Advertisement
E-Paper

সরকারি চালে জোটে চিড়, ভাঙল বয়কট

বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকেই এ বার বিরোধীরা জোটবদ্ধ। আর সরকার পক্ষের লাগাতার চেষ্টা জারি রয়েছে জোটে ফাটল ধরানোর। শেষ পর্যন্ত বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠক বয়কট করার প্রশ্নে জোটে চিড় ধরাতে সফল হল শাসক পক্ষ! বলতে গেলে, জোট রক্ষা করতে আক্ষরিক অর্থেই তারা দৌড় করিয়ে দিল বিরোধী দলনেতাকে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৭
বিধানসভা থেকে সুজন চক্রবর্তী আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। জোট রাখতে প্রায় দৌড়ে গিয়েই তাঁকে ধরে ফেললেন আব্দুল মান্নান। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মিডিয়া সেন্টারের বাইরে। — নিজস্ব চিত্র।

বিধানসভা থেকে সুজন চক্রবর্তী আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। জোট রাখতে প্রায় দৌড়ে গিয়েই তাঁকে ধরে ফেললেন আব্দুল মান্নান। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মিডিয়া সেন্টারের বাইরে। — নিজস্ব চিত্র।

বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকেই এ বার বিরোধীরা জোটবদ্ধ। আর সরকার পক্ষের লাগাতার চেষ্টা জারি রয়েছে জোটে ফাটল ধরানোর। শেষ পর্যন্ত বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠক বয়কট করার প্রশ্নে জোটে চিড় ধরাতে সফল হল শাসক পক্ষ! বলতে গেলে, জোট রক্ষা করতে আক্ষরিক অর্থেই তারা দৌড় করিয়ে দিল বিরোধী দলনেতাকে!

সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিবাদে বি এ কমিটির বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন কংগ্রেস ও বাম পরিষদীয় নেতৃত্ব। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে বি এ কমিটির প্রথম বৈঠকটাই বয়কট হল না সরকার পক্ষের চালে! স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বিরোধী দলনেতা মান্নান বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হলেন। আর প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ না পেয়ে সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বাম বিধায়কেরা সভা থেকে ওয়াক আউট করলেন। সরকারের ফাঁদে তাঁরা পা দিয়ে ফেলেছেন বুঝতে পরে মান্নান রীতিমতো দৌড়ে গেলেন মিডিয়া সেন্টারে সুজনবাবুর সাংবাদিক সম্মেলনে। সেখানে গিয়ে জানালেন, বামেদের মতো প্রতিবাদ আছে তাঁদেরও। তার পরে দু’পক্ষ বি এ কমিটিতে গেলেন। তবে যে সব দাবিতে বয়কট হয়েছিল, তার কোনওটাই সেখানে মেনে নেওয়ার আশ্বাস মিলল না। দিনের শেষে হাসি চওড়া হল পার্থবাবুদেরই!

বিধানসভায় বৃহস্পতিবার প্রশ্নোত্তর-পর্বের পরে স্পিকার বিমানবাবু ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু বিরোধী দলনেতা ও বাম পরিষদীয় নেতাকে অনুরোধ করেন বি এ কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য। কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে স্পিকার বলেন, বি এ কমিটির আলোচনাতেই তিনি বিরোধীদের কথা শুনতে চান। এই বিষয়ে স্পিকারকে লেখা চিঠি বিরোধীরা যে ভাবে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছেন, তা নিয়ে অক্ষেপ করে বিমানবাবু আর্জি জানান ‘বিধানসভার পবিত্রতা’ রক্ষার জন্য। স্পিকারের অনুরোধকে মর্যাদা দিতেই মান্নান জানিয়ে দেন, তাঁরা বৈঠকে যাবেন। সুজনবাবু কিছু বলার জন্য পয়েন্ট অব অর্ডার চাইছিলেন। কিন্তু স্পিকার অনুমতি দেননি। মান্নান স্পিকারের আসনের কাছে উঠে গিয়ে অনুরোধ করার পরেও কাজ হয়নি। বলার সুযোগ পাচ্ছেন না দেখে সুজনবাবুরা ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যান। তার পরেই মান্নান বুঝতে পারেন, এক যাত্রায় পৃথক ফল হয়ে যাচ্ছে! অতঃপর ছুটে গিয়ে জোটের কাঁটা তোলার চেষ্টা করেন তিনি।

পুর-আইনের উপরে একটি সংশোধনী এবং শিক্ষা সংক্রান্ত দু’টি সংশোধনী মিলে মোট তিনটি বিল বিধানসভায় আসবে আজ, শুক্রবার। সেই ব্যাপারেই বি এ কমিটিতে এ দিন আলোচনা হয়েছে। এক গুচ্ছ দফতরের বাজেট গিলোটিনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে কিন্তু সরকার সরে আসেনি। এমনকী, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে প্রস্তাব এনে আলোচনায় সম্মতিও মেলেনি। বরং, পরিষদীয় মন্ত্রী সভার মধ্যেই বিরোধীদের বলে দিয়েছেন, ‘‘রমজান মাস চলছে বলে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে। আর এই দফায় সরকার এসেছে মাত্র এক মাস। তার মধ্যেই বেসরকারি প্রস্তাব আনার জন্য আপনারা এত অধৈর্য হয়ে পড়লে পরে কী করবেন?’’ যার ফলে বিরোধীদের দাবি পূরণ হয়নি। উল্টে বয়কটের পথ থেকে তাদের সরিয়ে আনতে পেরেছে সরকার পক্ষ।

তাঁরা যে ভেবেচিন্তে পা ফেলতে পারেননি, পরে মালুম হয়েছে মান্নান-সুজনদের। মান্নান তাই বলেছেন, ‘‘আমরা একজোট হয়েই কাজ করতে চাই। আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।’’ একই সুর সুজনবাবুরও। তিনিও কবুল করেছেন, ‘‘আমাদের দিক থেকে আরও সতর্কতা দরকার। তবে সভার মধ্যে আমাদের বলার অধিকার না দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।’’ বিরোধীরা দেরিতে বুঝলেও পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, অধিবেশনের শেষ দিন ৪ জুলাই আরও বিল আনার সম্ভাবনা নিয়ে আজই ফের বি এ কমিটি বসতে পারে। এবং সেখানেও হাজির থাকতে হবে বিরোধীদের! কারণ, বয়কট তো ভেঙেই গিয়েছে!

CPM Left alliance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy