রাজ্যে সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকা খরচ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলল অডিট সংস্থা। একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ওই অডিট করিয়েছিল সর্বশিক্ষা মিশন। সম্প্রতি ওই সংস্থা গত আর্থিক বছরের যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। যার মূল বক্তব্য হল, সর্বশিক্ষা মিশনে যে টাকা যে খাতে খরচ করার কথা ছিল তা হয়নি।
দেশের প্রতিটি শিশু যাতে স্কুলে যেতে পারে সেই উদ্দেশে ২০০১-০২ সালে কেন্দ্র সর্বশিক্ষা প্রকল্প চালু করেছিল। পিছিয়ে পড়া শ্রেণির শিশুদের স্কুলে পাঠানোর জন্য এই প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্কুলবাড়ি নির্মাণ, পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের বেতন— সবই এর আওতায় পড়ে। এর ৮৫ শতাংশ টাকা দেয় কেন্দ্র। বাকিটা দিতে হয় রাজ্যকে।
সদ্য প্রকাশিত অডিট রিপোর্টে জেলা ধরে ধরে অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। স্কুলের চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে কেনা জিনিসের দাম নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তেমনই প্রকল্পের টাকা যে সব খাতে খরচ করার নয়, সেখানে খরচ করে অনিয়ম করা হয়েছে বলে অডিটরেরা অভিযোগ করেছেন।
রিপোর্ট বলছে—
(ক) সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকায় শিক্ষক দিবসের প্রচারের কাজ হয়েছে। টাকার পরিমাণ ২৬ লক্ষেরও বেশি।
(খ) মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী পড়ুয়াদের জন্য বই কিনতে খরচ করা হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা।
(গ) প্রকল্পের টাকা তুলতে গেলে সর্বশিক্ষা মিশনের নিজস্ব প্যান কার্ড ব্যবহার করার কথা। সেটা স্টেট প্রজেক্ট অফিসারের (এসপিও) কাছে থাকার কথা। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরে দেখা গিয়েছে, জেলা প্রজেক্ট
অফিসার (ডিপিও) অন্য প্যান দেখিয়ে টাকা তুলেছেন।
অনিয়মের আরও কিছু অভিযোগ তুলেছেন অডিটরেরা। যেমন, কলকাতা জেলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হিসেব-বহির্ভূত ৬ কোটিরও বেশি টাকা পড়ে রয়েছে। বীরভূম জেলায় কাজ শেষের শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) ছাড়াই খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৫৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বাঁকুড়া জেলায় প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা খরচের হিসেব দেখানো হয়নি। জলপাইগুড়ি জেলায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা তোলা হলেও তার খরচের হিসেব দেখানো হয়নি।
অনেক ক্ষেত্রে যে কাজের খতিয়ান দেওয়া হয়েছে, তা অডিটরদের কাছে প্রমাণ করতে পারেনি সর্বশিক্ষা মিশন। যেমন কোচবিহার জেলায় ৮ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা স্কুলের বাড়ি তৈরির জন্য খরচ করা হয়েছে বলা হলেও তার কোনও পাকা হিসেব নেই। হিসেব নেই উত্তর ২৪ পরগনায় আসবাবপত্র, কম্পিউটার কেনার জন্য বরাদ্দ প্রায় ১২০ কোটি টাকার।
টাকা নয়ছয়ের এই সব অভিযোগে শিক্ষা মহল যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল সোমবার বলেন, ‘‘হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যে চরম দুর্নীতি হচ্ছে, এই অডিট রিপোর্ট থেকেই তা স্পষ্ট। কেন্দ্রের উচিত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করা।’’
কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়? তাঁর যুক্তি, টাকা সঠিক ভাবে খরচ হচ্ছে না বলেই তাঁরা অডিটের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘মিড ডে মিল বণ্টন নিয়েও প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি। যত জন পড়ুয়া তার থেকে অনেক বাড়িয়ে খাতায়-কলমে দেখানো হয়। চাল চুরি হয়। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের গোটা বিষয়টা ভাল ভাবে দেখা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy