ওয়াকফ আইন, ১৯৯৫-এর একাধিক ধারা চলতি বছরে সংশোধন করেছে ভারত সরকার। সেই আইনের কিছু বিষয় এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সংশোধনী অনুযায়ী, রাজ্যের ৮০৬৩টি ওয়াকফ এস্টেটের মোতায়াল্লিকে আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘উমিদ’ পোর্টালে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মোতায়াল্লিরা এই সংশোধনীর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘উমিদ পোর্টালে ওয়াকফ সম্পত্তির বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করার ঘোষণা হয়েছিল ৬ জুন। তার পরে প্রায় ছ’মাস কাটতে চললেও আমরা কিছু জানতে পারলাম না। ওয়াকফ বোর্ডের তরফে কিছুই জানানো হয়নি।’’ নয়া আইনের সংশোধন অনুযায়ী, ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পোর্টালে ওয়াকফ সম্পত্তির যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত না করলে সংশ্লিষ্ট মোতায়াল্লির ছ’মাসের জেল এবং এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
‘ইউনাইটেড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট এমপাওয়ারমেন্ট এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’ (ইউএমইইডি) অনুযায়ী, পোর্টালে ৫৬ পাতা জুড়ে ২৪৩টি সম্পত্তির তালিকা রয়েছে। যার মধ্যে ১৭৯টি সম্পত্তির তালিকা প্রামাণ্য নথি-সহ পোর্টালে আপলোড করতে হবে। সারা রাজ্যে ৮০৬৩টি ওয়াকফ এস্টেটের অধীনে ৮২৬০০টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে।
বেশির ভাগ ওয়াকফ এস্টেটের মোতায়াল্লি অনলাইনে তথ্য নথিভুক্ত করতে সড়গড় নন। পূর্ব বর্ধমানের একটি ওয়াকফ এস্টেটের এক মোতায়াল্লির অভিযোগ, ‘‘গ্রামে থেকে এত অল্প সময়ের মধ্যে এই বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রামাণ্য নথি-সহ পোর্টালে আপলোড করা আমাদের পক্ষে খুব মুশকিল। ওয়াকফ বোর্ডের তরফে আগে থেকে সচেতন করা হল না কেন?’’ কলকাতার একটি ওয়াকফ এস্টেটের মোতায়াল্লি সাইফুল হক বলেন, ‘‘রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের তরফে ২০০৬ সাল থেকে একাধিক বার ওয়াকফ সম্পত্তি জরিপ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সব সমীক্ষা হয়েছে নাম-কা-ওয়াস্তে। কোনও গেজেট বিজ্ঞপ্তি হয়নি।’’ টিপু সুলতানের প্রপ্রৌত্র শাহিদ আলম ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সহ-মোতায়াল্লি। তাঁর কথায়, ‘‘৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এই পাহাড়প্রমাণ কাজ করা অসম্ভব। সময়সীমা বাড়াতে ওয়াকফ বোর্ড তথা রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করুক।’’
যদিও ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘‘গত ৬ জুন পোর্টাল চালুর কথা ঘোষণা হলেও রাজ্য সরকার এবং ওয়াকফ বোর্ড সেই ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট পোর্টাল চালুর বিষয়টি খারিজ করে দেওয়ার পরে আমরা মোতায়াল্লিদের সেই বিষয়ে সচেতন করতে প্রচার শুরু করি। পুরো বিষয়টি প্রত্যেক জেলার সংখ্যালঘু দফতরে জানানো হয়েছে। বোর্ডেরও নিজস্ব হেল্পডেস্ক চালু হয়েছে।’’ চেয়ারম্যানের দাবি, ‘‘রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ায় আমরা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তো সম্পত্তির তথ্য পোর্টালে আপলোড করার জন্য প্রচার শুরু করতে পারি না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)