Advertisement
E-Paper

হোমিওপ্যাথি থেকে ইউনানি, অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁরাই ‘এমবিবিএস’

বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এসি মিস্ত্রিকে ডাক্তার সাজিয়ে পাঠানোটা হয়তো চূড়ান্ত দুঃসাহস!

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৫
একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: রণজিৎ নন্দী

একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বর্ধমানের নার্সিংহোম থেকে ভাড়া করা আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে ডাক্তার সেজে ওঠেন এসি সারানোর মিস্ত্রি। বৃহস্পতিবার রাতে নলহাটি থেকে কলকাতায় আসার পথে চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অরিজিৎ দাস। শুধু বর্ধমান নয়, কলকাতা-সহ বিভিন্ন প্রান্তে আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে এমন ভুয়ো ডাক্তারের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এসি মিস্ত্রিকে ডাক্তার সাজিয়ে পাঠানোটা হয়তো চূড়ান্ত দুঃসাহস! কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নামে আয়ুর্বেদিক, ইউনানি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের পাঠানো আকছার চলে। রোগীর পরিজনদের পক্ষে ‘ডাক্তার’-এর পরিচয় যাচাই সম্ভব নয়। মোটা টাকা দিয়ে বহু ক্ষেত্রেই চলে এমন লোক ঠকানো।

ই এম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক বলছিলেন, ‘‘কলকাতার ভিতরেও এমন চলে। এক বার হাতেনাতে এক জনকে ধরেছিলাম। মুমূর্ষু রোগী যখন আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে পৌঁছলেন, তখন তিনি কার্যত খাবি খাচ্ছেন। অক্সিজেনও পাননি। একটা ইঞ্জেকশন রাস্তাতেই দেওয়া খুব জরুরি ছিল। কেন দেওয়া হয়নি, জানতে চাইলেও স্পষ্ট উত্তর নেই। জোর করতে জানা গেল, তিনি ইউনানি চিকিৎসক!’’

বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডে, এমনকী আইসিইউ, আইটিইউ-তেও এমবিবিএস চিকিৎসকের পরিবর্তে হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি চিকিৎসকদের ডিউটি করার অভিযোগ ইদানীং জমা পড়ছে। আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সেও ভুয়ো ডাক্তারের রমরমা সামনে আসায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের পরিষেবা বা পরিকাঠামো আমাদের দেখার কথা। অ্যাম্বুল্যান্স সরাসরি আমরা দেখি না। তবে অভিযোগ এলে তদন্ত হবে।’’

বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য কমিশন গঠিত হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এমন অনিয়ম রুখতেও কি সক্রিয় হবে তারা? কমিশন-কর্তারা জানান, এত দিন তাঁদের পরিসরে এটা ছিল না। তবে পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে অ্যাম্বুল্যান্সকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, ভাবা হবে। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবসাও চালায়। ওরা লোক ঠকিয়ে টাকা আদায় করলে তা দেখা আমাদেরও কর্তব্য।’’

কলকাতায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দেয় এমন একাধিক সংস্থার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছে, সেখানে আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে দরদাম চলে বিস্তর। উত্তর কলকাতার এমন এক সংস্থার কাছে রোগীর পরিবারের পরিচয় দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আশঙ্কাজনক রোগীকে নিয়ে বর্ধমানে যেতে কত খরচ পড়বে? প্রথমে জানানো হয়, ১৪ হাজার টাকা। এটা বেশি জানানোয় সেখান থেকে বলা হয়, ১২ হাজারে হবে। তাতেও অসুবিধা আছে জানালে এক কর্মী বলেন, ‘‘আট-ন’হাজারে করে দেওয়া যাবে। ডাক্তার একটু ‘ইয়ং’।’’ ডাক্তারের সঙ্গে খরচ কমার কী সম্পর্ক? উত্তর, ‘‘আমাদের নানা গ্রেড। সব আপনার বুঝে কাজ নেই।’’

কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সৌরভ কোলে বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে ডাক্তারকে যেতেই হবে, না টেকনিশিয়ান যাবেন, তাঁর যোগ্যতা কী হবে, তা কোথাও স্পষ্ট লেখা থাকে না। সেই সুযোগে চলছে যথেচ্ছাচার।’’ বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে খবর, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে সঙ্কটজনক রোগীকে দেখভালের মতো প্রশিক্ষিত নার্স থাকেন না।

২০১৩ সালে কেন্দ্র ‘ন্যাশনাল অ্যাম্বুল্যান্স কোড’ চালু করে। তা সর্বত্র মানা হয় না। সেখানে ডাক্তার বা টেকনিশিয়ানের থাকা কতটা আবশ্যিক, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। কলকাতার এক অ্যাম্বুল্যান্স সংস্থার প্রধান জানান, আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পাঠাতে হলে ডাক্তারদের বড়জোর ৭০০-৮০০ টাকা দেওয়া হয়। এমনিই ডাক্তারের অভাব। ওই টাকায় কোনও এমবিবিএস ডাক্তার যেতে রাজি হন না। তাই হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদিক ডাক্তারদের পাঠানো হয়। তবে সত্যি পরিচয় বললে রোগীর পরিজন রাজি হন না। তাই শুধু ‘ডাক্তার’ বলা হয়। ‘‘অশ্বত্থামা হত, ইতি গজ-র গল্প যুগে যুগে চলছে’’— হাসতে হাসতে বলেন তিনি।

Ambulance Feke Doctor Medical Negligence Private Hospital বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাম্বুল্যান্স
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy