তিন-তিন বার ভর্তির সময়সীমা বাড়িয়েও স্নাতক স্তরে অনেক আসন পূরণ করা যায়নি। এই অবস্থায় কলেজগুলির ‘ব্যবস্থা’ করতে হবে বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ব্যবস্থাটা কী, তা ব্যাখ্যা না-করলেও সোমবার তিনি সংরক্ষিত আসন পূরণের উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেন। সংরক্ষিত আসন পূরণের জন্য অধ্যক্ষদের অনগ্রসর শ্রেণির কাছে পৌঁছনোর নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
কলেজ স্তরে ফাঁকা থেকে যাওয়া আসনের বড় অংশই সংরক্ষিত। তা পূরণ না-হওয়ায় সরকার অখুশি, পার্থবাবু এ দিন সেটা স্পষ্ট করে দেন। তিনি জানান, অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের মূল স্রোতে নিয়ে আসার জন্যই তাঁদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। কিন্তু কলেজগুলি জানাচ্ছে, সেই সব আসন ভরছে না। অধ্যক্ষদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কী ভাবে ওই সব পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনো যায়, সেটা দেখতে হবে। সেই জন্য বেশি করে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। শর্ট কাট পথ দেখে লাভ নেই।’’
শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এমনিতেই স্কুল স্তরে তফসিলি ও জনজাতিদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। তার উপরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন পূরণ না-হলে বিরোধী শিবিরে এমন বার্তাই যাবে যে, এই সরকারের আমলে অনগ্রসর শ্রেণিকে শিক্ষার মূল স্রোতে আনা যাচ্ছে না। সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট বলছে, প্রাথমিক স্তরে তফসিলি জাতির পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের হার ১.৯৬ শতাংশ (২০১৫-’১৬ শিক্ষাবর্ষে) থেকে বেড়ে হয়েছে ৩.৪১ শতাংশ। আর উচ্চ প্রাথমিকে স্কুলছুটের হার ৩.৮৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫.০৬ শতাংশ। এই অবস্থায় আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজের সংরক্ষিত আসন পূরণের বিষয়টিও অধ্যক্ষদের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করছে শিক্ষা শিবিরের একাংশ।
অনেক ক্ষেত্রে সংরক্ষিত ফাঁকা আসনকে সাধারণ আসনে রূপান্তরিত করে ছাত্র ভর্তির উদ্যোগ চলছে। তার মধ্যেই অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছতে মন্ত্রীর এ দিনের বার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে শিক্ষাজগৎ। কলেজে ভর্তিকে কেন্দ্র করে এ বারেও আর্থিক লেনদেনের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল। আর্থিক দুর্নীতি চক্রের সেই দাপাদাপিকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। পার্থবাবু এ দিন বিকাশ ভবনে নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ পোর্টালের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি
বলেন, ‘‘প্রথমে হুড়োহুড়ির জন্য অনেকে (ছাত্রছাত্রী) ভুল বুঝে চলে যান। এ বার থেকে যেন না-যান। এ দিকে কলেজগুলিরও ব্যবস্থা
করতে হবে।’’
কী ব্যবস্থা, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, প্রথমে স্নাতকে ভর্তিকে কেন্দ্র করে যে-ভাবে আতঙ্ক ছড়ায়, তাতে ক্ষমতাশালী ছাত্র সংগঠনকে টাকা দিয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হন পড়ুয়ারা। মন্ত্রী সম্ভবত সরাসরি সেই প্রসঙ্গে যেতে চাননি। বোঝাতে চেয়েছেন, হুড়োহুড়ি না-করে ধৈর্য ধরলে সব প্রার্থীই ভর্তি হতে পারবেন। কারণ স্নাতকে প্রার্থীর তুলনায় কলেজের আসন (মন্ত্রীর হিসেবে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ) বেশি।
স্নাতকে ভর্তির সময়সীমা এক দফা বাড়ানোর পরে শুধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই ৪০ হাজার আসন ফাঁকা পড়ে ছিল। তার মধ্যে অন্তত ৩৫ হাজার ছিল সংরক্ষিত (এসসি, এসটি, ওবিসি এবং অন্যান্য)। পরে সেগুলিকে অসংরক্ষিত করার প্রক্রিয়ায় শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও খুব কম আসনই পূরণ হয়েছে। একই সমস্যা প্রেসিডেন্সিতেও।
স্কলারশিপ পোর্টালে এত দিন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের গরিব মেধাবী পড়ুয়ারা আবেদন করতে পারতেন। মন্ত্রী এ দিন জানান, এ বার থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়ারাও আবেদন করতে পারবেন। অর্থের অভাবে কারও শিক্ষা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়, সেই জন্যই এই আয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy