Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মাথা ফাটিয়ে নম্বর বাড়ানোর ‘আবদার’

পরীক্ষার খাতায় একেকটি বিষয়ে অনেকেরই প্রাপ্ত নম্বরের চেহারাটা এ রকম। কিন্তু আবদার, পাস করিয়ে দিতে হবে সক্কলকে। এই নিয়ে দিন সাতেক ধরে স্কুলগেটের সামনে ধর্নায় বসেছিল একাদশ শ্রেণির কিছু পড়ুয়া আর তাদের অভিভাবকেরা।

তাপস মণ্ডল (অশিক্ষক কর্মী)

তাপস মণ্ডল (অশিক্ষক কর্মী)

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:০২
Share: Save:

৫, ১০, ১২...।

পরীক্ষার খাতায় একেকটি বিষয়ে অনেকেরই প্রাপ্ত নম্বরের চেহারাটা এ রকম। কিন্তু আবদার, পাস করিয়ে দিতে হবে সক্কলকে।

এই নিয়ে দিন সাতেক ধরে স্কুলগেটের সামনে ধর্নায় বসেছিল একাদশ শ্রেণির কিছু পড়ুয়া আর তাদের অভিভাবকেরা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তর সয়নি বিক্ষোভকারীদের। সোমবার বিক্ষোভ স্কুলগেট পেরিয়ে পৌঁছে যায় শিক্ষকদের ঘরের সামনে। অভিযোগ, সেখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে তর্জন-গর্জন শুরু হয়। ঘরের সামনে বারান্দায় এক শিক্ষককে মারধরের চেষ্টা চলে। গোলমাল ঠেকাতে গিয়ে মাথা ফেটেছে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর।

একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পাস করানোর দাবিতে এই কাণ্ড ঘটেছে ডায়মন্ড হারবারের সরিষা হাইস্কুলে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছে। সন্ধে পর্যন্ত অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়য়নি থানায়। পুলিশের বক্তব্য, অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার খবর এখনও কানে পৌঁছয়নি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুল দফতরের আধিকারিক বাদল পাত্রের কাছেও। খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার এ দিন ছিলেন না স্কুলে। তাঁকে একাধিক বার টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বেজে গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, মাঝে মধ্যেই স্কুলে আসেন না সুজিতবাবু। এ জন্য স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক তিমির মণ্ডল বলেন, ‘‘অনেক পড়ুয়া (মূলত বিজ্ঞান বিভাগের) একেকটি বিষয়ে খুবই সামান্য নম্বর পেয়েছে। তাদের কী ভাবে পাস করানো যাবে!’’ তবে বিষয়টি নিয়ে কাল, বুধবার সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তারপরে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান শিক্ষকই, মন্তব্য তিমিরবাবুর। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অনেকে আতঙ্কে ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন। ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আঠারোশো। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন ৩৪ জন। এ বার একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়েছিল ২৬৩ জন। অনুত্তীর্ণের সংখ্যা ৬২ জন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিজ্ঞান বিভাগের।

বিক্ষোভরত অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের অনেকেরই অভিযোগ, স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয় না। পরিকাঠামোর সমস্যা আছে। সিলেবাসও শেষ হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্নপত্রে সে সব বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ফলে সমস্যায় প়়ড়তে হয় অনেককেই। পঠনপাঠন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা উদাসীন বলেও অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার দায়ভার এড়াতে পারেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভকারীদের আরও দাবি, ধর্না চলাকালীন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের একাংশই চড়াও হন। প্রতিরোধ করতে গেলে হাতাহাতি বাধে। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল না বলেও তাঁদের দাবি।

স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাথায় ছ’টি সেলাই পড়েছে অশিক্ষক কর্মী তাপস মণ্ডলের। তিনি বলেন, ‘‘ওরা প্রচণ্ড ঝামেলা করছিল। দেবাশিস চৌধুরী নামে এক শিক্ষককে সামনে পেয়ে তাঁকে মারধর করার চেষ্টা করে। ঠেকাতে গেলে লাঠির ঘা পড়ে।’’ দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘নিয়মিত ক্লাস হয় না, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সং‌খ্যা ছাত্রছাত্রীদের অনুপাতে যথেষ্ট নয়। তবু তারই মধ্যে সাধ্যমতো পড়ানোর চেষ্টা করা হয়। যে নম্বর ওরা কয়েক জন পেয়েছে, তাতে কোনও ভাবেই নতুন ক্লাসে তোলা উচিত নয়।’’ একই সঙ্গে তাঁর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষই নেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students conflict Diamond Harbour High School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE