলেন, তখন দুপুর সাড়ে ৩টে। অনেক আগে থেকেই তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে লাইন দিয়ে লোক ঢুকেছে। খাকি উর্দিরা বার কয়েক গলা ঝেড়ে আপত্তি করতে গিয়েছিলেন— ‘না, এটা প্রশাসনিক জনসভা, এখানে তো দলের পতাকা নিয়ে...।’ তৃণমূল কর্মীরা দাবড়ে তাঁদের চুপ করিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় গেটে অনেককেই বলতে গিয়েছে, “দিদির অনুষ্ঠান বলেই পতাকা নিয়ে এসেছি।” মুখ্যমন্ত্রী যখন মঞ্চে বলছেন, তখনও দূর থেকে পতাকা নাড়তে দেখা গিয়েছে অনেককে।

‘ঐতিহাসিক’ সভায় (প্রশাসনের কিছু কর্তার মতে) কী বললেন মমতা?

বললেন, রাজ্যে ৪১টি মাল্টিসুপার হাসপাতাল হবে। ৩০টি মহকুমা হাসপাতালে সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট)। বললেন, ২০০টি কিসান মান্ডি গড়া হবে। ১০০টি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। বললেন, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির সব ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ২০ লক্ষ সাইকেলের বরাত দেওয়া হয়েছে। পরে আরও ২০ লক্ষ দেওয়া হবে। বললেন, কন্যাশ্রীতে ২২ লক্ষ নাম উঠেছে। ১৪ অগস্টের মধ্যে আরও ২ লক্ষ তোলা হবে। বললেন, ৭০টি জায়গায় পথচারীদের বিশ্রামের জন্য ‘পথসাথি’ তৈরি করা হচ্ছে। চালু করা হল ‘তাঁতি সাথি’ প্রকল্প, যাতে না কি ছ’মাসের মধ্যে এক লক্ষ তাঁতিকে তাঁতযন্ত্র দেওয়া হবে।

এবং এ রকম আরও কিছু, যার বেশির ভাগটাই চেনা কথা। শুধু কথা নয় অবশ্য, একশো উপভোক্তাকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা বিলি করেছেন। সূচনা করেছেন ‘বর্ধমান স্মার্ট’ নামে মোবাইল অ্যাপেরও। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের হাতে আইএসও শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেয় ফের ঢাক বাজে। ছৌ, ঝুমুর ও সাঁওতাল নাচ হয়। মঞ্চের এক কোণে দাঁড়িয়ে নাচ দেখতে দেখতে সামনে বসা স্কুলপড়ুয়াদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেখো দেখো কন্যাশ্রী মেয়েরা, ছৌ ও আদিবাসী নাচকে কেমন জিমন্যাস্টিকের মত দেখাচ্ছে। এই চিত্র কোথাও দেখতে পাবে না!”

কনভয় বেরিয়ে যায়। সন্ধে নামে। হাঁফ ছাড়েন প্রশাসনের কর্তারা। এক ফাঁকে মুচকি হেসে গলা নামিয়ে এক ডেকরেটর বলেই ফেলেন, “কনেযাত্রী এল, খেল, ভেঁপু বাজিয়ে চলে গেল। হাতে রইল শতরঞ্চি!’’

abpnewsletters mamata bandopadhyay soumen dutta chief minister west bengal trinamool tmc puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy