Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাখড়ায় পুলিশ ঠুঁটো, নালিশ কোর্টে

বীরভূমের পাড়ুই আবার হাইকোর্টে। পাড়ুই থানা এলাকার বাঁধনবগ্রামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে আগে থেকেই উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। এ বার ওই থানারই মাখড়া গ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এবং ওই ঘটনার যথাযথ তদন্ত চেয়ে মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
Share: Save:

বীরভূমের পাড়ুই আবার হাইকোর্টে।

পাড়ুই থানা এলাকার বাঁধনবগ্রামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে আগে থেকেই উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। এ বার ওই থানারই মাখড়া গ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এবং ওই ঘটনার যথাযথ তদন্ত চেয়ে মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে।

শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেছেন বিপ্লবকুমার চৌধুরী নামে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটির এক বাসিন্দা। যিনি এর আগে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। বিচারপতি নিশীথা মাত্রের নির্দেশে সিআইডি ইতিমধ্যে তাপসের সেই আস্ফালনের তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ জানায়, গত ২৭ অক্টোবর পাড়ুই থানা এলাকার মাখড়া গ্রামে দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেই ঘটনায় দু’জন তৃণমূলকর্মী এবং বিজেপি-র এক জন নিহত হন। ওই সংঘর্ষের জন্য তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে দায়ী করেছে বিজেপি। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই পাড়ুইয়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে আছে। ওই ভোটের আগের দিন, ২১ জুলাই রাতে খুন হন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অনুব্রতের উস্কানিমূলক বক্তব্যের সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়েও তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে হাইকোর্টে।

মাখড়ার ঘটনা নিয়ে বিপ্লববাবু এ দিন যে-মামলা দায়ের করেছেন, তার আবেদনে বলা হয়েছে, মাখড়ার সংঘর্ষের পরে ৩০ অক্টোবর তিনি পাড়ুই থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, ওই থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সংঘর্ষে যারা জড়িত, পুলিশ অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করুক। সংঘর্ষে তৌসিফ শেখ নামে বিজেপি-র এক কর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই দলের নেতা দুধকুমার মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, তৌসিফ খুনে জড়িত রয়েছেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত। বিপ্লববাবু পুলিশের কাছে দাবি জানান, অভিযোগ সত্য হলে যথাযথ এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু হোক। হাইকোর্টে বিপ্লববাবুর অভিযোগ, থানায় তাঁর দরবারের পরে বেশ কিছু দিন কেটে গিয়েছে। পুলিশ ওই সংঘর্ষের ব্যাপারে কতটা কী তদন্ত করেছে এবং কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তাঁকে জানানো হয়নি।

সেই জন্যই বিরাটির ওই বাসিন্দা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। মামলার আবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, পাড়ুই থানা এলাকার কয়েকটি জায়গা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল। সেই অবস্থায় কী করে তিন জন খুন হলেন? সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশই বা কী ব্যবস্থা নিয়েছিল? গোটা বীরভূম জেলাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ করে আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে আবেদনে। বলা হয়েছে, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় যে-রাজনৈতিক দলের কর্মীই অভিযুক্ত হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হোক।

মাখড়ার মতো পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামের সাগর-হত্যার তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বাধীন ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তদলের রিপোর্টের পরে হাইকোর্ট সাফ বলে দিয়েছে, তারা পুলিশের উপরে আস্থা রাখতে পারছে না। সেই ঘটনায় নিহত সাগরবাবুর বৌমা শিবানী ঘোষ বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রতের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অনুব্রতের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই মহিলা। বিচারপতি হরিশ টন্ডন ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছে রাজ্য। তার শুনানি শেষ হয়েছে। তার রায় ঘোষণার আগেই হাইকোর্টে ফের মামলা হল পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামের ঘটনা নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE