সি এস লেপচা
রেললাইনের ও পাড়ে ঝোপে গিয়ে দেখুন কী হচ্ছে....। কে যেন ফিসফিস করে টহলরত শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচার কানের কাছে কথা ক’টি ভাসিয়ে মিশে গিয়েছিল ভিড়ে। এতটুকুও দেরি করেননি সিপি। দ্রুত ‘সার্চ লাইট’ আনিয়ে তল্লাশি শুরু করলেন এবং গণধর্ষণের হাত থেকে বাঁচালেন দুই তরুণীকে।
সময়: বর্ষবরণের রাত সাড়ে ১২টা। ঘটনাস্থল: শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় সিটি সেন্টারের উল্টো দিকের নির্জন এলাকা।
দু’জনকে বাঁচিয়েও কিন্তু সিপি সন্তুষ্ট নন। কারণ, ওই দুই তরুণীকে ধর্ষণের জন্য নির্জন জায়গায় টেনে নিয়ে গিয়েছিল যে তিন দুষ্কৃতী, তাদের ধরা তো দূর, চিহ্নিত পর্যন্ত করা যায়নি। এমনকী, দুই তরুণীও লোকলজ্জার ভয়ে কোনও অভিযোগ করতে রাজি হননি। তবে সিপি হাল ছাড়তে নারাজ। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, পুলিশ সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘দুই তরুণী নিজেদের নাম-পরিচয় দিতে বা অভিযোগ জানাতে রাজি হননি। সম্ভবত, ছেলেগুলি ওঁদের কিছুটা হলেও পরিচিত। তাই আর জোর করিনি।’’
শিলিগুড়ির সিটি সেন্টার লাগোয়া এলাকায় বর্ষবরণের রাতে দুষ্কর্ম হতে পারে, আগে থাকতেই এমন আঁচ করেছিলেন উত্তরবঙ্গের এডিজি তথা আইজি এন রমেশবাবু। সে জন্য তিনি ওখানে অপেক্ষাকৃত অন্ধকার জায়গাগুলোয় আলো লাগানোর নির্দেশ দেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সেই মতো বাড়তি আলো লাগানোও হয়। কিন্তু, শপিং মলের উল্টো দিকটি এখনও অন্ধকার। সেখানে কয়েক বিঘা জমিতে ঝোপঝাড় হয়ে রয়েছে।
বর্ষবরণের সন্ধ্যা থেকেই ওখানে বেশ কয়েকটি মোটরবাইককে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। বাইক রেখে ঝোপের আড়ালে নেশার আসর বসে বলেও অভিযোগ। বাসিন্দাদের বক্তব্য, তখনই যদি মাটিগাড়া থানা কড়া মনোভাব দেখাত, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে গুটিয়ে যেত ওই আসর। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। এর পরে রাত সওয়া ১২টা নাগাদ সেখানেই একটি ঝোপের আড়ালে দুই তরুণীকে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে দেখেন অনেকে। তিন মত্ত যুবক ওই দু’জনের হাত ধরে টানাটানি করেন, গায়েও হাত দেন বলে অভিযোগ। কয়েক জন প্রতিবাদ করতে যান। তখন দুষ্কৃতীদের এক জন ‘গুলি চালিয়ে দেব’ বলে হুমকি দেয়।
ঘটনাচক্রে, তখনই সিটি সেন্টারের কাছে গাড়ি থেকে নেমে পরিস্থিতি দেখছিলেন সিপি। কেউ এক জন সিপি-র পাশে হাঁটতে হাঁটতে ফিসফিস করে ‘খবর’ দিয়ে ভিড়ে মিশে যান। সঙ্গে সঙ্গে সিপি দেহরক্ষী-সহ কয়েক জন অফিসারকে নিয়ে রেললাইন পেরিয়ে উল্টো দিকে ছুটে যান। তা দেখে ও প্রান্তের অনেকেই পালায়। এর পরে ‘সার্চ লাইট’ আনিয়ে তল্লাশি চালাতেই একটি ঝোপের আড়ালে দুই তরুণীকে অবিন্যস্ত অবস্থায় দেখতে পান সিপি।
কমিশনারকে দেখে দুই তরুণী যেন ধড়ে প্রাণ পান। কিন্তু সিপি-র হাতেপায়ে ধরে তাঁরা বলেন, নাম-ঠিকানা জানাজানি হলে ‘আত্মহত্যা করতে হবে’। পুলিশ তাই বেশি দূর এগোয়নি। তবে সিপি জানান, ওই এলাকায় উঁচু পাঁচিল ও আরও আলো লাগাতে জমির মালিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy